পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আন দেখি । مسw. معمالا গৃ। তা বেশ ওষুধ বাছা! আরসি একখানা একখানা আরসি আনিয়া দিলাম। দেখিয়া গৃহিণী বলিলেন, “ও মা ! সব চুল কালো হয়ে গেছে। আঃ, আবাগের বেটী ? লোকে এখনই বলুবে, কলপ দিয়াছে।” গৃহিণীর মুখে হাসি ধরে না । সে দিন সন্ধ্যার পর আমার রান্নার মুখ্যাতি করিয়া আমার বেতন বাড়াইয়া দিলেন, আর বলিলেন, “বাছা ! কেবল কাচের চুড়ি হাতে দিয়া বেড়াও, দেখিয়া কষ্ট হয় ।” এই বলিয়া তিনি নিজের বহুকালপরিত্যক্ত এক জোড়া সোনার বালা আমায় বখশিস করিলেন। লইতে আমার মাথা কাটা গেল-চোখের জল সামলাইতে পারিলাম না । কাজেই “লইব না” কথাটা বলিবার অবসর পাইলাম না । একটু অবসর পাইয়। বুড়া বামুন ঠাকুরাণী আমাকে ধরিল । বলিল, “ভাই, আর সে ওষুধ নেই কি ?” আমি । কোন ওষুধ ? বামনীকে তার স্বামী বশ করবার জন্য যা দিয়েছিলেম ? বামনী। দূর হ, একেই বলে ছেলে-বুদ্ধি ! আমার কি সে সামগ্ৰী আছে ? আমি । নেই ? সে কি গো ? একটাও না ! বামনী । তোদের বুঝি পাচটা করে থাকে ? আমি । তা নইলে আর আমন রাধি ? দ্রৌপদী না হ'লে ভাল রাধা যায় ? গোটা পাচেক যোটাও না, রান্না খেয়ে লোকে অজ্ঞান হবে । বামনী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল ; বলিল, “একটাই ষোটে না ভাই—তাই আবার পাচটা ! মুসলমানের হয়, ষত দোষ হিন্দুর মেয়ের । আর হবেই বা কিসে? এই ত শোণের মুড়ী চুল ! তাই বলুছিলাম, বলি, সে ওষুধটা আর আছে, যাতে চুল কালে হয় ?” আমি । তাই বল। আছে বৈ কি । আমি তখন কলপের শিশি বামুন ঠাকুরাণীকে দিয়া গেলাম। ব্রাহ্মণঠাকুরাণী রাত্রিতে জলযোগাস্তে শয়নকালে, অন্ধকারে, তাহা চুলে মাখাইতেছিলেন ; কতক চুলে লাগিয়াছিল, কতক চুলে লাগে নাই, কতক বা মুখে চোখে লাগিয়াছিল। সকালবেলা যখন তিনি দর্শন দিলেন, তখন চুলগুলা পাচরঙ্গা বেড়ালের লোমের মত কিছু রাঙ্গা, কিছু কালো, আর মুখখানির কতক মুখপোড়া বাদরের মত, কতক মেনিবিড়ালের মত দেখিবামাত্র পৌরবর্গ উচ্চেঃস্বরে হাসিয়া উঠিল। সে হাসি আর থামে না। ষে যখন পাচিকাকে বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী দেখে, সে তখনই হাসিয়া উঠে ] হারাণী হাসিতে হাসিতে বেদম হুইয়া মুভাষিণীর পায়ে আছড়াইয়া পড়িয়া হাপাইতে স্থাপাইতে বলিল, “ে •l, আমাকে জবাব দাও, আমি এমন হাসির বাড়ীতে পারিব না, কোন দিন দম বন্ধ হইয়া মরিয়া যাইব ।” সুভাষিণীর মেয়েও বুড়ীকে জালাইল, বলিল, “বুড়ী পিসী—সাজ সাজালে কে ? যম বলেছে সোনার চাদ এস আমার ঘরে । তাই ঘাটের সজ্জ। সাজিয়ে দিলে সি দূরে গোবরে ” এক দিন একটা বিড়ালে হাড়ি হইতে মাছ খাইয়াছিল, তাহার মুখে কালি ঝুলি লাগিয়াছিল । সুভাষিণীর ছেলে তাহা দেখিয়াছিল। সে বুড়ীকে দেখিয়া বলিল, “মা ! বুলী পিচী হালী খেয়েছে ।” অথচ বামন ঠাকুরাণীর কাছে, আমার ইঙ্গিত-মত কথাটা কেহ ভাঙ্গিল না । তিনি অকাতরে সেই বানরমার্জারমিশ্রিত কান্তি সকলের সম্মুখে বিকসিত করিতে লাগিলেন । হাসি দেখিয়। তিনি সকলকে জিজ্ঞাস করিতে লাগিলেন, “তোমর কেন হাসছ গ1 ?" সকলেই আমার ইঙ্গিতমত বলিল, “ঐ ছেলে কি বল্‌চে, শুনছ না ? বলে, বুলী পিচী হালী খেয়েছে। কাল রত্রে কে তোমার হাড়িশালে হাড়ি খেয়ে গিয়েছে, তাই সবাই বলাবলি কবৃছে, বলি সোনার মা কি বুড়ে বয়সে এমন কাজ করবে ?” বুড়া তখন গালির ছড়া আরম্ভ করিল—“সৰ্ব্বনাশীরা ! শতেকখোয়ারীরা ! আবাণীর !" ইত্যাদি মন্ত্রোচ্চারণ পূৰ্ব্বক তাহাদিগের এবং তাহাদিগের স্বামিপুত্রকে গ্রহণ করিবার জন্য যমকে অনেকবার তিনি আমন্ত্রণ করিলেন–কিন্তু যমরাজ সে বিষয়ে আপাততঃ কোন আগ্রহ প্রকাশ করিলেন না । ঠাকুরাণীর চেহারাখান সেই রকম রহিল । তিনি সেই অবস্থায় রমণবাবুকে অন্ন দিতে গেলেন। রমণবাবু দেখিয়া হাসি চাপিতে গিয়া বিষম খাইলেন, আর তাহার খাওয়া হইল না । শুনিলাম, রামরাম দত্তকে অন্ন দিতে গেলে কৰ্ত্ত মহাশয় তাহাকে দূর দূর করিয়৷ তাড়াইয়া দিয়াছিলেন । শেষে দয়া করিয়া স্বভাষিণী বুড়ীকে বলিয়া দিল, “আমার ঘরে বড় আয়না আছে। মুখ দেখ গিয়া ।”