ইন্দির “কিছু দোষ নাই” বলিয়া একটু ভাবিলাম । আমারই পক্ষে কিছু দোষ নাই, কিন্তু হারাণীর পক্ষে ? দোষ আছে বটে। তবে তাকে কাদা মাখাই কেন ? তখন সেই “বাজিয়ে যাব মল” মনে পড়িল । কুতর্কে মনকে বুঝাইলাম। যাহার দুর্দশা ঘটে, সে উদ্ধারের জন্য কুতর্ক অবলম্বন করে । আমি হারাণীকে আবার বুঝাইলাম, “কিছু দোষ নাই।" হী ! তোমাকে কি তার সঙ্গে দেখা করিতে .হুইবে ? অামি । চ | হা । কখন ? আমি । রাত্রে সবাই ঘুমাইলে । হ। একা ? - আমি ৷ এক । হা ! আমার বাপের সাধ্য নহে । আমি । আর বৌঠাকুরাণী সদি হুকুম দেন ? হা । তুমি কি পাগল হয়েছ ? তিনি কুলের কুলৱধ—সতী লক্ষ্মী, তিনি কি এ সব কাজে হাত দেন ? আমি । যদি বারণ না করেন, যাবি ? হা । সাব, কিন্তু তোমার টাকা নিব না । তোমার টাকা তুমি নাও । আমি । তাচ্চা, তোকে যেন সময়ে পাই । আমি তখন চোখের জল মূছিয়া সুভাষিণীর সন্ধানে গেলাম । তাকে নিভৃতেই পাইলাম । আমাকে দেখিয় সুভাষিণীর সেই সুন্দর মুখখানি যেন সকালের পদ্মের মত আহলাদে ফুটিয়া উঠিল— সৰ্ব্বাঙ্গ যেন সকালবেলার সর্বল পুষ্পিত শেফালিকার মত, যেন চন্দেদয়ে নদীস্রোতের মত আনন্দে প্রফুল্ল হইল । হাসিয়। আমার কানের কাছে মুখ আনিয়া স্বভাষিণী জিজ্ঞাস করিল “কেমন, চিনিয়াছ ত ?” আমি আকাশ থেকে পড়িলাম। বলিলাম, “সে কি ? তুমি কেমন ক’রে জানলে ?" স্বভাষিণী মুখ ঘুরাইয়া বলিল, “আহ, তোমার সোনার চাদ বুঝি আপনি এসে ধরা দিয়েছে ? আমরা যাই আকাশে কঁrদ পাততে জানি, তাই তোমার আকাশের চাদ ধ'রে এনে দিয়েছি । আমি বলিলাম, “তোমরা কে ? তুমি আর রবাবু ?” সুভা । না ত আবার কে ? তুমি তোমার স্বামীর, শ্বশুরের আর তাদের গায়ের নাম বলিয়া দিয়াছ, মনে আছে ? তাই শুনিয়াই বাবু চিনিতে পারিলেন । তোমার উ-বাবুর একটা বড় মোকদ্দমা ২৩ - র্তার হাতে ছিল—তার ছল করিয়া তোমার উ-বাবুকে কলিকাতায় আসিতে লিখিলেন । তার পর নিমন্ত্রণ । - আমি । তার পর হাত পাতিয়া বুড়ীর দালটুকু. নেওয়া । সুভা । হুঁ, সেটাও আমাদের ষড়যন্ত্র । আমি । তা আমার পরিচয় কিছু দেওয়া হয়েছে কি ? স্বভা। অ! সৰ্ব্বনাশ ! তা কি দেওয়া যায় ? তোমাকে ডাকাতে কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল, তার পর কোথায় গিয়েছিলে, কি বৃত্তান্ত, তা কে জানে ? : তোমার পরিচয় পেলে কি ঘরে নেবে ? বলুবে, একটা গতিয়ে দিচ্ছে । রবাবু বলেন, এখন তুমি নিজে যা করিতে পার । আমি । আমি একবার কপাল ঠুকিয় দেখিব —ন হয় ডুবিয়া মরিব । কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা ন হইলে কি করিব ? স্বভা। কখন দেখ। কবৃবে, কোথায় বা দেখা কবৃবে ? আমি । তোমরা যদি এত করিয়াছ, তবে এ বিষয়েও একটু সাহায্য কর । তার বাসায় গেলে দেখা হইবে না, –কেই বা আমায় নিয়ে যাবে, কেই বা দেখা করাইবে ? এইখানেই দেখা করিতে হইবে । সুভ ৷ কখন ? আমি । রাত্রে সবাই শুইলে । সুভ । অভিসারিকে ? আমি । ত বৈ আর গতি কি ? দোষষ্ট বা কি ? স্বামী যে । সুভা । না, দোষ নাই ! কিন্তু তাহা হইলে তাকে রাত্রে আটকাইতে হয় । নিকটে তার বাসা । তা ঘটিবে কি ? দেখি একবার বাবুর সঙ্গে পরামর্শ । ক’রে । সুভাষিণী রমণ বাবুকে ডাকাইল । তার সঙ্গে যে কথাবাৰ্ত্ত হইল, তাহ আমাকে আসিয়া বলিল । রবাবু যাহা পারেন, তাহ। এই –“তিনি এখন মোকদ্দমার কাগজপত্র দেখিবেন না—একটা ওজর করিয়া রাখিবেন । কাগজ দেখিবার জন্য সন্ধ্যার পর সময় অবধারণ করিবেন । সন্ধ্যার পর তোমার স্বামী অসিলে কাগজপত্র দেখিবেন । কাগজপত্র দেখিতে দেখিতে একটু রাত্রি করিবেন । রাত্রি হইলে আহারের জন্য অনুরোধ করিবেন । কিন্তু তার পর তোমার বিদ্যায় যা থাকে, তা করিও । রাত্রে থাকিতে আমরা কি বলিয়া অনুরোধ করিব ?”
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।