দুর্গেশনন্দিনী বলিলেন, “সেখজী, তুমি বড় ঘামিতেছ ; ; একবার আমার বন্ধন খুলিয়া দাও যদি, তবে আমি তোমাকে বাতাস করি পরে আবার বাধিয়া দিও।” সেখজীর কপালে ঘৰ্ম্মবিন্দুও ছিল না, কিন্তু বিমল৷ অবশু ঘৰ্ম্ম না দেখিলে কেন বলিবে ? অার এ হাতের বাতাস কার ভাগ্যে ঘটে ? এই ভাবিয়া প্রহরী তখনই বন্ধন খুলিয়া দিল । বিমলা কিয়ৎক্ষণ ওড়না দ্বার। প্রহরীকে বাতাস দিয়া স্বচ্ছন্দে ওড়ন। নিজ অঙ্গে পরিধান করিলেন, পুনৰ্ব্বন্ধনের নামও করিতে প্রহরীর মুখ ফুটিল না । তাহার বিশেষ কারণও ছিল ; ওড়নার বন্ধনরজ্জ্বত্বদশ ঘুচিয়। যখন তাহ। বিমলার অঙ্গে শোভিত হইল, তখন তাঙ্গার লাবণ্য আরও প্রদীপ্ত হইল : যে লাবণ্য মুকুরে দেখিয় বিমল আপনা-আপনি হাসিয়াছিলেন, সেই লাবণা দেখিয় প্রহরা নিস্তব্ধ হইয়। রহিল । বিমল কহিলেন “সেখঙ্গী, তোমার স্ত্রী তোমাকে কি ভালবাসে না ?” সেখ জী কিঞ্চিত বিস্মিত হইয়। কহিল, “কেন ?" বিমল কহিলেন, “ভালবাসিলে এ বসন্তকালে ( তখন ঘোর গ্রীষ্ম, বর্ষ। আগত ) কোন প্রাণে তোম|হেন স্বামীকে ছাড়ির আছে ?" সেথ জী এক দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিল। বিমলার তৃণ হইতে অনর্গল অস্ত্র বাহির হইতে লাগিল । “সেখ জী ! বলিতে লজ্জ করে, কিন্তু তুমি যদি আমার স্বামী হইতে, তবে আমি কখন তোমাকে যুদ্ধে আসিতে দিতাম না ।” প্রহরী আবার নিশ্বাস ছাড়িল । বিমল কহিতে লাগিলেন, “আহা ! তুমি যদি আমার স্বামী হ’তে “ বিমলাও এই বলিয়। একটি ছোট রকম নিশ্বাস ছাড়িলেন, তাহার সঙ্গে সঙ্গে নিজ ভক্ষু-কুটিল কটাক্ষ বিসর্জন করিলেন ; প্রহরার মাথা ঘুরিয়৷ গেল । সে ক্রমে ক্রমে সরিয়! সরিয়| বিমলার আরও নিকটে বসিল, বিমলাও আর একটু তাছার দিকে সরিয়া বসিলেন । বিমলা প্রহরীর করে কোমল করপল্লব স্থাপন করিলেন । প্রহরী হতবুদ্ধি হইয়। উঠিল । বিমল কহিতে লাগিলেন, “বলিতে লজ্জা করে, কিন্তু তুমি যদি রণজয় করিয়া যাও, তবে আমাকে কি তোমার মনে থাকিবে ?" প্র । তোমায় মনে থাকিবে না ? বি । মনের কথা তোমাকে বলিব ? প্র । বল না— বল । २झ--dः বি । না, বলিব না, তুমি কি বলিবে ? প্র । না না-বল, আমাকে ভূত্য বলিয়া জানিও । বি । আমার মনে বড় ইচ্ছা হইতেছে, এ পাপ স্বামীর মুখে কালি দিয়া তোমার সঙ্গে চলিয়া যাই। আবার সেই কটাক্ষ । প্রহরী আহলাদে নাচিয়া डेठिंठा । প্র । যাবে ? দিগগজের মত পণ্ডিত অনেক আছে ! বিমল কহিলেন “লইয়া যাও ত যাই ।” প্র । তোমাকে লইয়া যাইব না ? তোমার দাস হইয়। থাকিব । “তোমার এ ভালবাসার পুরস্কার কি দিব ? ইঙ্গই গ্রহণ কর ।” এই বলিয়। বিমল কণ্ঠস্ত স্বর্ণহার প্রহরীর কণ্ঠে পরাইলেন, প্রহরী সশরীরে স্বর্গে গেল। বিমল, কহিতে লাগিলেন, “আমাদের শাস্ত্রে বলে, একের মালা অক্টোর গলায় দিলে বিবাহ হয় ।” হাসিতে প্রহরীর কাল দাড়ির অন্ধকারমধ্য হইতে দাত বাহির হইয়। পড়িল ; বলিল, “তবে ত তোমার সাথে আমার সাদি হইল।” “শুইল বৈ আর কি ?” বিমল ক্ষণেককাল নিস্তব্ধে চিস্তামল্পের ন্যায় রহিলেন । প্রহরী কহিল, “কি ভাবিতেছ ?” বি । ভাবিতেছি, আমার কপালে বুঝি সুখ নাই, তোমরা কুৰ্ম্মী জয় করিয়া যাইতে পারিবে না । প্রহরা সদৰ্পে কহিল, “তাহাতে আর কোন সন্দেহ নাই, এতক্ষণ জয় হইল ।" -- د يؤه، বিমল কহিলেন, “উহু, ইহার এক গোপন কথা আছে ।” প্রহরী কঠিল, “কি ?" বি । তোমাকে সে কথা বলিয়া দিই, যদি তুমি কোনরূপে দুর্গ জয় করাইতে পার । প্রহরী ষ্টা করিয়া শুলিতে লাগিল । বিমলা কথা বলিতে সঙ্কোচ করিতে লাগিলেন । প্রহরী ব্যস্ত হইয়া কহিল, “ব্যাপার কি ?” বিমলা কহিলেন, “তোমরা জান ন! এই দুর্গপাশ্বে জগংসিংহ দশ সহস্র সেনা লইয়। বসিয়া আছে । তোমরা আজ গোপনে আসিবে জানিয়া, সে আগে আসিয়া বসিয়া আছে ; এখন কিছু করিবে না, তোমরা দুর্গজয় করিয়া যখন নিশ্চিন্ত থাকিবে, তখন আসিয়া ঘেরাও করিবে ।” - প্রহরী ক্ষণকাল অবাকৃ হইয়। রহিল ; পরে বলিল, £4সে কি o”
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।