পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুর্গেশনন্দিনী অধ্যাপক কহিলেন,—“বাপু, তুমি যে বিদ্যা উপার্জন করিয়াছ, তোমার নূতন উপাধি আবশ্বক ৷ তুমি ‘বিদ্যাদিগগজ উপাধি গ্রহণ কর।” দিগগজ হৃষ্টচিত্তে গুরুপদে প্রণাম করিয়া গৃহে চলিলেন । গৃহে আসিয়া দিগগজ-পণ্ডিত মনে মনে ভাবিলেন, “ব্যাকরণাদিতে ত কৃতবিদ্য হুইলাম। এক্ষণে কিঞ্চিৎ স্মৃতি পাঠ করা আবখ্যক । শুনিয়াছি, অভিরাম স্বামী বড় পণ্ডিত ; তিনি ব্যতীত আমাকে শিক্ষা দেয়, এমন লোক অার নাই ; অতএব র্তাহার নিকটে গিয়া কিছু স্মৃর্তি শিক্ষা করা উচিত ।” এই স্থির করিয়া দিগগজ দুর্গমধ্যে অধিষ্ঠান করিলেন । অভিরাম স্বামী অনেককে শিক্ষা দিতেন, কাহারও প্রতি বিপ্লক্তি ছিল না । দিগগজ কিছু শিখুক বা না শিখুক, অভিরাম স্বামী তাছাকে পাঠ দিতেন । গজপতি ঠাকুর কেবল বৈয়াকরণ আর স্মাওঁ নছেন ; একটু আলঙ্কারিক, একটু একটু রসিক, ঘৃতভাণ্ড তাহার পরিচয়ের স্থল ! তাহার রসিকতার আড়ম্বরটা কিছু আশমানীর প্রতি গুরুতর হইত । তাহার কিছু গৃঢ় তাৎপৰ্য্যও ছিল । গজপতি মনে করিতেন, “আমার তুল্য ব্যক্তির ভারতে কেবল লীলা করিতে আসা ; এই আমার শ্রীবৃন্দাবন ; আশমানী আমার রাধিক " অাশমানাও রসিকা, মদনমোহন পাইয়ু বানর পোষার সাধ মিটাইয়। লইত । বিমলাও সন্ধান পাইয়। কখনও বানর নাচাইতে যাইতেন । দিগগজ মনে করিতেল, “এই আমার চন্দ্রাবলী জুটিয়াছে । না হবে কেন ? যে ঘৃতভাও বাড়িয়াছি ; ভাগ্যে বিমলা জালে না, ওটি আমার শোনা কথা ।” দ্বাদশ পরিচ্ছেদ আশমানীর অভিসার দিগগজ গজপতির মনোমোহিনী আশমানী কিরূপ রূপবতী, জানিতে পাঠকমহাশয়ের কৌতুহল জন্মিয়াছে সন্দেহ নাই । অতএব তাহার সাধ পুরাইব । কিন্তু স্ত্রীলোকের রূপবর্ণনবিষয়ে গ্রন্থকারগণ ষে পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া থাকেন, আমার সদৃশ অকিঞ্চন জনের তৎপদ্ধতি বহিভুত হওয়া অতি ধৃষ্টতার বিষয় ; অতএব প্রথমে মঙ্গলাচরণ করা কর্তব্য । సీ হে বাগেদবি ! হে কমলাসনে । শরদিন্দুনিভাননে ! অমল-কমল-দল-নিন্দিত চরণ-ভক্তজন বৎসলে ! আমাকে সেই চরণ-কমলের ছায়। দান কর ; আমি আশমানীর রূপ-বর্ণন কঃিব - হে অরবিন্দাননসুন্দরী-কুল-গৰ্ব্ব-খৰ্ব্বকারিণি ! হে বিশাল শাল দীর্ঘসমাস-পটল-হষ্টি-কারিণি ! একবার পদনখের এক পাশ্বে স্থান দাও, আমি রূপ-বর্ণন করিব । সমাসপটল, সন্ধি-বেগুন, উপমার্কাচকলার চড়চড়ি রাধিয়া এই খিচুড়ি তোমায় ভোগ দিব । চে পণ্ডিতকুলেপ্সিতপয়ঃপ্রস্রাবণি ! হে মুর্থ-জন-প্রতি কচিৎ কৃপাকারিণি ! হে অঙ্গুলি ক ধুয়ন বিষম বিকার-সমুৎপাদিনি ! ছে বটতলা-বিদ্যা-প্রদীপ-ভৈল-প্রদায়িনি ! আমার বুদ্ধির প্রদীপ একবার উজ্জ্বল করিয়া দিয়া যাও । মা ! তোমার তুই রূপ ; ষে রূপে তুমি কালিদাসকে বরপ্রদা হইয়াছিলে, যে প্রকৃতির প্রভাবে রঘুবংশ, কুমারসম্ভব, মেঘদূত, শকুন্তল জন্মিয়াছিল, যে প্রকৃতির ধ্যান করিয়া বাল্মীকি রামায়ণ, ভবভূতি উত্তরচরিত, ভারবি কিরাভার্জুনীয় রচনা করিয়াছিলেন, সে রূপে আমার স্বন্ধে আরোহণ করিয়া পীড়া জন্মাইও না ; যে মূৰ্ত্তি ভাবিয়া শ্ৰীহৰ্ষ নৈষধ লিখিয়াছিলেন, ষে প্রকৃতিপ্রসাদে ভারতচন্দ্র বিদ্যার অপূৰ্ব্ব রূপবর্ণন করিয়া, বঙ্গদেশের মনোমোহন করিয়াছেন, যাহার প্রসাদে দাশরথি রায়ের জন্ম, যে মূৰ্ত্তিতে আজও বটতল আলো করিতেছে, সে মূৰ্ত্তিতে একবার আমার স্বন্ধে আবিভূত হও, আমি আশমানীর রূপবর্ণন করি । আশমানীর বেণীর শোভা ফণিনীর স্তায় ; ফণিনী সেই তাপে মনে ভাবিণ, যদি বেণীর কাছে পরাস্ত হইলাম, শুবে আর এ দেহ লোকের কাছে লইয়া বেড়াইবার প্রয়োজনটা কি ? আমি গৰ্ত্তে যাই । এই ভাবিয়া সাপ গর্তের ভিতর গেলেন । ব্রহ্মা দেখিলেন প্রমাদ ; সাপ গৰ্ত্তে গেলেন, মানুষ জংশন করে কে ? এষ্ট ভাবিয়া তিনি সাপকে ল্যাজ ধরিয়া টানিয়া বাহির করিলেন, সাপ বাহিরে আসিয়া, আবার মুখ দেখাইতে হইল, এই ক্ষোভে মাথ। কুটিতে লাগিল ; মাথা কুটিতে কুটিতে মাথা চেপ্টা হইয়া গেল, সেই অবধি সাপের ফণা হইয়াছে । আশমানীর মুখচন্দ্র অধিক স্বন্দর, স্বতরাং চন্দ্রদেব উদিত হইতে ন। পারিয়া, ব্ৰহ্মার নিকট নালিশ করিলেন । ব্ৰহ্মা কহিলেন, ‘ভয় নাই, তুমি গিয়া উদিত হও, আজি হইতে স্ত্রীলোকদিগের মুখ আবৃত হইবে ; সেই অবধি ঘোমটার স্বষ্টি । নয়ন জুটি যেন খঞ্জন, পাছে পাখী ডান বাহির করিয়া উড়িয়া পলায়, এই জন্য বিধাত পল্লবরূপ পিজরায় কবtট করিয়া দিয়াছেন ।