পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

જન્મ খুলিতে তৈলে মূৰ্ছন পড়িতেছে।" রাজবাড়ীর এক জন পরিচারিক। এক দিন দেখিয়া বলিল, “রাণী হইয়া রোগ হয়, সেও ভাল।” যার জন্য ঔষধের এত ধূম, তার সঙ্গে ঔষধের সাক্ষাৎসম্বন্ধ বড় তাল্প । কবিরাজ মহাশয়ের ঔষধ যোগাইতেন না, তা নয়। সে গুণে র্তাহীদের কিছুমাত্র ক্রটি ছিল না । তবে রমার দোষে সে যত্ন বৃথা হইল । --রম ঔষধ খাইত না । মুরলার বদলে যমুনা নায়ী এক জন পরিচারিক। রাণীর প্রপান। দাসী হইয়াছিল । যমুনাকে একটু প্রাচীন দেখিয়া নন্দ তাহাকে এই পদে অভিষিক্ত করিয়াছিলেন । আময় এমন বলিতে পারি না যে, যমুন। আপনাকে প্রাচীন বলিয়। স্বীকার করিত ; শুনিয়াছি, কোন ভুতাবিশেষের এ বিষয়ে সম্পূৰ্ণ মতান্তর ছিল ; তথাপি স্থল কথ। এই যে, যমুন। একটু প্রাচীন ঢালে চলিত, রমাকে বিলক্ষণ যত্ন করিত ; বোগিণীর সেবার কোন প্রকার ক্রটি না হয়, তদ্বিযয়ে বিশেস মনোযোগিনী ছিল । রমার জন্য কবিরাজের। যে ঔষধ দিল্প। যাই ত, তাহ। তাহারই হাতে পড়িত ; সেবন করাইবার ভার তাহার উপর : কিন্তু সেবন করন তাহার সাধilর্তীত ; রম। কিছুতেই ঔষধ খাইত না । এ দিকে রোগের কোন উপশম নাই, ক্রমেই বুদ্ধি, রম। আর মাথ! তুলিতে পারে ন! ! দেখিয়! শুনিয়। যমুনা স্থির করিল যে, সকল কথ। বড় রাণীকে গিয়। জানাইবে । অতএব রমাকে বলিল, “আমি বড় মহারাণীর কাছে চলিলাম, ঔষধ তিনি নিজে ত্যাসিন্ধ! খাওয়াইবেন ।" রম বলিল, “বাছ। ! মুতু্যুকালে তার কেন জালাতন করিস ? বরং তোর সঙ্গে একটা বন্দোবস্ত করি ” যমুন জিজ্ঞাসা করিল, “কি বন্দোবস্ত মা ?” , রমা ! তোমার এই ঔষধগুলি আমাকে বেচিবে ? - আমি এক এক টাকা দিয়! এক একটা বাড়া কিনিতে রাজী আছি । যমুনা। সে আবার কি মা ? তোমার তোমায় অাঁবার বেচিব কি ? রমা। টাক। নিয়া তুমি যদি আমায় বড়ী বেচ, তাহলে তোমার আর তাতে কোন অধিকার থাকিবে না । চাই আমি খাই, চাই না খাই, তুমি আর কথা কহিতে পাবে না । যমুনা কিছুক্ষণ ভাবিল। সে বুদ্ধিমতী ; মনে এই ষ্ট্রেক্ষার করিল যে, এ ত মরিবেই, তবে আমি T- কেন ? প্রকাশ্বে বলিল, “ত ম|, ঔষপ বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী তুমি যদি খাও ত টাকা দিয়াই নাও, আর অমনিই নাও নাও না কেন । আর যদি না খাও ত আমার কাছে ওষধ পড়ে থেকেই কি ফল ?” অতএব চুক্তি ঠিক হইল। যমুন টাক লইয়। ঔষধ রমাকে বেচিল। রম ঔষধের কতকগুলা পিকদানীতে ফেলিয়া দিল, কতক বালিসের নীচে গুজিল । উঠিতে পারে না যে, অগত্র রাখিবে । এ দিকে ক্রমশঃ শরীরধ্বংসের লক্ষণ সকল দেখা দিতে লাগিল । নন্দ প্রত্যহ রমাকে দেখিতে আসে, তুই এক দণ্ড বসিয়। কখাবাৰ্ত্ত কহিয়া যায় । নন্দ। দেখিল মে, মৃত্যুর ছায়া পড়িয়াছে ; যাহার ছায়, সে নিকটেই । নন্দ ভাবিল, “হায়, রাজবাড়ীর কবিরাজগুলোকেও কি ডাকিনতে পেয়েছে ?” নন্দ। একেবারে কবিরাজের দলকে ডাকিয়। পাঠাইল । সকলে আসিল নন্দ তান্তরালে থাকিয় তাহাদিগকে উত্তম-মধ্যম রকম ভংসণ; করিল । বলিল, “যদি রোগ ভাল করিতে পার না, তবে মাসিক লগু কেন ?" এক জন প্রাচীন কবির।জ বলিল, “মা ! কবিরাঞ্জে ঘপ দিতে পাবে, পরমায়ু দিতে পারে ন। " ননদ। বলিল, “তবে আমাদের মপেও কাজ নাই, কবিরাজেও কাজ নাই । তfম র! আপনার আপনার দেশে মৃণ ও ” কবিরাজমগুলা বড় ক্ষুঃ হঈল । প্রাচীন কবিরাজটি বড় বিজ্ঞ, তিনি বলিলেন, “ম। । আমাদের অদৃষ্ট নি হাস্ত মন্দ, তাই এমন ঘটিয়াছে । নহিলে আমি ধে ঔষধ দিয়াছি, তাহ সাক্ষাৎ পশ্বন্তরি । আমি এখনও আপনার নিকট স্বীকার করিতেছি যে, তিন দিনের মধ্যে আরিাম করিব, যদি একটা বিষয়ে আপনি অভয় দেন ।” নন্দ জিজ্ঞাস কবিল, “কি চাই ?” - কবিরাজ বলিল, “আমি নিজে বসিয়৷ থাকিয়। ঔষধ খাওয়াইয়। আসিব ।" বুড়ার বিশ্বাস, “বেটী ঔষধ খায় না ; আমার ঔষধ খাইলে কি রোগী মরে ?" নন্দ স্বীকত হইয়। কবিরাজদিগকে বিদায় দিল । পরে রমার কাছে আসিয়া সব বলিল । রমা অল্প হাসিল, বেশী হাসিবার শক্তিও নাই, মুখেও স্থান নাই । মুখ বড় ছোট হইয়া গিয়াছে । নন্দ জিজ্ঞাসা করিল, “হাসিলি যে ?” রম আবার তেমনি হাসি হাসিয়া বলিল, “ঔষধ খাব না ।”