পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 কামিনী বলিল, “কোন দেশে তেলীদের বাড়ী মোষে ঘানি টানে, সেই কথা হচ্ছে।” এই বলিয়। কামিনী পলাইল । বার বার সেই তেলী কথাটা মনে করিয়া দেওয়া ভাল হয় নাঙ্গ – কিন্তু কামিনী কুচরিত্র লোক দেখিতে পারিত না । পিয়ারী ঠানদিদি রাগে অন্ধকার দেখিয়া, আর কথা হিন্দীতে ধমক-ধামক করিতেছেন । s না কহিয়া উ-বাবুর কাছে গিয়া বসিল । আমি তখন কামিনীকে ডাকিয়! *কামিনি, দেখসে আর লো । এইবার পেয়েছেন ।” কামিনী দূর হইতেই বলিল, “অনেক দিন সময় হয়েছে।” তাঁর পর একট। সোরগোল শুনিলাম । আমার স্বামীর আওয়াজ শুনিতে পাইলাম—তিনি এক জনকে আমরা দেখিতে গেলাম ! দেখিলাম, এক জন দাড়ীওয়াল মোগল ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়াছে, উ-বাব তাহাকে তাড়াইবার জন্য ধমক ধামক করিতেছেন, মোগল যাইতেছে না। কামিনী তখন দ্বার হইতে ডাকিয়! বলিল, “মিত্র মহাশয় ! গায়ে কি জোর নাই ?” মিত্র মহাশয় বলিলেন, “আছে বৈ কি ” কামিনী বলিল, “তবে মোগল মিন্‌ষেকে গলাধাক্কা দিয়া ঠেলিয়া দাও না ।" এই বলিবামাত্র মোগল উদ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল। পলায়ন করিবার সময় আমি তাহার দাড়ি পরিলাম, —পরচুলা খসিয়া আসিল । মোগল বলিল, “মরণ আর কি ! তা এ বোকাটি নিয়ে ঘর করবি কি প্রকারে ?" এই বলিয়া সে পলাইল । আমি দাড়িটা ছুড়িয়৷ ফেলিয়া যমুন! দিদিকে উপহার দিলাম । উ-বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন “ব্যাপার কি ?" কামিনী বলিল “ব্যাপার কি ? তুমিই দাড়িটা পরিয়া চারপায়ে ঘাসবনে চরিতে আরম্ভ কর।” উ-বাবু বললেন, “কেন, মোগল জাল ।" কামিনী । কার সাধ্য এমন কথা বলে ? শ্ৰীমতী অনঙ্গমোহিনী দাসী কি জাল হইতে পারে ? আসল দিল্লীর আমদানী একটা ভারি হাসি পড়িয়া গেল । আমি একটু মনঃক্ষুণ্ণ হইয়া চলিয়া আসিতেছিলাম এমন সময়ে পাড়ার ব্রজসুন্দরী দাসী একখানি জীর্ণ বস্ত্র পরিয়া একটি ছেলে কোলে করিয়া উ-বাবুর কাছে গিয়া দুঃখের কান্না কাদিতে লাগিল । “আমি বড় গরীব, খেতে পাই না, ছেলেটি মানুষ করিতে পারি ন৷ ” উবাৰু তাহাকে কিছু দিলেন । আমরা দুই জনে বলিলাম, পিয়ারী ক্লষ্ণ বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী দ্বারের দুই পাশে । সে দ্বার পার হয় কামিনী তাহাকে বলিল, “ভাই ভিখারিণি, জান ত বড়মানুষের কাছে ভিক্ষা পাইলে দ্বারবানদের কিছু ঘুম দিতে হয় ।” ব্রজসুন্দরী বলিল “দ্বারবান কে ? . কামিনী । আমরা দুই জন । বজ ! কত ভাগ চাও ? কামিনী । পেয়েছ কি ? পজ । দশ টাকা । কামিনী ! তবে আমাদের আট টাকা আট টাকা ঘোল টাকা দিয়ে যাও । রজ } লাভ মনদ নয় । ক । তা বড়মানুষের বাড়ীর ভিক্ষায় লাভালাভ ধরিতে গেলে চলিবে কেন ? সময়ে-অসময়ে ঘর থেকেও কিছু দিতে হয় । রজসুন্দরী বড় মানুষের স্ত্রী । পূর্ণ করিয়! ষোল টাক বাহির করিনু দিল । আমরা সেই ষোল টাকা যমুনা ঠাকুরাণীকে দিলাম, বলিলাম, “তোমরা এই টাকায় সনেদশ খাইও ।” স্বামী কহিলেন, “ব্যাপার কি ?" ততক্ষণে ব্রজসুন্দরা ছেলে পঠাইয়। দিয়া বারাণসী পরিয়! আসিয়া বসিলেন । আবার একটা হাসির ঘট। পড়িয়া গেল । উ বাবু বলিলেন “এ কি যাত্রা না কি ?” যমুনা বলিলেন “তা না ত কি ? দেখিতেহু না, কাহার ও কালিয়দমনের পাল, কারও কলঙ্ক ভঞ্জনের পাল কারও মধুর মিলন-কাহারও শুধু পালাই পালাই পাল৷ ” উ-বাবু । শুধু পালাই পালাই পাল কার? যমুনা । কেন, কামিনীর । কেবল পালাই । কামিনী কথায় সকলকে জালাইতে লাগিল । পান, পুষ্প, আতর বিলাষ্টয়া সকলকে তুষ্ট করিতে ছিল । তখন সকলে মিলিয়। তাহাকে ধরিল ; বলিল, “তুষ্ট যে বড় পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস লা ?” কামিনী বলিল, “পালাব না ত কি তোদের ভয় করিব না কি ?” মিত্র মহাশয় বলিলেন, “কামিনি! ভাই, তোমার সঙ্গে কি কথা ছিল ?” কামিনী । কি কথা ছিল মিত্র মহাশয় ?” উ-ব । তুমি নাচিবে । কা। আমি ত নেচেছি । উ। কখন নাচলে ? কা । পুরবেলা । উ। কোথায় নাচলি লো ?