পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বি । শুনিয়াছি । প্রহরী আহলাদে পরিপূর্ণ হইয়া কহিল—“জানু, আজ তুমি আমাকে বড়লোক করিলে ; আমি এখনই গিয়া সেনাপতিকে বলিয়া আসি ; এমন জরুরি খবর দিলে শিরোপা পাইব, তুমি এইখানে বসে, আমি শীঘ্র আসিতেছি ।” প্রহরীর মনে বিমলার প্রতি তিলাৰ্দ্ধ সন্দেহ ছিল न। । বিমল বলিলেন, “তুমি আসিবে ত?” প্র । আসিব বৈ কি, এই আসিলাম । বি । আমাকে ভুলিবে না ? প্র । না—না । বি । দেখ, মাথা খাও । “চিন্তা কি ?” বলিয়া প্রহরী উৰ্দ্ধশ্বাসে দৌড়িয়া গেল । যেই প্রহরী অদৃষ্ঠ হইল, অমনি বিমলাও উঠিয়৷ এই কথা দুৰ্গস্থ সকলেই জানে, আমরাও পলাইলেন । ওসমানের কথা যথার্থ “বিমলার কটাক্ষকেই ভয় ।” বিংশ পরিচ্ছেদ প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে বিমুক্তিলাভ করিয়া বিমলার প্রথম কাৰ্য্য বীরেন্দ্রসিংহকে সংবাদ-দান ; উৰ্দ্ধশ্বাসে বীরেন্দ্রের শয়নকক্ষাভিমুখে ধাবমান হইলেন। অৰ্দ্ধপথ যাইতে না যাইতেই “আল্লা—ল্ল—হো” পাঠানসেনার চীৎকারধ্বনি র্তাহার কর্ণে প্রবেশ করিল। “এ কি পাঠানসেনার জয়ধ্বনি ?” বলিয়া বিমল। ব্যাকুলিত হইলেন। ক্রমে অতিশয় কোলাহল শ্রবণ করিতে পাইলেন ; বিমলা বুঝিলেন, দুর্গবাসীর জাগরিত হইয়াছে । ব্যস্ত হইয়া বীরেন্দ্রসিংহের শয়নকক্ষে গমন করিয়া দেখেন যে, কক্ষমধ্যে অত্যস্ত কোলাহল ; পাঠানসেনা দ্বার ভগ্ন করিয়া কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়াছে ; বিমলা উকি মারিয়া দেখিলেন যে, বীরেন্দ্রসিংহের মুষ্টি দৃঢ়বদ্ধ, হস্তে নিস্কোষিত অসি, অঙ্গে রুধিরধারা । তিনি উন্মত্তের ন্যায় অসি ঘূর্ণিত করিতেছেন। র্তাহার যুদ্ধোন্তম বিফল হইল ; এক জন মহাবল পাঠানের দীর্ঘ তরবারির আঘাতে বারেন্দ্রের অসি হস্তচু্যত হইয়া দুরে নিক্ষিপ্ত হইল ; বীরেন্দ্ৰসিংহ বন্দী बकिबन्नरव्छब्र अंशांवली বিমলা দেখিয়া শুনিয়া হতাশ হুইয়া তথা হইতে প্রস্থান করিলেন । এখনও তিলোত্তমাকে রক্ষা করিবার সময় আছে । বিমলা তাহার কাছে দৌড়িয়া গেলেন । পথিমধ্যে দেখিলেন, তিলোত্তমার কক্ষে প্রত্যাবর্তন করা দুঃসাধ্য ; সৰ্ব্বত্র পাঠান সেনা ব্যাপিয়াছে। পাঠানদিগের যে দুর্গ জয় হইয়াছে, তাহাতে আর সংশয় নাই । বিমল দেখিলেন, তিলোত্তমার ঘরে যাইতে পাঠানসেনার হস্তে পড়িতে হয়, তিনি তখন ফিরিলেন । কাতর হইয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন, কি করিয়া জগতসিংহ আর তিলোত্তমাকে এই বিপত্তিকালে সংবাদ দিবেন । বিমলা একটা কক্ষমধ্যে দাড়াইয়া চিস্ত করিতেছেন, এমত সময়ে কয়েক জন সৈনিক অন্য ঘর লুঠ করিয়া, সেই ঘর লুঠিতে আসিতেছে দেখিতে পাইলেন । বিমলা অত্যন্ত শঙ্কিত হইয়া ব্যস্তে কক্ষস্থ একটা সিন্দুকের পার্থে লুকাইলেন । সৈনিকেরা আসিয়া ঐ কক্ষস্থ দ্রব্যজাত লুঠ করিতে লাগিল । বিমল দেখিলেন, নিস্তার নাই, লুঠেরা সকল যখন ঐ সিন্দুক খুলিতে আসিবে, তখন তাহাকে অবশ্ব ধৃত করিবে । বিমল সাহসে নির্ভর করিয়া কিঞ্চিৎকাল অপেক্ষ করিলেন এবং সিন্দুকপাশ্ব হইতে সাবধানে সেনাগণ কি করিতেছে, দেখিতে লাগিলেন । বিমলার অতুল সাহস ; বিপৎকালে সাহস বৃদ্ধি হইল। যখন দেখিলেন যে, সেনাগণ নিজ নিজ দস্থ্যবৃত্তিতে ব্যাপৃত হইয়াছে, তখন নিঃশব্দপদবিক্ষেপে সিন্দুকপাশ্ব হইতে নির্গত হইয়া পলায়ন করিলেন। সেনাগণ লুঠে ব্যস্ত, তাহাকে দেখিতে পাইল না । বিমলা প্রায় কক্ষদ্বার পশ্চাৎ করেন, এমন সময়ে এক জন সৈনিক আসিয়া পশ্চাৎ হইতে র্তাহার হস্তধারণ করিল। বিমল ফিরিয়া দেখিলেন, রহিম সেখ ! সে বলিয়া উঠিল, “তবে পলাতক । আর কোথায় পলাবে ?” দ্বিতীয়বার রহিমের করকবলিত হওয়াতে বিমলার মুখ শুকাইয় গেল ; কিন্তু সে ক্ষণকাল মাত্ৰ ; তেজস্বিনী বুদ্ধির প্রভাবে তখনই মুখ আবার হর্ষোৎ ফুল্প হইল। বিমল মনে মনে কহিলেন, “ইহারই স্বারা স্বকৰ্ম্ম উদ্ধার করিব।” তাহার কথার প্রত্যুভরে কহিলেন “চুপ কর আস্তে, বাহিরে আইস” এই বলিয়। বিমলা রহিম সেখের ইস্ত ধরিয়া বাহিরে টানিয়া আনিলেন ; রহিমও ইচ্ছাপূর্বক আসিল । বিমল তাহাকে নির্জনে পাইয়। বলিলেন, “ছি ছি ছি! তোমার এমন কৰ্ম্ম । আমাকে রাখিয়া