পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*; 竇 És আশমানী কহিল,—“বেশভূষা দেখিয়া আমিও ভাবিতেছিলাম, আজ কি একটা কাণ্ড ।" **. বিমলা কহিলেন, “আমি আজি কোন প্রয়োজনে অধিক দূরে ষাইব । এ রাত্রে একাকিনী যাইতে পারিব না ; তুমি ছাড়া আর কাহাকেও বিশ্বাস করিয়! সঙ্গে লইতে পারিব না ; তোমাকে আমার সঙ্গে যাইতে হইবে ” আশমানী জিজ্ঞাসা করিল,—“কোথ। যাবে ? বিমলা কহিলেন, "আশমানী, তুমি ত সে কালে এত কথা জিজ্ঞাসা করিতে না ?" আশমানী কিছু অপ্রতিভ হইয়া কহিল,-“তবে তুমি একটু অপেক্ষ কর, আমি কতক গুলা কাজ সারিয়া আসি ” বিমলা কহিলেন,—“আর একটা কথ। অাছে, মনে কর, যদি তোমার সঙ্গে আজ সে কালের কোন লোকের দেখা হয়, তবে কি তোমাকে সে চিনিতে পরিবে ?” আশমানী বিস্মিত হইয়া কহিল,—“সে কি ?” বিমলা কহিলেন,- “মনে কর, যদি কুমার জগৎসিংহের সহিত দেখা হয় ?” আশমানী অনেকক্ষণ নীরব থাকিয়া গদগদম্বরে কহিল,—“এমন দিন কি হবে ?” বিমল কহিলেন,—“হইতেও পারে ” আশমানী কহিল,—“কুমার চিনিতে পারবেন ৰৈ কি ?” বিমলা কহিলেন,-"তবে তোমার যাওয়া হইবে না, আর কাহাকে লইয়া যাই, একাও ত যাইতে পারি না ।" আশমানী কহিল,—“কুমার দেখিব মনে বড়ই সাধ হইতেছে ” বিমলা কহিলেন,—“মনের সাধ মনে থাক্‌ ; এখন আমি কি করি ?” বিমল চিস্তা করিতে লাগিলেন । আশমানী অকস্মাৎ মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে লাগিল । বিমলা কহিলেন,—“মর! আপনাআপনি হেসে মরিস কেন ?" আশমানী কহিল,-"মনে মনে ভাবিতেছিলাম, বলি আমার সোণার চাদ দিগগজকে তোমার সঙ্গে পাঠাইলে কি হয় ?” বিমলা হাসিয়া উল্লাসে কহিলেন,-“সেই কথাই ভাল, রসিকরাজকেই সঙ্গে লইব ।” আশমানী বিস্মিত হইয়া কহিল,—“সে কি, আমি ষে তামাসা করিতেছিলাম * বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রস্থাবলী বিমলা কহিলেন;–“ভামাসা না, বোক। বামুনকে আমার অবিশ্বাস নাই । অন্ধের দিনরাত্রি নাই, ও ত কিছুই পুঝিতে পারিবে না ; সুতরাং ওকে অবিশ্বাস নাই । তবে বামুন যেতে চাবে না ।" আশনানী হাসিয়া কহিল,-"পে ভার আমার ; আমি তাহাকে সঙ্গে করিয়া নিয়া আসিতেছি । তুমি ফটকের সম্মুখে একটু অপেক্ষা করিও ” এই বলিয়া আশমানী হাসিক্তে হাসিতে দুর্গমধ্যস্থ একটি ক্ষুদ্র কুটারাভিমুখে চলিল । অভিরাম স্বামীর শিষ্য গজপতি বিদ্যাদিগগজ ইতিপূৰ্ব্বে’ পাঠক মহাশষের নিকট একবার পরিচিত হুইয়াছেন । যে হেতুতে বিমলা তাহার রসিকরাজ নাম রাখিয়াছিলেন, তাহু!ও পাঠক মহাশয় অবগত অছেন । সেই মহাপুরুষ এই কুটীরের অধিকারী । দিগগজ মহাশয় দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে পাচ হাত শুষ্টবেন, প্রস্থে বড় জোড় আধ হাত তিন আঙ্গুল । পা দুইখানি কঁকাল হইতে মটা পর্য স্তু মপিলে চোঁদপোয়। চারি হাত হইবে ; প্রস্থে রল কাঠের পরিমাণ । বর্ণ দোয়াখের কালি ; বোধ হয়, অগ্নি কাষ্ঠভ্রমে প৷ দুখানি ভক্ষণ করিতে বসিয়াছিলেন, কিছুমাত্র রস না পী: য়া অৰ্দ্ধেক অঙ্গার করিয়! ফেলিয়া দিয়াছেন । দিগগজ মহাশয় অধিক দৈর্ঘ্যবশতঃ একটু একটু কুঁজে ; অবয়বের মধ্যে নাসিক প্রবল, শরীরের মাংসা ভাব সেইখানেই সংশোধন হইয়াছে । মাথাটি বেহারকামান, কামান-চুলগুলি যাহা আছে, তাহ ছোট ছোট, আবার হাত দিলে স্থচ ফুটে । আর্কফলার ঘটাটা জাকালরকম ; গজপতি বিদ্যাদিগগজ উপাধি সাধ করিয়া পান নাই ! বুদ্ধিখানা অতি তীক্ষু বাল্যকালে চতুষ্পাঠীতে ব্যাকরণ আরম্ভ করিয়াছিলেন, সাড়ে সাত মাসে সহণের্ঘ স্বত্রটি ব্যাখ্যা শুদ্ধ মুখস্থ হয় । ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের অনুগ্রহে আt # দশস্থনের গোলে-হরিবোলে পঞ্চদশ বৎসর পাঠ করিয়া, শব্দকাণ্ড শেষ করিলেন । পরে অন্য কাণ্ড আরম্ভ করিবার পূৰ্ব্বে অধ্যাপক ভাবিলেন, “দেখি, দেখি, কাণ্ডখানাই কি ?” শিষ্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বল দেখি বাপু, রাম শব্দের উত্তর অম্‌ করিলে কি হয় ?” ছাত্র অনেক ভাবিয়া উত্তর করিলেন,—“রামকান্ত ।” অধ্যাপক কহিলেন,— “বাপু, তোমার বিদ্যা হইয়াছে ; তুমি এক্ষণে গৃহে যাও, তোমার এখানকার পাঠ সাঙ্গ হইয়াছে ! আমার আর বিদ্যা নাই যে, তোমাকে দান করিব।” গজপতি অতি সাহঙ্কার-চিত্ত হইয়া কহিলেন,— “আমার এক নিবেদন—আমার উপাধি ?”