পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૨ সঙ্গে গোপনে চলিয়া গিয়াছ, সে অবধি বুড়ী বড় আস্ফালন করিত ; বলিত, “আমি বরাবর জানি, সে মাচুর্য ভাল নয় ! তার রকমসকম ভাল নয়। কতবার বলেছি যে, এমন কুচরিত্র মানুষ তোমরা রেখ না। তা কাঙ্গালের কথা কে গ্ৰাহ করে ? সবাই কুমুদিনী কুমুদিনী ক’রে অজ্ঞান " এমনই এমনই আরও কথা । তার পর যখন শুনিল যে, আর কাহারও সঙ্গে যায় নাই, আপনার স্বামীর সঙ্গে গিয়াছ, তুমি বড়মানুষের মেয়ে, বড়মানুষের বেী— ঐখন আপনার ঘর পাইয়ছ, তখন বলিল, “আমি ত বরাবর বলছি মা, যে, সে বড়ঘরের মেয়ে, ছোটঘরে কি আর আমন স্বভাব-চরিত্র হয় ? যেমন রূপ, তেমনই যেন লক্ষ্মী ! সে ভাল থাকুক মা ! ভাল থাকুক। আহা, ই দেখ বৌদিদি, আমাকে কিছু পাঠাইয়ে দিতে বলে ।” গৃহিণী সম্বন্ধে সুভাষিণী লিখিল, “তিনি তোমার এই সকল সংবাদ পাইয়া আহলাদ প্রকাশ করিয়াছেন কিন্তু আমাকে ও রমণবাবুকে কিছু ভৎসনাও করিয়াছেন । বলিয়াছেন, “সে ষে এত বড় ঘরের মেয়ে, তা তোর। আমাকে আগে বলিস্নি কেন ? আমি তাকে খুব স্বত্বে রাখিতাম।" আর তোমার স্বামীর কিছু নিন্দ। করিয়াছেন, হোক তার পরিবার অমন রাঁধুনীট নিয়ে যাওয়া তার কিছু ভাল হয় নাই।” - কৰ্ত্তা রামরাম দত্তের কথা খোদ সুভাষিণীর নিজ হাতের হিজিবিজি ; কষ্টে পড়িলাম যে, কৰ্ত্ত। গৃহিণীকে কৃত্রিম কোপের সহিত তিরস্কার করিয়া বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী বলিয়াছিলেন, “তুমি ছল ছুতা করিয়৷ মুনীর রাধুনী টাকে বিদায় করিয়া দিয়াছ।” গৃহিণী বলিলেন, “খুব করিয়াছি, তুমি কি সুন্দর নিয়ে ধুইয়া খাইতে?” কৰ্ত্ত বলিলেন, “তা কি বলুতে পারি, ও কালোরূপ আর রাত-দিন ধ্যান করিতে পারা ষায় না ।” গৃহিণী সেই হইতে শয্যা লইলেন, আর সে দিন উঠিলেন না। কৰ্ত্তী ষে তাহাকে ক্ষেপাইয়াছেন, তাহ। তিনি কিছুতেই বুঝিলেন না। বলা বাহুল্য যে, ব্রাহ্মণঠাকুরাণীটি ও অন্যান্য ভূতাদিগের জন্য কিছু কিছু পঠাইয়া দিলাম। তার পর সুভাষিণীর সঙ্গে আর একবারমাত্র দেখা হইয়াছিল। তার কন্যার বিবাহের সময় বিশেষ অনুরোধে স্বামী আমাকে লইয়া গিয়াছিলেন । সুভাষিণীর কন্যাকে অলঙ্কার দিয়া সাজাইলাম—সৃহিণীকে উপযুক্ত উপযুক্ত উপহার দিলাম—যে যাহার যোগ্য, তাহাকে সেইরূপ দান ও সম্ভাষণ করিলাম। কিন্তু দেখিলাম, গৃহিণী আমার প্রতি.ও আমার স্বামীর প্রতি অপ্রসন্ন। তার ছেলের ভাল খাওয়া হয় না, কথাটা আমাকে অনেকবার শুনাইলেন । আমিও রমণবাবুকে কিছু রাধিয়। খাওয়াইলাম। কিন্তু আর কখন গেলাম না, রাধিবার ভয়ে নয়, গৃহিণীর মনোদুঃখের ভয়ে । গৃহিণী ও রামরাম দত্ত অনেক দিন হইল স্বৰ্গী রোহণ করিয়াছেন । কিন্তু আর যাওয়৷ ঘটে নাই । আমি সুভাষিণীকে ভুলি নাই । ইহজন্মে ভুলিব না । সুভাষিণীর মত এ সংসারে আর কিছু দেখিলাম না। সমাপ্ত