পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

♥፡ সীতাঁরাম তাহাকে অর্থ দিয়া লইয়া আসিল । ষে সাধবী, তাহাকে বলপূর্বক আনিতে লাগিল। রাজ্যে হাহাকারের উপর আবার হাহাকার পড়িয়া গেল । এই সকল দেখিয়া শুনিয়া চন্দ্রচূড় ঠাকুর এবার কাহাকে কিছু না বলিয়৷ তলুপী বাধিয়া মুটের মাথায় দিয়া তীর্থযাত্রা করিলেন । ইহজীবনে আর মহম্মদপুরে ফিরিলেন না । পথে যাইতে ঘাইতে চাদশাহ ফকীরের সঙ্গে র্তাহার সাক্ষাৎ হইল । ফকীর জিজ্ঞাসা করিল, “ঠাকুরজি, কোথায় বাইতেছেন ?" চন্দ্র । কাশী—আপনি কোথায় যাইতেছেন ? ফকার । মক্কা । চন্দ্র ৷ তীর্থযাত্রায় ? ফকীর । যে দেশে হিন্দু আছে, সে দেশে আর থাকিব না। । এই কথা সীতারাম শিখাইয়াছে । বিংশ পরিচ্ছেদ জয়ন্ত প্রসন্নমনে মহম্মদপুর হইতে নির্গত হইল । দুঃখ কিছুষ্ট নাই--মনে বড় মুখ । পথে চলিতে চলিতে মনে মনে ডাকিতে লাগিল –“জয় জগন্নাথ ! তোমার দয়। অনন্ত, তোমার মহিমার পার নাই । তোমাকে যে ন জানে, ধে ন! ভাবে, সেই ভাবে বিপদ! বিপদ কাঙ্গকে বলে প্রভু ? তাহ। বলিতে পারি না ; তুমি যাহাতে আমাকে ফেলিয়াছিলে, তাত পরম সম্পদ । আমি এত দিন এমন করিয়! বুঝিতে পারি নাই যে, আমি ধৰ্ম্মল্লষ্ট, কেন না, আমি বুথ গৰ্ব্বে গৰ্ব্বিত, বুথ অভিমানে অভিমানিনী, অহঙ্কারবিমূঢ় । অৰ্জ্জুন ডাকির। ছিলেন, আমিও ডাকিতেছি, প্রভু, শিখাও প্রভু ! শাসন কর । “যচ্ছে য়ং স্তান্নিশ্চিতং ব্ৰাহি তন্মে শিষ্যস্তেহহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্।" জয়ন্তী জগদীশ্বরকে সম্মুখে রাখিয়া, তার সঙ্গে কথোপকথন করিতে শিখিয়াছিল । মনের সকল কথা খুলিয়, বিশ্বপিতার নিকট বলিতে শিখিয়াছিল । বালিকা যেমন মা-বাপের নিকট আবার করে, জয়ন্তীও তেমনই সেই পরম পিতামাতার নিকট আবদার করিতে শিখিয়াছিল । এখন জয়ন্তী একটা আবার লইল । আবার সীতারামের জন্য। সীতারামের i মতি-গতি, সীতারাম ত উৎসন্ন যায়, বিলম্ব নাই ।ة )

  • S

তার আর কি রক্ষা নাই ? অনন্ত দয়ার আধারে তাহার জন্য কি একটুকু দয়া নাই ? জয়ন্তী তাই ভাবিতেছিল । ভাবিতেছিল, আমি জানি, ডাকিলে তিনি অবশ্য শুনেন । সীতারাম ডাকে না— ডাকিতে ভুলিয়া গিয়াছে।--নাহলে এমন করিয়া ডুবিবে কেন ? জানি, পাপীর দগুষ্ট এই মে, সে দয়ামসকে ডাকিতে ভুলিয়া যায় ! তাই সীতারাম তাকে ডাকিতে ভুলিয়া গিয়াছে, আর ডাকে না । তা সেন। ডাকুক, আমি তার হইয়। জগদীশ্বরকে ডাকিলে তিনি কি শুনিবেন ন! ? আমি যদি বাপের কাছে আগের করি যে, এই পাপিষ্ঠ সীতারামকে পাপ হইতে মোচন কর, তবে কি তিনি শুনিবেন না ? জয় জগন্নাথ ! তোমার নামের জয় ! সাতারামকে উদ্ধার করিতে হইবে । তার পর জয়ন্তী ভাবিল মে, যে নিশ্চেষ্ট, তাহার ডাক ভগবান শুনেন না। আমি যদি নিজে সীতারামের উদ্ধারের জন্য কোন চেষ্টা না করি, তবে ভগবান কেন আমার কথর কর্ণপাত করিবেন ? দেখি কি করা যায় । আগে ত্রকে ঢাই । শ্ৰী পলাইয়া ভাল করে নাই । অথবা ন পলাইলেও কি হইত, বলা যায় ন। আমার কি সাধ্য যে, ভগবন্নির্দিষ্ট কাৰ্য্যকারণ-পরম্পরা বুঝিয়। উঠি । জয়ন্তী তখন শ্রীর কাছে চলিল ৷ যথাকালে ঐীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল । জয়ন্তী ত্রার কাছে সমস্ত বৃত্তাস্ত সবিশেষ বলিল । ঐ বিষণ্ণ তইয়া বলিল, “রাজার অধঃপতন নিকট । তাহুীর উদ্ধারের কি কোন উপায় নাই ?” জয়ন্তী । উপায় ভগবান ! ভগবানকে তিনি ভুলিয়। গিয়াছেন । ভগবানকে যে দিন আবার তার মনে হইবে, সেই দিন তাহার আবার উন্নতি আরম্ভ হইবে । ত্র । তাহার উপায় কি ? আমি যখন তাহার কাছে ছিলাম, তখন সৰ্ব্বদা ভগবৎপ্রসঙ্গই র্তাহার কাছে কহিতাম ! তিনি মনোযোগ দিয়া শুনিতেন । জয়ন্তী । তোমার মুখের কথা, তাই মনোযোগ দিতেন । তোমার মুখপানে ষ্টা করিয়া চাহিয়া থাকিতেন, তোমার রূপে ও কণ্ঠে মুগ্ধ হইয় থাকিতেন, ভগবৎপ্রসঙ্গ তার কানে প্রবেশ করিত না । তিনি কোন দিন তোমার এ সকল কথার উত্তর কিছু করিয়াছিলেন কি ? কোন দিন কোন তত্ত্বের মীমাংসা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন কি ? হরিনামে কোন দিন উৎসাহ দেখিয়াছিলে কি ? শ্ৰী । না, তা ত বড় লক্ষ্য করি নাই ।