পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e কেন না, সম্মুখে রাজার অভিষেক উপস্থিত। সীতারাম নিজ বাহুবলে হিন্দুরাজ্য স্থাপন করিয়া রাজা হুইয়াছেন ; কিন্তু তাহার অভিষেক হয় নাই । হিন্দুশাস্ত্রানুসারে তাহ হওয়া উচিত। চন্দ্রচূড় ঠাকুর "এই প্রসঙ্গ উত্থাপি ত করিলে, সীতারাম তাহাতে সন্মত xহুইয়াছিলেন । তিনি বিবেচনা করিলেন, এইরূপ একটা মহোৎসবের দ্বার। প্রজাবৰ্গ পরিতুষ্ট হইলে তাহদের রাজভক্তি বৃদ্ধি পাইতে পারে ; অতএব বিশেষ সমারোহের সহিত অভিষেক কার্য্য সম্পন্ন করিবার কল্পনা হইতেছিল । নন্দ এবং চন্দ্রচূড় উভয়েই এক্ষণে সীতারামকে অনুরোধ করিলেন ষে, এখন একটা মাঙ্গলিক ক্রির উপস্তিত, এখন গঙ্গারামের বধরূপ অশুভ কৰ্ম্মট কর। বিধেয় নহে । তাহাতে অমঙ্গলও যদি না হয়, লোকের আনন্দেরও লাঘব হইতে পারে । এ কথায় রাজা সম্মত হইলেন । ভিতরের আসল কথ। এই যে, গঙ্গারামকে শূলে দিতে সীতারামের অস্তিরিক ইচ্ছ! নহে, তবে রাজধৰ্ম্মপালন এবং রাজ্যশাসন জন্যই অবগু কৰ্ত্তব্য বলিয়া তাহ। স্থির করিয়াছিলেন । ইচ্ছা ছিল না, তাহার কারণ – গঙ্গারাম শ্রীর ভাই । শ্রীকে সীতারাম ভুলেন নাই, তবে এত দিন ধরিয়। তাহাকে খুজিয়। ন! পাষ্টয়া, নিরাশ হুইয়া, বিষয়কৰ্ম্মে চিত্তনিবেশ করিস। শ্রীকে ভুলিবেন, ইহা স্থির করিয়াছিলেন ; অতএব আবার রাজ্যের উপর তিনি মন স্থির করিতেছিলেন । সেই জন্যই দিল্লীতে গিয়া বাদশাহের দরবারে হাজির হইয়াছিলেন এবং বাদশাহকে সন্তুষ্ট করিয়া সনদ সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন । সে জন্য উৎসাহসহকারে সংগ্রাম করিয়৷ ভূষণ অধিকার করিয়াছিলেন এবং দক্ষিণ-বাঙ্গালায় এক্ষণে একাধিপত্য প্রচার করিতে ছিলেন । কিন্তু শ্ৰী এখনও হৃদয়ের সম্পূণ অধিকারিণী । অতএব গঙ্গারামের শূলে যাওয়৷ এখন ,স্থগিত রহিল । এ দিকে অভিষেকের বড় ধূম পড়িয়া গেল । অত্যন্ত সমারোহ—অত্যন্ত গোলযোগ । দেশ-বিদেশ হইতে লোক আসিয়৷ নগর পরিপূর্ণ করিল—রাজা, রাজপুরুষ, ব্রাহ্মণ, পণ্ডিত, অধ্যাপক, দৈবজ্ঞ, ইতর, ভদ্র, আহুত, অনাহুত, রবাহুত, ভিক্ষুক, সন্ন্যাসী, সাধু অসাধুতে নগরে আর স্থান হয় না। এই অসংখ্য জনমণ্ডলের কৰ্ম্মের মধ্যে প্রতিনিয়ত আহার, ভক্ষ্য, ভোজ্য, লুচি, সন্দেস, দধির ছড়াছড়িতে সহরে একহাটু কাদা হইয়া উঠিল ; পাত কাটার জালায় সীতারামের রাজ্যের সব কলাগাছ নিম্পত্র হুইল, ভাঙ্গা ভাড় ও ছেঁড় কলাপাতে গড়খাই ও মধুমতী বুজিয়া বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী উঠিবার গোছ হুইয়। উঠিল । অহরহ বাদ্য ও নৃত্যগীতের দৌরাত্মে) ছেলেদের পর্য্যস্ত মাথা গরম হইয়া छेठिंढा । এই অভিষেকের মধ্যে একটা ব্যাপার দান । সীতারাম অভিযেকের দিনে সমস্ত দিবস, কখনও স্বহস্তে, কখনও আপন কর্তৃত্বাধীনে ভৃত্যহস্তে সুবর্ণ, রজত, তৈজস এবং বস্ত্র দান করিতে লাগিলেন । এত লোক আসিয়াছিল যে, সমস্ত দিনে দান ফুরাইল না । অৰ্দ্ধরাত্র পর্যন্ত এইরূপ দান করিয়া সীতারাম আর পারিয়া উঠিলেন না। অবশিষ্ট লোকের বিদায় জন্য রাজপুরুষদিগের উপর ভার দিয়া অস্তঃপুরে শ্রামার্থ চলিলেন । ষাষ্টতে যাইতে সভয়ে, সবিস্ময়ে, অন্তপুরদ্বারে দেখিলেন যে, সেই ত্রিশূলধারিণী সুবর্ণমন্ত্রী রাজলক্ষ্মীমূৰ্ত্তি । রাজা ভক্তিভাবে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া বলিলেন, “ম, আপনি কে, আমাকে দয়া করিয়া বলুন ।” জয়ন্তী বলিল, “মহারাজ ! আমি ভিখারিণী ; আপনার নিকট ভিক্ষার্থ আসিয়াছি।” রাজা । মা ! কেন আমায় ছলনা করেন ? আপনি দেবী, তামি চিনিয়াছি । আপনি সাক্ষাৎ কমল! —আমার প্রতি প্রসন্ন। তউম । জয়ন্তা । মহারাজ ! আমি সামান্ত মানুধা । নহিলে আপনার নিকট ভিক্ষার্থ আসিতাম না ; শুনিলাম, আজ যে ঘাত চাহিতেছে, আপনি তাহাকে তাই দিতেছেন । আমার আশী বড়, কিন্তু বার এমন দান, তার কাছে অশি। মিৰ্ম্মল! ইষ্টবে না মনে ক:িসু! আসিয়াছি । রাজ! বলিলেন, “ম, আপনাকে আদেয় আমার কিছুই নাই । আপনি একবার আমার রাজ। রক্ষা করিয়াছেন, দ্বিতীয়বারে আমার কুলমর্যাদ। রক্ষা করিয়াছেন, আপনি দেবাত হউন আর মানবীষ্ট হউন, আপনাকে সকলই আমার দেয় । কি বস্তু কামনা করেন আজ্ঞা করুন, আমি এখনই আনিয়া উপস্থিত করিতেছি ।” জয়ন্তী মহারাজ ! গঙ্গারামের বধদণ্ডের বিধান হইয়াছে । কিন্তু এখনও সে মরে নাই । আমি তার জীবনভিক্ষা করিতে আসিয়াছি । রাজা । আপনি ? - জয়ন্তী । কেন মহারাজ ? অসম্ভাবনা কি ? রাজা । গঙ্গারাম কীটালুকটি—আপনার তার প্রতি দয়া কিসে হইল ? জয়ন্তী । আমর সবাই সমান । ভিখারী,—আমাদের কাছে