পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७ স্থ । তবে শেখ তুই যেন পুরুষমানুষ । আমি কেমন করিয়া তোর মন ভুলাই দেথ । এই বলিয়৷ পোড়ারমুখী মাথায় একটু ঘোমটা টানিয়া, সযত্নে স্বহস্তে প্রস্তুত সুবাসিত একটি পান আনিয়া খাইতে দিল । সে পান সে কেবল রমণবাবুর জন্য রাখে, আর কাহাকেও দেয় না। এমন কি, আপনিও কখনও খায় না। রমণবাবুর আলবোলাটা সেখানে ছিল, তাহাতে কঙ্গে বসান ; গুলের ছাই ছিল মাত্র ; তাই আমার সম্মুখে ধরিয়া ফু দিয়া ধরাইল, সুভাষিণী টানিতে লাগিল । তার পর, ফুল দিয়া সাজান তালবৃস্তখানি হাতে লইয়। বাতাস করিতে লাগিল। হাতের বালাতে চুড়িতে বড় মিঠে মিঠে বাজিতে লাগিল । আমি বলিলাম, “ভাই ! এ ত দাসীপনা— দাসীপনায় আমার কতদূর বিদ্যা, তারই পরিচয় দিবার জন্য কি তাকে আজ ধরিয়া রাখিলাম ?” সুভাষিণী বলিল, “আমরা দাসী না ত কি ?” আমি বলিলাম, “যখন তার ভালবাসা জন্মিৰে, তখন দাসীপন চলিবে । তখন পাখ করিব, প। টিপিব, পান সাজিয়া দিব, তামাকু সাজিয়া দিব, তামাকু ধরাইয়া দিব । এখনকার ও সব নয় ।” তখনও স্বভাষিণী হাঁসিতে হাসিতে আমার কাছে আসিয়া বসিল । আমার হাতখানা আপনার হাতের ভিতর তুলিয়া লইয়া মিঠে মিঠে গল্প করিতে লাগিল । প্রথম হাসিতে হাসিতে, পান চিবাইতে চিবাইতে কানবালা দোলাইয়া সে যে সং সাজিয়াছিল, তারই অতুরূপ কথা কহিতে লাগিল ! কথায় কথায় সে ভাব ভুলিয়া গেল, সখীভাবেই কথা কহিতে লাগিল । আমি যে চলিয়া যাইব, সে কথা পাড়িল । চক্ষুতে তার এক বিন্দু জল চকচক করিতে লাগিল । তথন তাহাকে প্রফুল্ল করিবার জন্য বলিলাম, “ম। শিখাইলে, তা স্ত্রীলোকের অস্ত্র বটে, কিন্তু এখন উ-বাবুর উপর খাটিবে কি ?” স্বভাষিণী তখন হাসিয়া বলিল, “তবে আমার ব্ৰহ্মাস্ত্র শিখে নে " এই বলিয়া, মাগী আমার গলা বেড়িয়া হাত দিয়। আমার মুখখান তুলিয়া চুম্বন করিল । এক ফোটা চোখের জল আমার গালে পড়িল । ঢোক গিলিয়া আমার চোখের জল চাপিয়া আমি বলিলাম, “এ যে ভাই সঙ্কল্প না হতে দক্ষিণ দেওয়া শিখাইতেছিস ।” সুভাষিণী বলিল, “তোর তবে বিদ্যা হবে না, তুই কি জানিস, একজামিন দে দেখি । এই আমি যেন উ-বাবু" এই বলিয়া সে সোঁফার উপর বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী জমকাইয়া বসিয়া—হাসি রাখিতে না পারিয়া, মুখে কাপড় গুজিতে লাগিল । হাসি থামিলে একবার আমার মুখপানে কট্‌মট করিয়া চাহিল—আবার তখনই হাসিয়া লুটাইয়া পড়িল । সে হাসি থামিলে বলিল, “একজামিন দে।” তখন যে বিদ্যার পরিচয় পাঠক পশ্চাৎ পাইবেন, সুভাষিণীকে তাহার পরিচয় দিলাম। সুভাষিণী আমাকে সোফা হইতে ঠেলিয়া দিল—বলিল, “দুর হু পাপিষ্ঠ, তুই আস্ত কেউটে ।” আমি বলিলাম, “কেন ভাই ?” 하 স্বভাষিণী বলিল, “ও হাসি চাহনিতে পুরুষমায়ু টিকে ? মরিয়া ভূত হয় ।” আমি । তবে একজামিন পাস ? সু। খুব পাস—কমিসেরিয়েটের একশ উনসত্তর পুরুষেও এমন হাসি-চাহনি দেখে নাই । মিন্‌ষের মুণ্ডটা যদি ঘুরে যায় ত একটু বাদামের তৈল দিস । আমি । আচ্ছ । এখন সাড়া শব্দে বুঝিতে পারিতেছি, বাবুদের খাওয়া হইয়া গেল। রমণবাবুর ঘরে আসিবার সময় হইল, আমি এখন বিদায় হই । যা শিখাইয়াছিলে, তার মধ্যে একটা বড় মিষ্ট লাগিয়াছিল—সেই মুখচুম্বনটি । এসো, আর একবার শিখি । তখন সুভাষিণী আমার গলা ধরিল, আমি তার গলা ধরিলাম । গাঢ় আলিঙ্গন পূর্বক পরস্পর মুখচুম্বন করিয়া, গলা-ধরাধরি করিয়া, তুষ্ট জনে অনেকক্ষণ কঁাদিলাম। এমন ভালবাসা কি আর হয় ? সুভাষিণীর মত আর কি কেছ ভালবাসিতে জানে ? মরিব, কিন্তু সুভাষিণীকে ভুলিব না। চতুর্দশ পরিচ্ছেদ আমার প্রাণত্যাগের প্রতিজ্ঞ আমি হারাণীকে সতর্ক করিয়া দিয়া আপনার শয়নগৃহে গেলাম । বাবুদের আহারাদি হইয়া গিয়াছে। এমন সময়ে বড় গণ্ডগোল পড়িয়া গেল। কেহ ডাকে পাখা, কেহ ডাকে জল, কেহ ডাকে ঔষধ, কেহ ডাকে ডাক্তার—এইরূপ হুলস্থল। হারাণী হাসিতে হাসিতে আসিল । আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “গণ্ডগোল কিসের ?" হ। সেই বাবুটি মূৰ্ছ গিয়াছিলেন । আমি । তার পর ?