পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮ দুর্গসন্মুখে উপস্থিত হইলেন । রাজপুত্র জিজ্ঞাসা করিলেন,—“তুমি এক্ষণে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিবে কি প্রকারে ? এত রাত্রে অবস্ত ফটক বন্ধ হইয়া থাকিবে ।” বিমল কহিলেন,—“চিন্তা করিবেন না ; আমি তাহার উপায় স্থির করিয়াই বাট হইতে যাত্রা করিয়াছিলাম * রাজপুত্র হাস্ত করিয়া কহিলেন, “লুকান পথ আছে ?” বিমলাও হাস্ত করিয়া উত্তর করিলেন,—“যেখানে চোর, সেইখানেই সিদ্ধ ” ক্ষণকাল পরে পুনৰ্ব্বার রাজপুত্ৰ কহিলেন,-- *বিমলা, এক্ষণে আর আমার যাইবার প্রয়োজন নাই । আমি দুর্গপাশ্বস্থ এই আম্রকাননমধ্যে তোমার আপেক্ষা করিব, তুমি আমার হইয়। অকপটে তোমার সর্থীকে মিনতি করিও, পক্ষ পরে হয়, মাস পরে হয়, আর একবার আমি তাহাকে দেখিয়া চক্ষু জুড়াইব ।” বিমলা কহিলেন;- “এ আম্রকানন ও নির্জন স্থান নহে,— আপনি আমার সঙ্গে আমুন ।” জ। কত দূর যাইব ? বি । দুর্গমধ্যে চলুন । রাজকুমার কিঞ্চিৎ ভাবিয়া কছিলেন,—“বিমলী, এ উচিত হয় না । দুর্গস্বামীর অনুমতি ব্যতীত আমি “ সুগমধ্যে যাইব না।” বিমলা কহিলেন,—“চিন্তা কি ?” রাজকুমার গৰ্ব্বিতবচনে কহিলেন;–“রাজপুত্রেরা কোন স্থানে যাইতে চিন্ত করে না । কিন্তু বিবেচনা করিয়া দেখ, অম্বরপতির পুত্রের কি উচিত যে, দুর্গস্বামীর অজ্ঞাতে চেীরের ন্যায় দুর্গপ্রবেশ করে ?” বিমলা কহিলেন, -“আমি আপনাকে ডাকিয়? লইয়া যাইতেছি।” রাজকুমার কহিলেন,—“মনে করিও না যে, আমি তোমাকে পরিচারিক জ্ঞানে অবজ্ঞা করিতেছি । কিন্তু বল দেখি, দুর্গমধ্যে আমাকে আহবান করিয়া লইয়া যাইবার তোমার কি অধিকার ?” বিমলাও ক্ষণেক কাল চিস্তা করিয়া কহিলেন,— “আমার কি অধিকার, তাহ না শুনিলে আপনি যাইবেন না ?” উত্তর—“কদাপি যাইব না।” বিমলা তখন রাজপুত্রের কর্ণে লোল হইয়া একটি কথা বলিলেন । - রাজপুত্ৰ কহিলেন;–“চলুন ।” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী বিমলা কহিলেন,—“যুবরাজ ! আমি দাসী, দাসীকে "চল" বলিবেন ।” যুবরাজ বলিলেন,-"তাই হউক ৷” যে রাজপথ অতিবাহিত করিয়া বিমলা যুবরাজকে লইয়। যাইতেছিলেন, সে পথে দুর্গদ্বারে যাইতে হয় । দুর্গের পাশ্বে আম্রকানন, সিংহদ্বার হইতে কানন অদৃশু । ঐ পথ হইতে যথা আমোদর অন্তঃপুরপশ্চাৎ প্রবাহিত আছে, সে দিকে যাইতে হইলে এই আম্রকাননমধ্য দিয়া যাইতে হয়। বিমলা এক্ষণে রাজবক্স ত্যাগ করিয়া রাজপুত্রসঙ্গে এই অস্ত্রিকাননে প্রবেশ করিলেন । আম্রকাননে প্রবেশাবধি উভয়ে পুনৰ্ব্বার সেইরূপ শুষ্কপর্ণভঙ্গ সহিত মনুষ্যপদধবনির হ্যায় শব্দ শুনিতে পাইলেন । বিমল কহিলেন,-“আবার ” রাজপুত্ৰ কহিলেন,—“তুমি পুনরপি ক্ষণেক দাড়াও, আমি দেখিয়া আসি ।" রাজপুত্ৰ আসি নিস্কোযিত করিয়া যে দিকে শব্দ হইতেছিল, সেই দিকে গেলেন ; কিন্তু কিছুই দেখিতে পাইলেন না । আম্রকাননতলে নানা প্রকার অরণ্য লতাদির সমৃদ্ধিতে এমন বন হইয়াছিল এবং বৃক্ষাদির ছায়াতে রাত্রে কাননমধ্যে - এমন অন্ধকার হইয়াছিল যে, রাজপুত্র যেখানে যান, তাহার অগ্ৰে অধিক দূর দেখিতে পান না। রাজপুত্ৰ এখনও বিবেচনা করিলেন যে, পশুর পদচারণে শুঞ্চপত্রভঙ্গশব্দ শুনিয়া থাকিবেন । যাহাই হউক, সন্দেহ নিঃশেষ করা উচিত বিবেচনা করিয়া রাজকুমার অসিহস্তে আম্রবৃক্ষের উপর উঠিলেন, বৃক্ষের অগ্রভাগে আরোহণ করিয়া ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন । বহুক্ষণ নিরীক্ষণ করিতে করিতে দেখিতে পাইলেন যে, এক বৃহৎ আম্রবৃক্ষের তিমিরবৃত শাখাসমষ্টিমধ্যে দুই জন মনুষ্য বসিয়া আছে ; তাহাদের উষ্ণীষে চন্দ্ররশ্মি পড়িয়াছে, কেবল তাঁহাই দেখা যাইতেছিল ; অবয়ব ছায়ায় লুক্কায়িত ছিল । রাজপুত্র উত্তমরূপে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন, উষ্ণীযমস্তকে মনুষ্য বটে, তাহার সন্দেহ নাই । তিনি উত্তমরূপে বৃক্ষটি লক্ষিত করিয়া রাখিলেন যে, পুনরায় আসিলে না ভ্রম হয় । পরে ধীরে ধীরে বৃক্ষ হইতে অবতরণ করিয়া নিঃশব্দে বিমলার নিকট আসিলেন । যাহা দেখিলেন, তাহা বিমলার নিকট বর্ণনা করিয়া কহিলেন, “এ সময়ে যদি দুইটা বর্শ থাকিত ।” বিমলা কহিলেন,-“বশ লইয়া কি করিবেন ?" জ। তাহা হইলে ইহার কে জানিতে পারিতাম ; লক্ষণ ভাল বোধ হইতেছে না । উষ্ণীষ দেখিয়া বোধ