পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম আছে, তাহারা সকল কৰ্ম্মে পটু। তাহার। থাকিতে কিছু না দেখিলেও চলে । শ্ৰী । একবার ত তাহারা থাকিতেও রাজ্য যাইতে ছিল । দৈবাৎ তুমি সে রাত্রে না পৌছিলে রাজ্য থাকিত না । আবার কেন কেবল র্তাহীদের উপর নির্ভর করিতেছ ? সীতা । আমি ত আছি, কোথাও যাই নাই । আবার বিপদ পড়ে, রক্ষা করিব । শ্ৰী। যতক্ষণ এই বিশ্বাস থাকিবে, ততক্ষণ তুমি কোন যত্ন করিবে না। ষত্ব ভিন্ন কোন কাৰ্য্যই সফল হয় না । - সীতা । যত্নের ক্রটি কি দেখিলে ? ঐ । আমি স্ত্রীজাতি, সন্ন্যাসিনী, আমি রাজকাৰ্য্য কি বুঝি যে, সে কথার উত্তর দিতে পারি ? তবে একটা বিষয়ে মনে বড় শঙ্কা হয় । মুর্শিদাবাদের ংবাদ পাইতেছেন কি ? তোরাব, গা গেল, ভূষণ। গেল, বারোভূইয়। গেল, নবাব কি চুপ করিয়া আছে ? সীতা । সে ভাবন করিও না । মুর্শিদকুলি যতক্ষণ মাল-খাজন। ঠিক কিস্তা কিস্তা পাইবে ততক্ষণ কিছু বলিবে না । ঐ পাইতেছে কি ? সীতা । চl, পাঠাইবার বন্দোবস্ত আছে বটে – তবে এবার দেওয়া ষায় নাই, অনেক খরচপত্র হইয়াছে । শ্ৰী । তবে সে চুপ করিয়া আছে কি ? সীতারাম মাথ। ষ্টেট করিয়৷ কিছুক্ষণ নীরব হইয়। রহিলেন ; পরে বলিলেন, “সে কি করিবে, কি করিতেছে, তাহার কিছু সংবাদ পাই নাই ।” শ্ৰী । মহারাজ ! চিত্তবিশ্রামে থাক বলিয়৷ কি ংবাদ লইতে ভুলিয়। গিয়াছ ? সীতারাম চিন্তামগ্ন হষ্টয়া বলিলেন, “বোধ হয়, তাই । শ্ৰী ! তোমার মুখ দেখিলে আমি সব ভুলিয়া যাই ।” শ্ৰী । তবে, আমার এক ভিক্ষা আছে। এ পোড়ার মুখ আবার লুকাইতে হইবে, নহিলে সীতf বাম রায়ের নামে কলঙ্ক হইবে ; ধৰ্ম্মরাজ্য ছারেখারে যাইবে । আমায় হুকুম দাও, আমি বনে যাই । সীতা । যা হয় হোক, আমি ভাবিয়া দেখিয়াছি । হয় তোমায় ছাড়িতে হইবে, নয় রাজ্য ছাড়িতে হইবে । আমি বাজ্য ছাড়িব, তোমায় ছাড়িব না । শ্ৰী । তবে তাহাই করুন । রাজ্য কোন উপযুক্ত লোকের হাতে দিন । তার পর সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া আমার সঙ্গে চলুন । ¢ፃ সীতারাম চিন্তামগ্ন হইয়। রহিলেন । রাজার তখন ভোগলালসা অত্যন্ত প্রবল। আগে হইলে সীতারাম রাজ্য ত্যাগ করিতে পারিতেন । এখন সে সীতারাম নাই ; রাজাভোগে সীতারামের চিত্ত সমল হইয়াছে। সীতারাম রাজ্য ত্যাগ করিতে পারিলেন, না ! «ma-assisk som একাদশ পরিচ্ছেদ সেই যে সভাতলে রম। মূৰ্ছিত হুইয়া পড়িয়া গিয়াছিল, সর্থীরা ধরাধরি করিয়া অনিয়া শুয়াইল, সেক্ট অবধি রম আর উঠে নাই । প্রাণপণ করিয়া আপনার সর্তী নাম রক্ষা করিয়াছিল । মান রক্ষা হইল, কিন্তু প্রাণ বুঝি গেল । এখন রোগ পুরাতন হষ্টয়াছে। কিন্তু গোড়া রাজার রাণীর চিকিৎসার অভাব হয় নাই। প্রথম হইতে কবিরাজ যাতায়াত করিতে লাগিল । অনেকগুল! কবিরাজ রাজবাড়ীতে চাকরী করে, তত কৰ্ম্ম নাই, সচরাচর ভূভাবর্গকে মসলা খাওয়াইয়। এবং পরিচারিকাকে পোষ্টাই দিয়া কালাতিপাত করে ; এক্ষণে ছোট রাণীকে রোগী পাইয়া কবিরাজ মহাশয়ের। হঠাৎ বড় লোক হইয়া বসিলেন ; তখন রোগ-নির্ণয় লইয়া মহা হুলস্থল পড়িয়া গেল। মূৰ্ছ, বায়ু, অম্লপিত্ত, হৃদ্রোগ ইত্যাদি নানাবিধ রোগের লক্ষণ শুনিতে শুনিতে রাজপুরুষের জালাতন হষ্টয়া উঠিল । কেহ নিদানের দোহাই দেন, কেহ বাগ ভটের, কেহ চরকসংহিতার বচন আওড়ান, কেহ সুশীতের টাঁক ঝাড়েন। রোগ অনির্ণীত রহিল । কবিরাজ মহাশয়ের কেবল বচন বাড়িয়া নিশ্চিন্তু রছিলেন, এমন নিন্দ আমরা করি না । তাহার নানাপ্রকার ঔষধের ব্যবস্থা করিলেন । কেহ বটিক, কেহ গুড়া, কেহ বুত, কেহু তৈল : কেহ বলিলেন, ঔষধ প্রস্তুত করিতে হক্টবে ; কেহ বলিলেন, আমার কাছে যাহা প্রস্তুত আছে তেমন আর হইবে না । ষাই হউক, রাজার বাড়ী, রাণীর রোগ, ঔষধের প্রয়োজন থাক, না থাক, নুতন প্রস্তুত হইবে না, এমন হইতে পারে না । হইলে দশ জনে দু’টাক দু'সিক উপার্জন করিতে পারে, অতএব ঔষধ প্রস্তুতের ধুম পড়িয়া গেল। কোথাও হামানদিস্তায় মূল পিষ্ট হইতেছে, কোথাও ঢেকিতে ছাল কুটিত্ত্বেচ্ছ: কোথাও হাড়িতে কিছু সিদ্ধ হইতেছে । 3. থেকে বলি ।