পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬ আমি বলিলাম, “বড় নয়। কাঙ্গালের আর বড়মানুষের মেয়ের সঙ্গে সকলেই একটু প্রভেদ করে।” সুভাষিণী হাসিয়া উঠিল । বলিল, “মরণ আর কি তোমার! এই বুঝি বুঝিয়াছ ? তুমি বড়মানুষের মেয়ে বলে বুঝি তোমার আদর করেছেন ?” আমি বলিলাম, “তবে কি ?” মুভী । ওঁর ছেলে পেট ভরে খাবে, তাই তোমার এত আদর। এখন যদি তুমি একটু কোট কর, তবে তোমার মাহিনী ডবল হইয়া যায় । আমি বলিলাম, “আমি মাহিন৷ চাই না । ন৷ লইলে যদি কোন গোলযোগ উপস্থিত হয়, এ জন্য হাত পাতিয়া মাহিনা লইব । লইয়া তোমার নিকট রাখিব, তুমি কাঙ্গাল গরীবকে দিও। আমি আশ্রয় পাইয়াছি, এই আমার পক্ষে যথেষ্ট ।” নবম পরিচ্ছেদ পাকা চুলের মুখ-দুঃখ আমি আশ্রয় পাইলাম। আর একটি অমূল্য রত্ন পাইলাম—একটি হিভৈষিণী সখী । দেখিতে লাগিলাম যে, সুভাষিণী আমাকে আন্তরিক ভালবাসিতে লাগিল—আপনার ভগিনীর সঙ্গে যেমন ব্যবহার করিতে হয়, আমার সঙ্গে তেমনই ব্যবহার করিত । তার শাসনে দাসদাসীরাও আমাকে অমান্ত করিত না, এ দিকে রান্নাবান্ন সম্বন্ধেও মুখ হইল । সে বুড়ী ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণী—তাহার নাম সোনার মা,—তিনি বাড়ী গেলেন না। মনে করিলেন, তিনি গেলে আর চাকরীটি পাইবেন না, আমি কায়েমী হইব । তিনি এই ভাবিয়া নান ছুত করিয়া বাড়ী গেলেন না । সুভাষিণীর সুপরিসে আমরা ছই জনেই রছিলাম। তিনি শাশুড়ীকে বুঝাইলেন ঠযে, কুমুদিনী ভদলোকের মেয়ে, এক সব রান্না পারিয়া উঠিবে না—আর সোনার মা বুড় মানুষই বা কোথা যায় ? শাশুড়ী বলিল, “দুষ্ট জনকেই কি রাখিতে পারি ? এত টংক যোগায় কে ?” বধু বলিল, “ত এক জনকে রাখিতে হ'লে সোনার মাকে রাখিতে হয় । কুমু এত পারবে না।" গৃহিণী বলিলেন, “ন না । সোনার মা’র রান্ন৷ আমার ছেলে খেতে পারে না । তবে দুই জনই থাক ।” আমার কষ্ট নিবারণ জন্য স্বভাষিণী এই কৌশলটুকু করিল। গিল্পী তার হাতে কলের পুতুল ; কেন বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী না, সে রমণের বেী, রমণের বেীর কথা ঠেলে, কার সাধ্য? তাতে আবার স্বভাষিণীর বুদ্ধি যেমন প্রখর, স্বভাবও তেমনি সুন্দর। এমন বুদ্ধি পাইয়া আমার এ দুঃখের দিনে একটু সুখ হইল। আমি মাছ-মাংস রাধি বা দুই একখানা ভাল ব্যঞ্জন রাধি—বাকি সময়টুকু স্বভাষিণীর সঙ্গে গল্প করি—তার ছেলে-মেয়ের সঙ্গে খেলা করি ; হলো বা স্বয়ং গৃহিণীর সঙ্গে একটু ইয়ারকি করি। শেষ কাজটায় একটা বড় গোলে পড়িয়া গেলাম । গৃহিণীর বিশ্বাস, তার বয়স কাচ, কেবল অদৃষ্টদোষে গাছকতক চুল পাকিয়াছে, তাহা তুলিয়া দিলেই তিনি আবার যুবতী হইতে পারেন । এই জন্যই তিনি লোক পাইলেই এবং অবসর পাইলেই পাকা চুল তুলাইতে বসিতেন। এক দিন আমাকে এই কাজে বেগার ধরিলেন । আমি কিছু ক্ষিপ্ৰহস্ত, শীঘ্র শীঘ্রই ভাদ্রমাসের উলুক্ষেত্র সাফ করিতেছিলাম। দুর হইতে দেখিতে পাইয়। স্বভাষিণী আমাকে অঙ্গুলি ইঙ্গিতে ডাকিল । আমি গৃহিণীর কাছ হইতে ছুটী লইয়া বধুর কাছে গেলাম । সুভাষিণী বলিল, “ও কি কাণ্ড ! আমার শাশুড়ীকে নেড়া-মুড়া করিয়া দিতেছ কেন ?" আমি বলিলাম, “ও পাপ এক দিনে চুকানই ভাল ।” সুভ। তা হ'লে কি টেকতে পারবে ? যাবে কোথায় ? অামি । আমার হাত থামে না যে । স্বভা ! মরণ আর কি ! ই একগাছি তুলে চ'লে আসতে পার না ? অামি । তোমার শাশুড়ী যে ছাড়ে না । সুভ ; বল গে যে, কৈ, পাক চুল ত বেশী দেখিতে পাই না—এই ব’লে চলে এসেী ৷ আমি হাসিয়া বলিলাম, “এমন দিনে ডাকাতি কি করা যায় ? লোকে বলুবে কি ? এ যে আমার কালাদীঘির ডাকাতি ।” সুভ ৷ কালাদীঘির ডাকাতি কি ? স্বভাষিণীর সঙ্গে কথ। কহিতে কহিতে আমি একটু আত্মবিশ্বত হইলাম—হঠাৎ কালাদীঘির কথ। অসাবধানে মুখ দিয়া বাহির হইয়াছিল। কথাটা চাপিয়া গেলাম । বলিলাম, “সে গল্প আর এক দিন করিব।” - স্বভা। আমি যা বলিলাম, তা একবার বলিয়াই দেখ •না ? অামার অনুরোধে ।