পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

jo, ఙ్ఞా "রিয়াছিল, ‘শুনিয়াছি, তুমি আমার ননদের বর ” তুমি দণ্ডস্বরূপ তার গালে একটা ঠোন মারিয়া, তাকে একটু অপ্রতিভ দেখিয়া পরিশেষে মুখচুম্বন করিয়াছিলে ? বলিতে বলিতে আমার শরীর অপূৰ্ব্ব আনন্দরসে আপ্লুত হইল—সেই আমার জীবনের প্রথম মুখচুম্বন তার পর স্বভাষিণীকৃত সেই স্বধাবৃষ্টি । ইচ্ছার মধ্যে ঘোরতর অনাবৃষ্টি গিয়াছে । হৃদয় শুকাইয়া মাঠ-ফাটা হইয়াছিল । এই কথা ভাবিতেছিলাম, দেখিলাম, স্বামী ধীরে ধীরে বালিসের উপর মাথা রাখিয়া চক্ষু বুজিলেন । আমি বলিলাম, “আর কিছু জিজ্ঞাসা করিবে ?” তিনি বলিলেন, “না । হয় তুমি স্বয়ং ইন্দির, নখ কোন মায়াবিনী ”ি উনবিংশ পরিচ্ছেদ বিদ্যাপরা দেখিলাম, এক্ষণে অনারাসে আত্মপরিচয় দিতে পারি। আমার স্বামীর নিজ মুখ হইতে আমার পরিচয় ব্যক্ত হইয়াছে, কিন্তু কিছুমাত্র সন্দেহ থাকিতে, আমি পরিচয় দিব না স্থির করিয়ী ছিলাম ; তাই বলিলাম, “এখন আত্মপরিচয় দিব । কামরূপে অামার অধিষ্ঠান । আমি আদ্যাশক্তির মহামন্দিরে তাহার পাশ্বে থাকি । লোকে আমাদিগকে ডাকিনী বলে ; কিন্তু আমরা ডাকিনী নই। আমরা বিদ্যাধরী । আমি মহামায়ার নিকট কোন অপরাপ করিয়াছিলাম, সেই জন্য অভিসম্পাতগ্রস্ত হইয়া এই মানবরূপ ধারণ করিয়াছি । পাচিকাবৃত্তি এবং কুলটাৰ্বত্তিও ভগবতীর শাপের ভিতর । তাই এই সকলও অদৃষ্টে ঘটিয়াছে। এক্ষণে আমার শাপ হইতে মুক্ত হইবার সময় উপস্থিত হইয়াছে । আমি জগন্মাতাকে স্তবে প্রসন্ন করিলে তিনি আজ্ঞা করিয়াছেন যে, মহাভৈরবী দর্শন করিবামাত্র আমি মুক্তিলাভ করিব।” তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কোথায় ।” আমি বলিলাম, “মহাভৈরবীর মন্দির মহেশপুরে, তোমার শ্বশুরবাড়ীর উত্তরে। সে র্তাহাদেরই ঠাকুরবাড়ী। বাড়ীর গায়ে খিড়কি দিয়া যাতায়াতের পথ আছে । চল, মহেশপুরে যাই ।” তিনি ভাবিয়া বলিলেন, “তুমি বুঝি আমার ইন্দিরাই হইবে । কুমুদিনী যদি ইন্দির, তাহা হইলে কি মুখ । পৃথিবীতে তাহা হইলে আমার মত সুখী কে ?” ২যু- ৩৫ ৩৫ ৷ আমি । যেই হুই, মহেশপুরে গেলেই সব গোল মিটিবে । তিনি। তবে চল, কা’ল এখান হইতে যাত্রা করি । আমি তোমাকে কালাদীঘি পার করিয়া দিয়া মহেশপুরে পাঠাইয়া দিয়া নিজে আপাততঃ বাড়ী যাইব । ষোড়হাতে তোমার কাছে এই ভিক্ষা করি যে, তুমি ইন্দিরাই হও, আর কুমুদিনীই হও, আর বিদ্যাধরীই হও, আমাকে ত্যাগ করিও না । আমি । না । আমার শাপাস্ত হইলেও দেবীর কৃপায় আবার তোমায় পাইতে পারিব । তুমি আমার প্রাণাধিক প্রিয় বস্তু । “এ কথাটা ত ডাকিনীর মত নহে ” এই বলিয়া তিনি সদরে গেলেন । সেখানে লোক আসিয়াছিল । লোক আর কেহ নহে, রমণবাবু ; রমণবাবু আমার স্বামীর সঙ্গে আসিয়া আমাকে পুলিন্দা দিয়া গেলেন । আমার স্বামীকে সে সম্বন্ধে যে উপদেশ দিয়াছিলেন, আমাকেও সেই উপদেশ দিলেন । শেষে বলিলেন, “সুভাষিণীকে কি বলিব ?” আমি বলিলাম, “বলিবেন, কাল আমি মহেশপুরে ঘাইব । গেলেই আমি শাপ হইতে মুক্ত হইব ।” স্বামী বলিলেন, “আপনাদের এ সব জানা আছে ন! কি ?” চতুর রমণবাবু বলিলেন, “আমি সব জানি না, কিন্তু আমার স্ত্রী সুভাষিণী সব জানেন ।” বাহিরে আসিয়া স্বামী মহাশয় রমণবাবুকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি ডাকিনী, যোগিনী, বিদ্যাধরী প্রভৃতি বিশ্বাস করেন ?” রমণবাবু রহস্যখান কতক বুঝিয়াছিলেন, বলিলেন, “করি । সুভাষিণী বলেন, কুমুদিনী শাপগ্ৰস্ত বিদ্যাধরী ” স্বামী বলিলেন, “কুমুদিনী কি ইন্দির, আপনার স্ত্রীকে ভাল করিয়া জিজ্ঞাসা করিবেন ।” রমণবাবু আর দাড়াইলেন না । হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেলেন । বিংশ পরিচ্ছেদ বিদ্যাধরীর অন্তৰ্দ্ধান এইরূপ কথাবাৰ্ত্ত হইলে পর আমরা যথাকালে উভয়ে কলিকাতা হইতে ষাত্রা করিলাম । তিনি আমাকে কালাদীঘি নামক সেই হতভাগ্য দাবি পার করিয়া দিয়া নিজালয়ের অভিমুখে যাত্রা করিলেন।