পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম নিদ্রাভঙ্গ হইল-চাহিয়া দেখিলেন, সম্মুখে গৈরিকবক্সরুদ্রাক্ষভূষিত মুক্তকুন্তলা কমনীয়া মূৰ্ত্তি । সীতারাম প্রথমে জয়ন্তী মনে করিয়৷ অতি ব্যস্তভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কই ? শ্ৰী কই ?” কিন্তু তখনই দেখিলেন, জয়ন্তী নহে, ঐ ! তখন চিনিয়l, “ঐ ! ঐ ! ও ঐ ! আমার ঐ !" বলিয়া উচ্চ-কণ্ঠে ডাকিত ডাকিতে রাজ গাত্ৰোখান করিয়া বাহু প্রসারণ করিলেন । কিন্তু কেমন মাথা ঘুরিয়৷ গেল–চক্ষু বুজিয়া রাজা আবার শুষ্টয় পড়িলেন। মুহূৰ্ত্তমধ্যে আপনিই মূৰ্ছাভঙ্গ হইল । g তখন সীতারাম উৰ্দ্ধমুখে স্পন্দিভতারলোচনে, অতৃপ্ত দৃষ্টিতে স্ত্রীর পানে চাহিদা দেখিতে লাগিলেন । কোন কথা নাই—মেন বা নয়নের তৃপ্তি ন হইলে কথার স্ফূৰ্ত্তি সস্তাবিত হইতেছে না। দেখিতে দেখিতে --যেন ঠাহীর আনন্দ প্রফুল্ল মুখমণ্ডল আর তত প্রফুল্ল রহিল না একটা নিশ্বাস পড়িল । রাজা, ‘আমার শ্র)’ বলিয়৷ দেখিলেন, আমার শ্ৰী নহে। বুঝি দেখিলেন যে, স্থিরমূৰ্ত্তি, অবিচলিত ধৈর্যসম্পন্ন অশ্রুবিন্দু শৃঙ্গ, উদ্ভাসিতরূপরশ্মিমণ্ডলমধ্যবৰ্ত্তিনী, মহামহিমময়ী, এ যে দেবী-প্রতিম! বুঝি এ শ্ৰী নহে ! হায়! মূঢ় সাতারাম মহিষী খুজিতেছিল—দেবী লইয়া কি করিবে ? ডাকিয়াছিলেন, বুঝি সপ্তম পরিচ্ছেদ রাজার কথা শ্ৰী সব শুনিল, শ্রীর কথা রাজ সব শুনিলেন । যেমন করিয়া, সৰ্ব্বত্যাগী হইয়া সীতারাম স্ত্রর জন্য পৃথিবী ঘুরিয়া বেড়াইয়াছেন, সীতারাম তাহ বলিলেন । ঐ আপনার কথাও কতক কতক বলিল, সকল বলিল না। তার পর ঐ জিজ্ঞাসা করিল, “এখন আমাকে কি করিতে হুইবে ?” প্রশ্ন শুনিয়া সীতারামের নয়নে জল আসিল । চিরজীবনের পর স্বামীকে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিল কি না, “এখন আমাকে কি করিতে হইবে ?” সীতারামের মনে হইল, উত্তর করেন, “কড়িকাঠে দড়ি বুলাইয়া দিবে, আমি গলায় দিব ।” তাহা না বলিয়া সীতারাম বলিলেন, “আমি আজ পাঁচ বৎসর ধরিয়া মহিষী খুজিয়া বেড়াইতেছি, -** 3, よ =

  • *

এখন তুমি আমার মহিষী হইয়। রাজপুরী আলো, করিবে ।” শ্ৰী । মহারাজ ! নন্দার প্রশংসা বিস্তর শুনিয়াছি। তোমার সৌভাগ্য সে, তুমি তেমন মহিষী পাইয়াছ । অন্য মহিমীর কামনা করিও না । সীতা । তুমি জ্যেষ্ঠা । নন্দ যেমন হোক, তোমার পদ তুমি গ্রহণ করিবে না কেন ? - ত্র। য়ে দিন তোমূরি মহিলী হইতে পারিলে আমি বৈকুণ্ঠের লক্ষ্মীও হইতে চাহিতাম না, আমার সে দিন গিয়াছে । সীতারাম । সে কি ? কেন গিয়াছে ? কিসে গিয়াছে ? শ্ৰী । আমি সন্ন্যাসিনী, সৰ্ব্বকৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়াছি । সীতারাম । পতিযুক্তার সন্ন্যাসে অধিকার নাই । পতিসেবাই তোমার ধৰ্ম্ম । শ্ৰী । যে সব কৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়াছে, তাহার পতিসেবাও ধৰ্ম্ম নহে ; দেবসেবাও তাহার ধৰ্ম্ম নহে । সীতা । সৰ্ব্বকৰ্ম্ম কেহ ত্যাগ করিতে পারে না ; তুমিও পার নাই । গঙ্গারামের জীবনরক্ষা করিয়া তুমি কি কৰ্ম্ম করিলে না? আমাকে দেখা দিয়া তুমি কি কৰ্ম্ম করিলে না ? শ্ৰী । করিয়াছি ; কিন্তু তাহাতে আমার সন্ন্যাসধৰ্ম্ম লষ্ট হইয়াছে ; একবার ধৰ্ম্মভ্ৰষ্ট হইয়াছি বলিয়া চিরকাল ধৰ্ম্মভ্রষ্ট হইতে বল ? সীতা । স্বামিসহবাস স্ত্রীজাতির পক্ষে ধৰ্ম্ম-ভ্রংশ, এমন কুশিক্ষা তোমায় কে দিল ? যেই দিক, ইহার উপায় আমার হাতে আছে । আমি তোমার স্বামী, তোমার উপর আমার অধিকার অাছে। সেই ' অধিকারবলে আমি তোমাকে আর যাইতে দিব না । শ্ৰী । তুমি স্বামী, আর তুমি রাজা । তা ছাড়া তুমি উপকারী আমি উপকৃত । অতএব তুমি যাইতে ন দিলে আমি যাইতে পারিব না । সীতা । আমি স্বামী, আমি রাজা, আর আমি উপকারী, তাই আমি যাইতে না দিলে তুমি যাইতে । পরিবে না । বলিতেছ না কেন, আমি তোমায় ভালবাসি, তাই আমি ছাড়িয়া না দিলে তুমি যাইতে পারিবে না ? স্নেহের সোনার শিকল কাটিবে কি প্রকারে ? শ্ৰী। মহারাজ ! সে ভ্রমটা এখন গিয়াছে। এখন বুঝিয়াছি, যে ভালবাসে, ভালবাসায় তাহার ধৰ্ম্ম এবং সুখ আছে । কিন্তু যে ভালবাসা পায়, তাহার তাতে কি ? তুমি মাটীর ঠাকুর গড়িয় তাহাকে