পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইন্দির। - ఏ নিৰ্ম্মলা । ঘাটটি জুড়ে, গাছটি বেড়ে, ফুটুল ফুলের দল। অায় অায় সই, জল আনি গে, জল আনি গে চল । অমলা । বিনোদ বেশে, মুচকে হেসে, খুলব হাসির কল । কলসী ধরে, গরব করে, বাজিয়ে যাব মল ৷ আয় অায় সই, জল আনি গে, জল আনি গে চল । নিৰ্ম্মলা । আলুত পয়ে, কল্কাদার আঁচল । - টিমে চালে, তালে তালে, বাজিয়ে যাব মল । আয় অায় সক্ট, জল আনি গে, জল আনি গে চল । অমল । গহনা গায়ে, যত ছেলে, খেলা ফেলে, ফিবৃবে দলে দল । কত বুড়ী, জুজুড়ী, ধরূবে কত জল । আমরা মুচকে হেসে, বিনোদ বেশে, বাজিয়ে যাব মল । আমর। বাজিয়ে যাব মল । সই বাজিয়ে যাব মল ৷ দুই জনে । আয় অায় সই, জল আনি গে, জল আনি গে চল । বালিকাসিঞ্চিত রসে এ জীবন কিছু শীতল হইল। আমি মনোযোগ পূর্বক এই গান শুনিতেছি দেখিয়। বসুজ মহাশয়ের সহধৰ্ম্মিণী আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও ছাই গান আবার স্থা করিয়া শুন্‌ছ কেন ?” আমি বলিলাম—“ক্ষতি কি ?” বমুজপত্নী। ছুড়ীদের মরণ আর কি ! মল বাজানর আবার গান ! অামি । ষোল বছরের মেয়ের মুখে ভাল শুনাইত না বটে, সাত আট বছরের মেয়ের মুখে বেশ শুনায়। জোয়ান মিনূষের হাতে চড়াচাপড় জিনিস ভাল নহে বটে, কিন্তু তিন বছরের ছেলের হাতে চড়াচাপড় বড় মিষ্ট ।

  • . . . - *, বস্থজপত্নী আর কিছু না বলিয়া, ভারি হইয়া? বসিয়া রহিলেন । আমি ভাবিতে লাগিলাম। " ভাবিলাম, এ প্রভেদ কেন হয় ? এক জিনিষ দুই , রকম লাগে কেন ? যে দান দরিদ্রকে দিলে পুণ্য হয়, তাহ। বড়মানুষকে দিলে খোসামোদ বলিয়া গণ্য হয় কেন ? যে সত্য ধৰ্ম্মের প্রধান, অবস্থাবিশেষে তাহা আত্মশ্লাঘা বা পরনিন্দ পাপ হয় কেন? যে ক্ষমা পরমধৰ্ম্ম, দুষ্কৃতকারীর প্রতি প্রযুক্ত হইলে তাহ মহাপাপ কেন ? সত্য সত্যই কেহ স্ত্রীকে বনে দিয়া আসিলে লোকে তাহাকে মহাপাপী বলে, কিন্তু রামচন্দ্র সীতাকে বনে দিয়াছিলেন, তাহাকে কেহ মহাপাপী

বলে না কেন ? ঠিক করিলাম, অবস্থাভেদে এ সকল হয় । কথাটা আমার মনে রহিল। আমি ইহার পর এক দিন যে নির্লজ্জ কাজের কথা বলিব, তাহা এই কথা মনে করিয়া বলিয়াছিলাম । তাই এ গানটা এখানে লিখিলাম । নৌকাপথে কলিকাতা আসিতে দুর হইতে কলিকাতা দেখিয়া বিস্মিত ও ভীত হইলাম । অট্টালিকার পর অট্টালিক, বাড়ীর গায়ে বাড়ী, বাড়ীর পিঠে বাড়ী, তার পিঠে বাড়ী, অট্টালিকার সমুদ্র—তাহার অন্ত নাই, সংখ্যা নাই, সীমা নাই । জাহাজের মাস্তুলের অরণ্য দেখিয়া জ্ঞানবুদ্ধি বিপৰ্য্যস্ত হইয়া গেল । নৌকার অসংখ্য অনন্ত শ্রেণী দেখিয়া মনে হইল, এত নৌক৷ মানুষে গড়িল কি প্রকারে ? * নিকটে আসিয়া দেখিলাম, তীরবর্তী রাজপথে গাড়ী, পান্ধী পিপড়ের সারির মত চলিয়াছে—যাহার হাটিয়া যাইতেছে, তাহাদের সংখ্যার ত কথাই নাই। তখন মনে হইল, ইহার ভিতর খুড়াকে খুজিয়া বাহির করি কি প্রকারে ? নদী-সৈকতের বালুকারাশির ভিতর হইতে চেন। বালুকাকণাটি খুজিয়া বাহির করিব কি প্রকারে ? ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ স্ববে। কৃষ্ণদাস বাবু কলিকাতায় কালীঘাটে পূজা দিতে আসিয়াছিলেন। ভবানীপুরে বাসা করিলেন । আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার খুড়ার বাড়ী কোথায় ? কলিকাতায় না ভবানীপুরে ?” তাহা আমি জানিতাম না ।

  • কলিকাতায় এক্ষণে নৌকার সংখ্যা শতাংশও নাই ।

পূৰ্ব্বকার