পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ზy® 3 • হাম । সেই দেবী, ডাকিনী হতে রাজ্যের অমঙ্গল হচ্ছে দেখে, এক দিন ভৈরবীবেশে ত্ৰিশূল ধারণ করে তাকে বধ করতে গেলেন । রাম ! ইঃ ! তার পর ? শু্যাম । তার পর আর কি ? মা’র রণরঙ্গিণী মূৰ্ত্তি দেখে সেটা তালগাছ প্রমাণ বিকটাকার মূৰ্ত্তি ধারণ করে ঘোর গর্জন কবৃতে করতে কোথায় যে আকাশ-পথে উড়ে গেল, কেউ আর দেখতে পেলে না । রাম ! কে বলুলে ? শু্যাম । বল্‌লে আর কে ? যার দেখেছে, তারাই বলেছে । রাজ এমনই সেই ডাকিনীর মায়ায় বদ্ধ যে, সেটা গেছে ব’লে, চিত্তবিশ্রামের যত দ্বারবান, দাসদাসী সবাইকে ধরে এনে করেদ করেছেন । তারাই সব কথা প্রকাশ করেছে । তারা বলে, “মহারাজ ! আমাদের অপরাপ কি ? দেবতার কাছে আমরা কি করুব ?” রাম । গল্পকথ। নয় ত ? শু্যাম । এ কি আর গল্পকথা ? রাম । কি জানি । হয় ত ডাকিনীটা মড়াফড়া খাবার জন্য রাত্রিতে কোথা বেরিয়ে গিয়েছিল, আর আসে নি। এখন রাজার পীড়াপীড়িতে তার আপনার বাচন জন্য একটা র চে ম’চে বলুছে । শু্যাম । এ কি আর রচ কথা ? তার দেখেছে যে, সেটার এমন এমন মূলোর মত দাত, শোণের মত চুল, বারকোশের মত চোখ, একটা আস্ত কুমীরের মত জিব, দুটো জালার মত দুটো স্তন, মেঘগর্জনের মত নিশ্বাস, আর ডাকেতে একেবারে মেদিনী বিদীর্ণ। রাম ! সৰ্ব্বনাশ ! এ ত বড় অদ্ভুত ব্যাপার ! রাজার মতিচ্ছন্ন ধরেছে বল্ছিলে কি ? শুIম । তাই বলুছি শোন ন৷ এই ত গেল নিরপরাধী বেচারাদের নাহক কস্লেদ । তার পর সেই ডাকিনীটাকে খুঁজে ধ’রে আনবার জন্য রাজ। ত দিক্‌বিদিকে কত লোকই পাঠাচ্ছেন ৷ এখন সে আপনার স্বস্থানে চলে গেছে, মানুষের সাধ্য কি ষে, তাকে অনুসন্ধান ক’রে ধরে আনে। কেউ তা পারছে না-সবাই এসে ষোড়হাত করে এত্তেল করছে যে, সন্ধান কবৃতে পারলে না । - রাম । তাতে রাজ। কি বলেন ? খাম। এখন যাই কেউ ফিরে এসে বলুছে যে, সন্ধান পেলে না, অমনই রাজা তাকে কয়েদে পাঠাচ্চেন। এই ক'রে ত হাবুজখান। পরিপূর্ণ। এ দিকে রাজপুরুষদের এমনই ভয় লেগেছে ষে, বাড়ী, বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ঘর দ্বার, স্ত্রী-পুত্র ছেড়ে পালাচ্ছে । দেখাদেখি নগরের প্রজা দোকানদারও সব পালাচ্ছে । রাম । তা, দেবী কি করেন ? তিনি কটাক্ষ করিলেই ত এই সকল নিরপরাধী লোক রক্ষা পায় । শু্যাম । তিনি সাক্ষাৎ ভগবতী । তিনি এই সকল ব্যাপার দেখিয়া ভৈরবীবেশে রাজাকে দর্শন দিয়া বলিলেন, “রাজা ! নিরপরাধীর পীড়ন করিও না । নিরপরাধীর পীড়ন করলে রাজার রাজ্য থাকে না । এদের কোন দোষ নাই । আমি সেটাকে তাড়াইয়াছি --কেন না, সেটা হ’তে তোমার রাজ্যের অমঙ্গল হতেছিল । দোষ হয়ে থাকে, তামারই হয়েছে । দণ্ড করিতে হয়, ওদের ছেড়ে দিয়ে আমারই দণ্ড কর।” রাম । তার পর ? শুIম । তাই বলুছিলাম, রাজার বড় মতিচ্ছন্ন ধরেছে । সেটা পালান অবধি রাজার মেজাজ এমন গরম যে, কাকপক্ষী কাছে যেতে পাচ্ছে না, তর্কালঙ্কার ঠাকুর কাছে গিয়েছিলেন, বড়রাণী কাছে গিয়েছিলেন, গাল খেয়ে পালিয়ে এলেন । রাম । সে কি ! গুরুকে গালি-গালাজ ? নিৰ্ব্বংশ হবেন যে । শুiম । তার কি আর কথা আছে ? তার পর শোন না । গরম মেজাজের প্রথম মোহড়াতেই সেই দেবত গিয়ে দর্শন দিয়ে ঐ কথ। বললেন । বলুতেই রাজ। চক্ষু আরক্ত করিয়৷ তাকে স্বহস্তে প্রহার করিতে উদ্যত । তা না করে, ষ করেছে, সে আরও ভয়ানক । রাম । কি করেছে ? শু্যাম । ঠাকুরাণীকে কয়েদ করেছে । আর হুকুম দিয়েছে সে, তিন দিন মপে দি ডাকিনীকে ন পাওয়া যায়, তবে সমস্ত রাজ্যের লোকের সম্মুখে ( সেই দেবীকে ) উলঙ্গ করে, চাড়ালের দ্বারা বেত মারিবে । রাম ! হে ! হে ! হে ! হে ! দেবতার আবার কি করবে! রাজা কি পাগল হয়েছে ? তl, ম! কি কয়েদ গিয়েছেন না কি ? তাকে কয়েদ করে, কর বাপের সাধ্য ? স্যাম । দেবচরিত্র কার সাধ্য বুঝে ! রাজার না কি রাজ্যভোগের নিদিষ্ট কাল ফুরিয়েছে, তাই মা ছল ধরিয়া, এখন স্বধামে গমনের চেষ্টায় আছেন। রাজা কয়েদের হুকুম দিলেন, ম স্বচ্ছন্দে গজেন্দ্রগমনে কারাগারমধ্যে গিয়া প্রবেশ করিলেন । শুনিতে পাই, রাত্রে কারাগারে মহা কোলাহল উপস্থিত হয়। ষত দেবতার। আসিয়৷ স্তবপাঠ করেন। ঋষির