পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శీఘ్ర আমার জন্য মর!” তখন তাহারা অপ্রসন্ন হইয়া ਚੋਲਿੰਗ | তখন তাহার। সকলে মিলিয়া এক বৈঠক করিল। রঘুবীর মিশ্র তাহাঁদের মধ্যে প্রাচীন এবং উচ্চপদস্থ— রঘুবীর তাহাদিগকে বুঝাইতে লাগিল । বলিল, “ভাই সব ঘরের ভিতর মুসলমান আসিয়া খোচাইয়। মারিবে, সেই কি ভাল হইবে ? আইস, মরিতে হয় ত মরদের মত মরি! চল সাজিয়া গিয়া লড়াই করি। কেহ হুকুম দেয় নাই—নাই দিক ! মরিবার আবার হুকুম-হাকাম কি ? মহারাজের নিমক খাইয়াছি, মহারাজের জন্য লড়াই করিব—তা হুকুম না পাইলে কি সময়ে তার জন্য হাতিয়ার ধরিব না ? চল, হুকুম হোক না হোক, আমরা গিয়া লড়াই করি ” এ কথায় সকলেই সম্মত হইল । তবে, গয়াদীন পাড়ে প্রশ্ন তুলিল যে, “লড়াই করিব কি প্রকারে । এখন দুৰ্গরক্ষার উপায় একমাত্র কামান । কিন্তু গোলন্দাজ ফৌজ ত সব পলাইয়াছে । আমরা ত কামানের কাজ তেমন জানি না। আমাদের কি রকম লড়াই করা উচিত ?” তখন এ বিষয়ের বিচার আরম্ভ হইল। তাহাতে কুৰ্ম্মদ সিংহ জমাদার বলিল, “অত বিচারে কাজ কি ? হাতিয়ার আছে, ঘোড়া আছে, রাজাও গড়ে আছে । চল, আমরা হাতিয়ার বাধিয়া, ঘোড়ায় সওয়ার হইয়া রাজার কাছে গিয়া হুকুম লই । মহারাজ যাহ। বলিবেন, তাহাই করা যাইবে ।” এই প্রস্তাব অতি উত্তম বলিয়া স্বীকার করিয়া সকলেই অনুমোদন করিল। অতি ত্বর করিয়া সকলে রণসজ্জা করিল—আপন আপন অশ্ব সকল মুসজ্জিত করিল। তখন সকলে সজীভূত ও অশ্বান্ধঢ় হইয়া আস্ফালন পূৰ্ব্বক অস্ত্রে অস্ত্রে ঝঞ্চনা শব্দ উঠাইয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিল, “জয় মহারাজকি জয় । জয় রাজা সীতারামকি জয় !" সেই জয়ধ্বনি সীতারামের কানে প্রবেশ করিয়াছিল । ত্রয়োবিংশতিতম পরিচ্ছেদ যোদ্ধৃগণ জয়ধ্বনি করিতে করিতে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া, যথায় মঞ্চপাশ্বে সীতারাম, জয়ন্তী ও ঐর মহাগীতি শুনিতেছিলেন, সেইখানে আসিয়া জয়ধ্বনি করিল। রঘুবীর মিশ্র জিজ্ঞাস করিল, “মহারাজের কি হুকুম ? আজ্ঞা পাইলে আমরা এই কয় জন নেড় মুগুকে হাকাইয়া দিই।”

সীতারাম বলিলেন, “তোমরা কিয়ৎক্ষণ এইখানে অপেক্ষ কর । আমি আসিতেছি ।” এই বলিয়। রাজা অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করিলেন । সিপাহীর ততক্ষণ নিবিষ্টমনা হইয়া অবিচলিতচিত্ত এবং অস্থলিত প্রারম্ভ হইয়া সেই সন্ন্যাসিনীদ্বয়ের স্বৰ্গীয় গান শুনিতে লাগিল । যথাকালে রাজা এক দোল সঙ্গে করিয়া অন্তঃপুর হইতে নির্গত হইলেন । রাজতৃত্যেরা সব পলাইয়াছিল বলিয়াছি ; কিন্তু দুই চারি জন প্রাচীন পুরাতন ভৃত্য পলায় নাই, তাহাও বলিয়াছি । তাহারাই দোলা বহিয়া আনিতৃেছিল । দোলা র ভিতরে ননা এবং বালকবালিকাগণ । রাজা সিপাহীদিগের নিকট প্রত্যাবর্তন করিয়া তাহাদিগকে শ্রেণীবদ্ধ করিয়! সাজাইয়া অতি প্রাচীন প্রথানুসারে একটি অতি ক্ষুদ্র স্থচিত্ত্বাহ রচনা করিলেন । রঞ্জমধ্যে নন্দার শিবিক রক্ষা করিয়া স্বয়ং সুচিমুখে অশ্বারোহণে দণ্ডায়মান হইলেন । তখন তিনি জয়ন্তী ও শ্রকে ডাকিয়া বলিলেন, “তোমরা বাহিরে কেন ? স্থচির রন্ধ্ৰমধ্যে প্রবেশ কর ।" জয়ন্তী ও শ্ল হাসিল ; বলিল, “আমরা সন্ন্যাসিনী, জীবনে-মৃত্যুতে প্রভেদ দেখি না ।" তখন সীতারাম আর কিছু ন বলিয়া “জয় জগদীশ্বর ! জয় লছমীনারায়ণ জী " বলিয়া দ্বারাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিলেন । সেই ক্ষুদ্র স্থচিবৃহ র্তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল । তখন সেই সন্ন্যাসিনীরা অবলীলাক্রমে তাহার অশ্বের সম্মুখে আসিয়া ত্রিশূলদ্বয় উন্নত করিয়া— “জয় শিব শঙ্কর । ত্রিপুরনিধনকর ! রণে ভয়ঙ্কর ! জয় জয় রে! চক্র-গদাধর । কৃষ্ণ পীতাম্বর ! জয় জয় হরি হর ! জয় জয় রে !" ইত্যাকার জয়ধ্বনি করিতে করিতে অগ্ৰে অগ্রে চলিল। সবিস্ময়ে রাজা বলিলেন, “সে কি ? এখনই পিষিয়া মরিবে যে ?” শ্ৰী বলিল, “মহারাজ ! রাজাদিগের অপেক্ষা কি সন্ন্যাসীদিগের মরণে ভয় বেশী ?" কিন্তু জয়ন্তী কিছু বলিল না। জয়ন্তী আর দৰ্প করে না। রাজাও এই স্ত্রীলোকের কথার বাধ্য নহে বুঝিয়া আর কিছু বলিলেন না । তার পর দুর্গদ্বারে উপস্থিত হইয়। রাজা স্বহস্তে তাহার চাবি খুলিয়া অর্গল মোচন করিলেন। লোহার শিকল সকলে মহা ঝঞ্চনা বাজিল—সিংহদ্বারে উচ্চ