পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8& বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করিলে কেন ? তুমি রাজদণ্ডে দণ্ডিত হইবে ।” গঙ্গারাম বিনীতভাবে বলিল, “কোন শক্রতে আপনার কাছে আমার মিথ্যাপবাদ দিয়াছে । আমি কোন বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করি নাই । মহারাজ স্বয়ং আমার বিচার করিতেছেন—ভরস। করি, ধৰ্ম্মশাস্ত্রসন্মত প্রমাণ না পাইলে আমার কোন দণ্ড করিবেন না ।” রাজা । তাহাই হইবে । ধৰ্ম্মশাস্ত্রসন্মত যে প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে, তাহ! শুন, আর যথাসাধ্য উত্তর দাও । এই বলিয়া রাজা চন্দ্রচূড়কে অনুমতি করিলেন যে, “আপনি যাহা জানেন, তাগ ব্যক্ত করুন।” তখন চন্দ্রচূড় যাহা জানিতেন, তাহা সবিস্তারে সভামধ্যে বিবৃত করিলেন । তাহাতে সভাস্থ সকলেরই হৃদয়ঙ্গম হইল যে, যে দিন মুসলমান দুর্গ আক্রমণ করিবার জঙ্গ নদী পার হইতেছিল, সে দিন চন্দ্রচূড়ের পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও গঙ্গারাম দুৰ্গরক্ষার কোন চেষ্টা করেন নাই । চন্দ্রচূড়ের কথা সমাপ্ত হইলে রাজা গঙ্গারামকে আজ্ঞা করিলেন, “নরাধম ! ইহার কি উত্তর দাও ?” গঙ্গারাম মুক্তকরে বলিল, “ইনি বাহ্মণ পণ্ডিত, ইনি যুদ্ধের কি জানেন ? মুসলমান এ পারে আসেও নাই, দুর্গ আক্রমণও করে নাই । যদি তাহ করিত, আর আমি তাহাদের না হঠাই তাম, তবে ঠাকুর মহাশয় যাহা বলিয়াছেন, তাহা শিরোধার্য হষ্টত । মহারাজ ! দুর্গের মধ্যে আমিও বাস করি । দুর্গের বিনাশে আমার কি লাভ ?” রাজা । কি লাভ, তাঙ্গ আর এক জনের নিকট শুন । - এই বলিয়। রাজী চাদশাহ ফকীরকে আজ্ঞা করিলেন, “আপনি যাহা জানেন, তাহ বলুন " চাদশাহ তখন দুর্গ আক্রমণের পূর্বরাত্রিতে তোরাব, খার নিকট গঙ্গারামের গমনবৃত্তান্ত যাহা জানিতেন, তাহ বলিলেন । রাজা তখন গঙ্গারামকে জাজ্ঞা করিলেন, “ইহার কি উত্তর দাও ?" গঙ্গারাম বলিল, “আমি সে রাত্রে তোরাব, গার নিকট, গিয়াছিলাম বটে । বিশ্বাসঘাতক সাজিয়া কুপথে আনিয়া, তাহাকে গড়ের নীচে অনিয়া, টিপিয়া মারিব—আমার এই অভিপ্রায় ছিল " রাজা । সে জন্ত তোরাব, খার কাছে কিছু পুরস্কার প্রার্থনা করিয়াছিলে ? গঙ্গারাম । নহিলে তাহার বিশ্বাস জন্মিবে কেন ? বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী রাজা । কি পুরস্কার চাহিয়াছিলে ? গঙ্গারাম । অৰ্দ্ধেক রাজ্য । রাজা । তার কিছু ? গঙ্গা । আর কিছু না । তখন রাজা চাদশাহ ফকীরকে জিজ্ঞাস করিলেন, “আপনি সে কথা কিছু জানেন ?” চাদশাহ । জানি । রাজ| কি প্রকারে জানিলেন ? চাদ । আমি মুসলমান ফকীর, তোরাব খার কাছে যাতায়াত করিতাম । তিনিও আমাকে বিশেষ আদর করিতেন । আমি কখন তাহার কথা মহারাজের কাছে বলিতাম না, অথব| মহারাজের কথা তাহার কাছে বলিতাম না । এ জন্য কোন পক্ষ বলিয়া গণ্য নহি । এখন তিনি গত হইয়াছেন, এখন ভিন্ন কথা ; যে দিন তিনি মহারাজের হাতে ফতে হইয়। মধুমতীর তীর হইতে প্রস্থান করেন, সেই দিন তাহার সঙ্গে পথিমধ্যে আমার দেখ হইয়াছিল । তখন গঙ্গারামের বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধে তাহার সঙ্গে আমার কথাবাৰ্ত্ত হইয়াছিল । গঙ্গারাম তাঙ্গকে প্রতারণা করিয়াছে, এই বিবেচনায় তিনি আপন হইতেই সে সকল কথা আমাকে বলিয়াছিলেন । গঙ্গারাম অৰ্দ্ধেক রাজ্য পুরস্কারস্বরূপ চাহিয়াছিল বটে, কিন্তু আর ও কিছু চাহিয়াছিল। তবে, সে কথা হুজুরে নিবেদন করিতে বড় ভয় পাই—অভয় ভিন্ন বলিতে পারি ন! } রাজ। নিৰ্ভয়ে বলুন । চাদ । দ্বিতীয় পুরস্কার মহারাজের কনিষ্ঠ মহিষী ৷ দর্শকমণ্ডলী সমুদ্রবৎ গৰ্জ্জিয়! উঠিল—গঙ্গারামকে নানাবিপ গালি পাড়িতে লাগিল । শান্তিরক্ষকের শান্তিরক্ষা করিল । গঙ্গারাম বলিল, “মহারাজ ! এ অতি অসম্ভব কথা, আমার নিজের পরিবার অাছে —মহারাজের অবিদি দ্য নাই । তার আমি নগররক্ষক । স্ত্রীলোকে আমার রুচি থাকিলে আমার তৃষ্পাপ্য বড় অল্প । আমি মহারাজের কনিষ্ঠা মহিষীকে কখনও দেখি নাই—কি জন্য তাহাকে কামনা করিব ?” রাজা । তবে তুমি কুকুরের মত রাত্রে লুকাইয়া আমার অন্তঃপুরে প্রবেশ করিতে কেন ? গঙ্গারাম । কখনও না । তখন সেই পাড়ে ঠাকুর পাহারাওয়ালাকে তলব হইল । পাড়ে ঠাকুর দাড়ী নাড়িয়া বলিলেন যে, “গঙ্গারাম প্রত্যহ গভীর রাত্রিতে মুরলার সঙ্গে তাহার ভাই পরিচয়ে অন্তঃপুরে যাতায়াত করিত ”