. २8
- আমি বলিলাম, “সে অনুরোধ তোমাদের করিতে হইবে না, আমিই করিব । আমার অনুরোধ যাহাতে শুনেন, তাহা করিয়া রাখিয়াছি । দুই একটা চাহনি *ছুড়িয়া মারিয়াছিলাম, তিনি তাহ ফিরাইয়। দিয়াছেন : লোক ভাল নহেন । এখন আমার অনুরোধ তাহার কাছে পাঠাই কি প্রকারে ?” এক ছত্র লিখিয়া দিব । সেই কাগজটুকু কেহ তার কাছে দিয়ে এলেই হয় ।”
সুভূ । কেন, চাকরের হাতে পাঠাও না ? আমি । যদি জন্মজন্মান্তরেও স্বামী না পাই, তবুও পুরুষমানুষকে এ বলিতে পারি না । , সুভী । তা বটে ! কেন, ঝি ? আমি । ঝি বিশ্বাসী কে ? একটা গোলমাল বাধাইবে, তখন সব খোওয়াব । সুভ । হারাণী বিশ্বাসী । আমি । হারাণীকে বলিয়াছিলাম । বিশ্বাসী বলিয়। সে নারাজ। তবে তোমার একটি ইঙ্গিত পাইলে সে যাইতে পারে । কিন্তু তোমায় এমন কপিতে কি প্রকারে বলিতে পারি ? মরি, আমি একাক্ট মরিব —পোড়া চোখে আবার জল আসিল । সুভ । হারাণী আমার কথা কি বলিয়াছে ? আমি । তুমি যদি বারণ না কর, তবে সে যাইতে পারে । সুভাষিণী অনেক ভাবিল ; বলিল, “সন্ধ।ার পর তাকে এই কথার জন্য আসিতে যলিও " ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ অামাকে একজামিন দিতে হুইল সন্ধ্যার পর আমার স্বামী কাগজপত্র লইয়া রমণরাবুর কাছে আসিলেন । সংবাদ পাইয়। আমি আর একবার হারাণীর হাতে পায়ে ধরিলাম । তারাণী সেই কথাই বলে, “বৌদিদি যদি বারণ না করে, তবে পারি। তবে জানিব, এতে দোষ নাই ।” আমি বলিলাম, “যাহা হয় কর—আমার বড় জাল ।” এই ইঙ্গিত পাইয়া হারাণী একটু হাসিতে হাসিতে সুভাষিণীর কাছে ছুটিল । আমি তাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। দেখিলাম যে, সে হাসির ফোয়ার। খুলিয়া দিয়া আলু থালু কেশবেশ সাম্লাইতে সাম্লইতে স্থাপাইতে হাপাইতে চুটিয়া আসিল । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি, এত হাসি কেন ?” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী হারাণী । দিদি, এমত জায়গায়ও মানুষকে পাঠায় ? প্রাণট। গিয়াছিল আর কি ! আমি । কেন গো ? হারা । আমি জানি, বৌদিদির ঘরে ঝাঁট থাকে ন, দরকারমত ঝর্ণটা লইয়া আমরা ঝাটাইয়া আসি । আজ দেখি যে, বৌদিদির হাতের কাছেই কে ঝটি রাখিয়া আসিয়াছে । আমি যেমন গিয়া বলিলাম, ‘ত যাব কি ?’ আমনি বৌদিদি সেই বাট৷ লইয়৷ আমাকে ভাড়াইয়া মারিতে আসিল । ভাগ্যিস পালাতে জানি, তাই পালিয়ে বাট লেম । নইলে খেঙ্গরা খেয়ে প্রাণটা গিয়াছিল আর কি ! তা এক ঘা বুঝি পিঠে পড়েছে,-—দেখ দেখি, দাগ হয়েছে কি না ? হারাণী হাসিতে হাসিতে আমাকে পিঠ দেখাইল । মিছে কথা—দাগ ছিল না। তখন সে বলিল, “এখন কি কবৃতে হবে বল--ক'রে আসি।” আমি ঝাট খেয়ে যাবি ? হারাণী । ঝাঁট মেরেছে, বারণ ত আমি বলেছিলাম, বারণ না করে ত যাব । আমি ! বাট। কি কারণ না ? হু!রাণী দেখ দিদিমণি, বৌদিদি যখন ঋটি তোলে, তখন তার ঠোঁটের কোণে একটু হাসি দেখিলাম । ত| কি করতে হবে বল । আমি তখন টুকর। কাগজে লিখিলাম, “আমি আপনাকে মন-প্রাণ সমর্পণ করিয়াছি । গ্রহণ করিবেন কি ? যদি করেন, তবে আজ রাত্রিতে এই বাড়ীতে শয়ন করিবেন । ঘরের দ্বার যেন খোলা থাকে –সেই পাচিক !” পত্র লিখিয়া, লজ্জায় ইচ্ছা করিতে লাগিল, পুকুরের জলে ডুবির থাকি, কি অন্ধকারে লুকাইয়। থাকি । তা কি করিব ? বিধাতা যেমন ভাগ্য দিয়াছেন ! বুঝি আর কখন কোন কুলবতীর কপালে এমন দুর্দশ ঘটে নাই । কাগজট মুড়িয়া মুড়িয়া হারাণীকে দিলাম । বলিলাম, “একটু সবুর ” সুভাষিণীকে বলিলাম, “একবার দাদাবাবুকে ডাকিয়া পঠাও । যাহা হয়, একটা কথা বলিয়া বিদায় দিও।” সুভাষিণী তাই বলিল। রমণবাবু উঠিয়া আসিলে, হারাণীকে বলিলাম, “এখন যা " হারাণী গেল, কিছু পরে কাগজট। ফেরৎ দিল । তার এক কোণে লেখা আছে, “আচ্ছ। !” আমি তখন হারাণীকে বলিলাম, “যদি এত করিলি, তবে অার একটা করিতে হইবে । দুপুর রাত্রে আমাকে তার শুইবার ঘরটা দেখাইয়া দিয়া আসিতে হইবে ।” করে নি ।