পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 রম । যদি তা না কর দিদি, তবে তোমায় নিশ্চিত বলিতেছি, আমি জলে ডুবির মরিব কি গলায় দড়ি দিয়৷ মরিব । আমি ত রাজার মহিষী--- এমন কাঙ্গাল গরিব ভিখারীর মেয়ে কে আছে যে, অপবাদ হইলে তার প্রাণ রাখিতে চায় ? নন্দ । মরিতে হইবে না, দিদি ! কিন্তু একটা খুব সাহসের কাজ করিতে পারিস ? বোধ হয়, ত৷ s'লে কাহারও মনে আর কোন সন্দেহ থাকিবে না ! রম । এমন কাজ নাই মে, এর জঙ্গ আমি করিতে পারি ন! কি করিতে হইবে ? নন্দ । তুমি যে রকম করিয়৷ আমার কাছে সকল কথা ভাঙ্গিয়া চুরির বলিলে, . এই রকম করিয়৷ তুমি ধার সাক্ষাতে ভাঙ্গিয়া চুরিয়া বলিবে, সেই তোমার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিবে, ইহা অামার নিশ্চিত বিবেচনা হয় । যদি রাজধানীর লোক সকলে তোমার মুখে এ কথ। শুনে, তবে আর এ কলঙ্ক থাকে না ! রম । তা কি প্রকারে হইবে ? নন্দ । আমি মহারাজকে বলিয়। দরবার করাইব । তিনি ঘোষণা দিয়া সমস্ত নগরবাসীকে সেই দরবারে উপস্থিত করিবেন ; সেখানে গঙ্গারামের সাক্ষাৎকারে, সমস্ত নগরবাসীর সাক্ষাৎকারে তুমি এই কথাগুলি বলিবে । আমরা রাজমহিষী, স্থৰ্য) ও আমাদিগকে দেখিতে পান না। এই সমস্ত নগরবাসীর সন্মুখে বাহির হইয়৷ মুক্তকণ্ঠে তুমি এই সকল কথা কি বলিতে পরিবে ? পার ত সব কলঙ্ক হইতে আমরা মুক্ত হই । রম তখন সিংহীর মত গর্জিয়া উঠিয়; বলিল, “তুমি সমস্ত নগরবাসা কি বলিsেছ দিদি, সমস্ত জগতের লোক জমা কর, আমি জগতের লোকের সম্মুখে মুক্তকণ্ঠে এ কথা বলিব ” নন্দ। । পারিবি ? রম। পারিব—নহিলে মরিব । নন্দ । আচ্ছা, তবে তামি গিয়ু মহারাজকে বলিয়া দরবারের বন্দোবস্ত করাই । তুষ্ট আর র্কাদিস ন} ] নন্দ উঠিয়া গেল । রমাও শয্যাত্যাগ করিয়া চোখের জল মুছিয়া পুত্রকে কোলে লইয়। মুখচুম্বন করিল। এতক্ষণ তাহাও করে নাই । নন্দ রাজাকে সংবাদ দিয়৷ অন্তঃপুরে আনাইল । যে কুরব উঠিয়াছে, যাহা সকলেই বলিতেছে, তাহ রাজাকে শুনাইল । তার পর রমার সঙ্গে নন্দার ষে কথাবাৰ্ত্ত হইয়াছিল, তাহা সকলই অবিকল তাহাকে ৰঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী বলিল। তার পর বলিল, “আমরা দুই জনে গলায় কাপড় দিয়া তোমার পায়ে লুঠাইয়া ( বসিবার সময় নন্দ গলায় কাপড় দিয়া জাতু পাতিয়া বসিয়া, দুই হাতে দুই পা চাপিয়া ধরিল ) বলিতেছি যে, এখন তুমি আমাদের মান রাখ, এ কলঙ্ক হইতে উদ্ধার কর, নহিলে আমরা দুই জনেই আত্মহত্যা করিয়া মরিব ।” সীতারাম বড় বিষঃভাবে—কলঙ্কের জন্যও বটে, মন্দার প্রস্তাবের জন্যও বটে—বলিলেন, “রাজার মহিষী --অামি কি প্রকারে দরবারে বাহির করিব ? কি প্রকারে আপনার মহিষীকে সমান্ত| কুলটার দ্যায় বিচারালয়ে খাড়া করিয়া দিল ?” নন্দ । তুমি যেমন বুঝিবে, আমর। কিন্তু তেমন বুঝিব না ; কিন্তু সে বেশী লজ্জা, ন রাজমহিষীর কুলট অপবাদ বেশী লজ্জা ? সীতা । এইরূপ মিথ্য অপবাদ রাজার ঘরে, সীতা হইতে চলিয়া ত্যাসিতেছে । প্রথমতঃ কাজ করিতে হুইলে এত কাণ্ড না করিয়া সীতার দ্যায় রমাকে আমার ত্যাগ করাই শ্রেয়ঃ । তাহ হইলে তার কোন কথা থাকে না । নন্দ ! মহারাজ ! নিরপরাধিনীকে ত্যাগ করিবে, তবু তার বিচার করিবে না । এষ্ট তোমার রাজধৰ্ম্ম ? রামচন্দ্র করিয়াছিলেন বলিয়া কি তুমিও করিবে ? যিনি পূর্ণরহ্ম, তার তার ত্যাগই কি, গ্রহণই ব| কি ? তোমার কি তা সাজে মহারাজ ? সীতা । এই সমস্ত প্রজা, শত্ৰু-মিত্র, ইতর-ভদ্র লোকের সাক্ষাতে আপনার মহিষীকে কুলটার ন্যায় খাড়া করিয়া দিতে আমার বুক কি ভাঙ্গিয়া যাইবে ন ? আমি ত পাষাণ মহি ? নন্দ । মহারাজ- যখন পঞ্চাশ হাজার লোকের সাম্নে শ্ৰী গাছের ডালে চড়িয়া নাচিয়াছিল, তখন কি তোমার বুক দশ হাত হইয়াছিল ? সীতারাম নন্দার প্রতি ক্রুদ্ধদৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন । বলিলেন, “তা হয়েছিল, নন্দ ! আবার তেমন হইল না, সেই দুঃখই আমার বেশী ।” ইটটি মারিয়| পাটখেল খাইয়l, নন্দ ষোড়হাতে ক্ষমা প্রার্থনা করিল । যোড় হাত করিয়া নন্দ জিতিয়া গেল । সীতারাম শেষে দরবারে সম্মত হইলেন । বুঝিলেন, ইহা না করিলে রমাকে ত্যাগ করিতে হয় । অথচ রম নিরপরাধিনী । কাজেই দরবার ভিন্ন আর কর্তব্য নাই । বিষণ্ণভাবে রাজা, চন্দ্রচূড়ের নিকটে আসিয়া দর বারের কৰ্ত্তব্যতা নিবেদিত হইলেন । ব্রাহ্মণ ঠাকুরের অাব রু-পর্দার উপর ততটা শ্রদ্ধা হইল না । তিনি