পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইন্দির (t কি করি, আমি কুলবধু মুখ ফুটিয়া কাহাকে ডাকিতে পারিলাম না । এমত সময়ে পান্ধীর অপর পাশ্বে কি একটা শব্দ হুইল । যেন উপরিস্থ বটবৃক্ষের শাখ হইতে কিছু গুরু পদার্থ পড়িল । আমি সে দিকের কবাট অল্প খুলিয়া দেখিলাম, কে এক জন কৃষ্ণবর্ণ বিকটাকার মনুষ্য । ভয়ে দ্বার বন্ধ করিলাম, কিন্তু তখনই বুঝিলাম ষে, এ সময় দ্বার খুলিয় রাখাই ভাল। কিন্তু আমি পুনশ্চ দ্বার খুলিবার পূৰ্ব্বেষ্ট আর এক জন মানুষ গাছের উপর হইতে লাফাইয়া পড়িল। দেখিতে দেখিতে অার এক জন, আবার এক জন । এইরূপ চারি জন প্রায় এককালেই গাছ তইতে লাফাষ্টয় পড়িয়া পান্ধী কঁপে করিয়া উঠাষ্টয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিল । দেখিতে পাইয়। আমার দ্বারবানের। “কোন হ্যায় —কোন হায় রে?” রব তুলিয়া জল হইতে দৌড়িল । তখন বুঝিলাম যে, আমি দস্থ্যহস্তে পড়িয়াছি । তখন আর লজ্জায় কি করে ? পান্ধীর উভয় দ্বার মুক্ত করিলাম । আমি লক্ষাইয়। পড়িয়। পলাইব মনে করি লাম, কিন্তু দেখিলাম যে, আমার সঙ্গের সকল লোক অ s্যস্ত কোলাহল করিয়া পাল্লার পিছনে দৌড়াইল । অতএব ভরস হইল। কিন্তু শীঘ্রই সে ভরসা দূর হইল । তখন নিকটস্থ অন্যান্য বৃক্ষ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া বহুসংখ্যক দলু দেখা দিতে লাগিল । আমি বলিয়াছি, জলের ধারে বটবৃক্ষের শ্রেণী । সেই সকল বৃক্ষের নীচে দিয়া দস্থার। পাল্পী লইয়া যাইতেছিল সেই সকল বৃক্ষ হইতে মনুষ্য লাফাইয়া পড়িতে লাগিল । তাহাদের কাহারও হাতে বাশের লাঠি, কাহারও হাতে গাছের ডাল । লোকসংখ্যা অধিক দেখিয়া আমার সঙ্গের লোকেরা পিছাইয়া পড়িতে লাগিল । তখন আমি নিতান্ত হতাশ্বাস হইয়া মনে করিলাম, লাফাইয়া পড়ি। কিন্তু বাহকের যেরূপ দ্রুতবেগে যাইতেছিল—তাহাতে পান্ধী হইতে নামিলে আঘাত প্রাপ্তির সম্ভাবনা । বিশেষতঃ এক জন দসু্য আমাকে লাঠি দেখাইয়া বলিল যে, “নামিবি ত মাথা ভাঙ্গিয়া দিব।” সুতরাং আমি নিরস্ত হইলাম । আমি দেখিতে লাগিলাম যে, এক জন দ্বারবান অগ্রসর হইয়া আসিয়া পান্ধী ধরিল। তখন এক জন দক্ষ তাহাকে লাঠির আঘাত করিল। সে অচেতন হইয়া মৃত্তিকাতে পড়িল । তাহাকে আর উঠিতে দেখিলাম না । বোধ হয়, সে আর উঠিল না। ইহ দেখিয়া অবশিষ্ট রক্ষিগণ নিরস্ত হইল। বাহকেরা আমাকে নিৰ্ব্বিঘ্নে লইয়া গেল । রাত্রি এক প্রহর পর্য্যস্ত তাহার এইরূপ বহন করিয়া পরি- , শেষে পান্ধী নামাইল । দেখিলাম, যেখানে নামাইল, সে স্থানে নিবিড় বন—অন্ধকার । দস্থ্যর একটা মশাল জালিল । তখন আমাকে কহিল, “তোমার যাহা কিছু আছে, দাও—নহিলে প্রাণে মারিব।” . আমার অলঙ্কার বস্ত্রাদি সকল দিলাম। অঙ্গের অলঙ্কারও খুলিয়। দিলাম । কেবল হাভের বালা খুলিয়। দিই নাই –তাহার কাড়ির লইল । তাহার একখানি মলিন জীর্ণ বস্ত্র দিল, তাহ পরিয়া পরি- - ধানের বহুমূল্য বস্ত্র ছাড়ির দিলাম। দস্থ্যর আমার সৰ্ব্বস্ব লইয়। পান্ধী ভাঙ্গির রূপ। খুলিয়া লইল । পরি শেষে অগ্নি জালিয়। ভগ্ন শিবিক দাহ করিয়া দম্যতার চিহ্নমাত্র লোপ করিল। তখন তাহারাও চলিয়া যায়, সেই নিবিড় অরণ্যে অন্ধকার রানিতে আমাকে বন্যপশুদিগের মুখে সমর্পণ করিয়া যায় দেখিয়। আমি কাদিয়া উঠিলাম । আমি কহিলাম, “তোমাদিগের পায়ে পড়ি, আমাকে সঙ্গে লইয়া চল ।” দ্যুর সংসৰ্গও আমার পুহণীয় হইল । এক প্রাচীন দস্থ্য সকরুণভাবে বলিল, “বাছা, আমম রঙ্গ মেয়ে আমরা কোথায় লইয়া যাইব ? এ ডাকাতির এখনই সোহরৎ হইবে—তোমার মত রাঙ্গ মেয়ে আমাদের সঙ্গে দেখিলেই আমাদের ধরিবে ।" এক জন যুবা দস্থ কহিল, “আমি ইহাকে লইয়া ফাটকে যাই, সেও ভাল, তবু ইহাকে ছাড়িতে পারিব ন। " সে আর যাহা বলিল, তাহ লিখিতে পারি ন,—এখন মনেও আনিতে পারি না । সেই প্রাচীন দস্তু ঐ দলের সদর । সে যুবাকে লাঠি দেখাইয়া কহিল, “এই লাঠির বাড়িতে এইখানেই তোর মাথা ভাঙ্গিয়া রাখিয়া যাইব । ও সকল পাপ কি আমাদের সয় ?” তাহার। চলিয়া গেল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ শ্বশুরবাড়ী যাওয়ার সুখ এমন কি কখনও হয় ? এত বিপদ, এত দুঃখ, কাহারও কখন ঘটিয়াছে ? কোথায় প্রথম স্বামিসনদর্শনে যাইতেছিলাম—সৰ্ব্বাঙ্গে রত্নালঙ্কার পরিয়া কত সাধে চুল র্বাধিয়া, সাধের সাজা পানে অকলুষিত ওষ্ঠাধর রঞ্জিত করিয়া, সুগন্ধে এই কৌমারপ্রফুল্ল দেহ আমোদিত করিয়া, এই উনিশ বৎসর লইয়া, প্রথম স্বামিসন্দর্শনে যাইতেছিলাম, কি বলিয়। এই অমূল্য