১২ । পায়ের ধূলা লইলাম, তার পর এক নজর দেখিয়া লইলাম, মানুষটা কি রকম । তিনি তখন ছাদের উপর অন্ধকারে একটা পাটি পাতিয়া, তাকিয়া মাথায় দিয়া গুইয়া আছেন, একটা ঝি পা টিপিয়া দিতেছে। আমার বোধ হইল, একটা লম্বা কালির বোতল গলায় গলায় কালি-ভরা-পাটির উপর কাত হইয়৷ পড়িয়া গিয়াছে। পাক চুলগুলি টিনের ঢাকনির * মত শোভা পাইতেছে । অন্ধকারটা বাড়াইয়া | আমাকে দেখিয়া গৃহিণী ঠাকুরাণী বধূকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এটি কে ?” বধু বলিল, “তুমি একটি রাধুনী খুজিতেছিলে, তাই একে নিয়ে এসেছি ।” গৃহিণী। কোথায় পেলে ? বধু। মালীমা দিয়াছেন । গৃ । বামন ? না কায়েত ? ব। কায়েত । গৃ । আঃ ! তোমার মাসীমার পোড়াকপাল । কায়েতের মেয়ে নিয়ে কি হবে ? এক দিন বামনকে ভাত দিতে হ'লে কি দিব ? ব। রোজ ত আর বামনকে ভাত দিতে হবে না । ষে কয় দিন চলে চলুক—তার পর বামনী পেলে রাখা যাবে—তা বামনের ঠ্যাকার বড়—আমরা তাহাদের রান্নাঘরে গেলে হাড়িকুড়ি ফেলিয়া দেন, আবার পাতের প্রসাদ দিতে আসেন ! কেন, আমরা কি মুচি ? আমি মনে মনে স্বভাষিণীকে ভূয়সী প্রশংসা করিলাম—কালিভরা লম্বা বোতলটাকে সে মুঠোর ভিতর আনিতে জানে দেখিলাম । গৃহিণী বলিলেন, *তা সত্যি বটে মা—ছোট লোকের এত অহঙ্কার সওয়া যায় না । তা এখন দিনকতক কায়েতের মেয়েই রেখে দেখি । মাইনে কত বলেছে ?” ব। তা আমার সঙ্গে কোন কথা হয় নাই । গৃ । হায় রে, কলিকালের মেয়ে । লোক রাখতে নিয়ে এসেছ, তার মাইনের কথা কও নাই ? আমাকে গৃহিণী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি নেবে
বলিলাম, “যখন আপনাদের আশ্রয় নিতে এয়েছি, তখন যা দিবেন, তাই নিব ।” গৃ । তা বামনের মেয়েকে কিছু বেশী দিতে হয় বটে, কিন্তু তুমি কায়েতের মেয়ে—তোমার তিন টাকা মাসে, আর খোরাক-পোষাক দিব ।
- capsul.
আমার একটু আশ্রয় পাইলেই যথেষ্ট—সুতরাং তাহাতে সন্মত হইলাম। বলা বাহুল্য যে, মাহিয়ান লইতে হইবে শুনিয়াই প্রাণ কাদিয়া উঠিল । আমি বলিলাম, “তাই দিবেন।” মনে করিলাম, গোল মিটিল—কিন্তু তাহা নহে। লম্বা বোতলটায় কালি অনেক । তিনি বলিলেন, “তোমার বয়স কি গা ? অন্ধকারে বয়স ঠাওর পাইতেছি না—কিন্তু গলাট ছেলেমানুষের মত বোধ হইতেছে।” আমি বলিলাম, “বয়স এই উনিশ কুড়ি ।” গৃহিণী । তবে বাছা, অন্যত্র কাজের চেষ্টা দেখ, ফিরে যাও । আমি সমত্ত লোক রাখি না । স্বভাষিণী মাঝ হইতে বলিল, “কেন, মা, সমত্ত লোক কি কাজকৰ্ম্ম করে না ?" গৃ। দুর বেটী পাগলের মেয়ে । সমত্ত লোক কি লোক ভাল হয় ? স্থ । সে কি মা ! দেশশুদ্ধ সমত্ত লোক কি মন ? গৃ । তা নাই হলে—তবে ছোট লোক—যারা খেটে খায়, তারা কি ভাল ? এবার কান্না রাখিতে পারিলাম না ; কঁাদিয়া উঠিয়া গেলাম । কালির বোতলট পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসা করিল, “ছুড়ী চলুলো না কি ? স্বভাষিণী বলিল, “বোধ হয় ।” গৃ । তা যাক গে । - স্থ । কিন্তু গৃহস্থবাড়ী থেকে না খেয়ে যাবে ? উহাকে কিছু খাওয়াইয়া বিদায় করিতেছি । এই বলিয়া স্বভাষিণী আমার পিছু পিছু উঠিয়া আসিল । আমাকে ধরিয়া আপনার শয়নগৃহে লইয়৷ গেল । আমি বলিলাম, “আর আমায় ধরিয়া রাখিতেছ কেন ? পেটের দায়ে কি প্রাণের দায়ে, আমি এমন সব কথা শুনিবার জন্য থাকিতে পারিব না ।” সুভাষিণী বলিল, “থাকিয়া কাজ নাই ।“ কিন্তু আমার অনুরোধে আজিকার রাত্রিটা থাক ।” কোথায় যাইব ? কাজেই চক্ষু মুছিয়া সে রাত্রিটা থাকিতে সম্মত হইলাম । এ কথা ও কথার পর মুভাষিণী জিজ্ঞাসা করিল, “এখানে যদি না থাক, তবে যাবে কোথায় ? - ఫి' এবার স্বভাষি চক্ষু মুছিল । বলিল, “গঙ্গায় ঘাইতে হুইবে না। আমি কি করি, তা একটুখানি বসিয়া দেখ। গোলযোগ উপস্থিত করিও না। আমার কথা শুনিও ”
