পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

фо কখন আপনাকে বশ আনিয়া দিতাম না, আমি মহাপাতকিনী, আজ ষে কৰ্ম্ম করিলাম, বহু কালেও ইহার প্রায়শ্চিত্ত হইবে না।” যুবরাজ কহিলেন,—“শক্রবধে ক্ষোভ কি, শক্রবধ ধৰ্ম্মে আছে ।” বিমলা কহিলেন,-"যোদ্ধাযু করুক, আমরা স্ত্রীজাতি ” ক্ষণপরে বিমল কহিলেন,—“রাজকুমার । আর বিলম্বে অনিষ্ট আছে । দুর্গে চলুন, আমি দ্বার খুলিয়৷ রাখিয়া আসিয়াছি ।” উভয়ে দ্রুতগতি দুর্গমূলে আসিয়া, প্রথমে বিমল পশ্চাৎ রাজপুত্র প্রবেশ করিলেন । প্রবেশকালে রাজপুত্রের হৃৎকম্প ও পদকম্প হইল। শতসহস্ৰ সেনার সমীপে যাহার মস্তকের একটি কেশও স্থানভ্রষ্ট হয় নাই, তাহার এ সুখের অলিয়ে প্রবেশ করিতে হৃৎকম্প কেন ? বিমলা পূৰ্ব্ববৎ গবাক্ষদ্বার রুদ্ধ করিলেন, পরে রাজপুত্রকে নিজ শয়নাগারে লইয়া গিয়া কহিলেন, *আমি আসিতেছি, আপনাকে ক্ষণেক এই পালঙ্কের উপর বসিতে হইবে। যদি অদ্য চিন্ত না থাকে, তবে ভাবিয়া দেখুন যে, ভগবানের আসন বটপত্র মাত্র ” বিমলা প্রস্থান করিয়৷ ক্ষণপরেই নিকটস্থ কক্ষের স্বার উদঘাটন করিলেন ।

  • বুবরাজ, এই দিকে অসিয়া একটা নিবেদন গুমুন " যুবরাজের হৃদয় আবার কাপে, তিনি পালঙ্ক হইতে উঠিয়া কক্ষান্তরমধ্যে বিমলার নিকট গেলেন ।

বিমলা তৎক্ষণাৎ বিদ্যুতের দ্যায় তথা হইতে সরিয়া গেলেন, যুবরাজ দেখিলেন, স্ববাসিত কক্ষ ; রজত প্রদীপ জ্বলিতেছে, কক্ষপ্রান্তে অবগুণ্ঠনবতী রমণী—সে ভিলোত্তম ! এমত বিবেচনা

অষ্টদশ পরিচ্ছেদ চতুরে চতুরে বিমলা আসিয়া নিজ কক্ষে পালঙ্কের উপর বসিলেন । বিমলার মুখ অতি হৰ্ষ-প্রফুল্ল, তিনি গতিকে মনোরথ সিদ্ধ করিয়াছেন । কক্ষমধ্যে প্রদীপ জলিতেছে, সম্মুখে মুকুর, বেশভূষা ষেরূপ প্রদোষকালে ছিল, সেইরূপই রহিয়াছে, বিমলা দর্পণাভ্যস্তরে মুহূৰ্ত্তজন্ত নিজ প্রতিমূৰ্ত্তি নিরীক্ষণ বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী করিলেন । প্রদোষকালে ষেরূপ কুটিল কেশবিন্যাস করিয়াছিলেন, তাহা সেইরূপ রহিয়াছে, বিশাল লোচনমূলে সেইরূপ কজ্জলপ্রভা, অধরে সেইরূপ তাম্বলরাগ, সেইরূপ কর্ণাভরণ পীবরাংসসৎসক্ত হইয়া তুলিতেছে । বিমল উপাধানে পৃষ্ঠ রাখিয়া অৰ্দ্ধশয়ন অৰ্দ্ধ উপবেশন করিয়া রহিয়াছেন ; বিমলা মুকুরে নিজ লাবণ্য দেখিয়া হাস্ত করিলেন । বিমলা এই ভাবিয়া হাসিলেন ষে, দিগগজ পণ্ডিত নিতান্ত নিষ্কারণে গৃহত্যাগী হইতে চাহেন নাই । বিমলা জগৎসিংহের পুনরাগমন প্রতীক্ষা করিয়া আছেন, এমত সময়ে আম্রকাননমধ্যে গম্ভীর তুর্য্যনিনাদ হইল। বিমলা চমকিয়া উঠিলেন এবং ভীত হইলেন, সিংহদ্বার ব্যতীত আম্রকাননে কখনই তুর্য্যধ্বনি হইয়া থাকে না, এত রাত্রেই বা তুর্য্যধ্বনি কেন হয় ? বিশেষ সেই রাত্রে মন্দিরে গমনকালে ও প্রত্যাগমনকালে যাহা দেখিয়াছেন, তৎসমুদয় স্মরণ হইল । বিমলার তৎক্ষণাৎ বিবেচনা হইল, এ তুর্য্যধ্বনি কোন অমঙ্গল ঘটনার পূৰ্ব্বলক্ষণ । অতএব সশঙ্কচিত্তে তিনি বা তায়নসন্নিধানে গিয়া আম্রকানন প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন । কাননমধ্যে বিশেষ কিছুই দেখিতে পাইলেন না । বিমলা ব্যস্তচিত্ত্বে নিজ কক্ষ হইতে নির্গত হইলেন । যে শ্রেণীতে তাহার কক্ষ, তৎপরেই প্রাঙ্গণ, প্রাঙ্গণ-পরেই আর এক কক্ষশ্রেণী, সেই শ্রেণীতে প্রাসাদোপরি উঠিবার সোপান আছে। বিমলা কক্ষত্যাগ পূর্বক সেই সোপানাবলী আরোহণ করিয়া ছাদের উপরে উঠিলেন, ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন, তথাপি কাননের গভীর ছায়ান্ধকার জন্য কিছুই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না । বিমলা দ্বিগুণ উদ্বিগ্নচিত্তে ছাদের আলিসার নিকটে পেলেন, তদুপরি বক্ষঃস্থাপম পূৰ্ব্বক মুখ নত করিয়া দুর্গমূল পৰ্য্যস্ত দেখিতে লাগিলেন, কিছুই দেখিতে পাইলেন না। শু্যামোজ্জল শাখাপল্লবসকল স্নিগ্ধ চন্দ্রকরে প্লাবিত, কখন কখন সুমন পবনান্দোলনে পিঙ্গলবর্ণ দেখাইতেছিল, কাননভলে ঘোরান্ধকার, কোথাও কোথাও শাখাপত্রাদির বিচ্ছেদে চন্দ্রীলোক পতিত হইয়াছে, অমোদরের স্থিরামুমধ্যে নীলাম্বর চন্দ্র ও তার সহিত প্রতিবিম্বিত, দূরে অপর পারস্থিত অট্টালিক সকলের গগনস্পর্শী মূৰ্ত্তি, কোথাও বা তৎপ্রাসাদস্থিত প্রহরীর অবয়ব। এতদ্ব্যতীত আর কিছুই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না । বিমলা বিষঃমনে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিতে উষ্ঠত হইলেন, এমত সময়ে তাহার অকস্মাৎ বোধ হইল, ষেন কেহ পশ্চাৎ হইতে র্তাহার পৃষ্ঠদেশ অঙ্গুলি