পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুৰ্গেশনন্দিনী অঙ্গচ্ছেদ হইতে লাগিল। রাজপুত্রের অঙ্গে চতুর্দিক হইতে বৃষ্টিধারাবৎ অস্ত্রাঘাত হইতে লাগিল । আর হস্ত চলে না, ক্রমে ভূরি ভূরি আঘাতে শরীর হইতে রক্তপ্রবাহ নিৰ্গত হইয়া বাহু ক্ষীণ হইয়া আসিল ; মস্তক ঘুরিতে লাগিল ; চক্ষে ধূমাকীর দেখিতে লাগিলেন ; কর্ণে অস্পষ্ট কোলাহলমাত্র প্রবেশ করিতে লাগিল । “রাজপুঞ্জকে কেত প্রাণে বধ করিও না, জীবিতা বস্থায় ব্যাঘ্রকে পিঞ্জরাবদ্ধ করিতে হইবে।” এই কথার পর আর কোন কথ। রাজপুত্ৰ শুনিতে পাই লেন না, ওসমান গঁ। এই কথা বলিয়াছেন । রাজপুত্রের বাহুযুগল শিথিল হইয়। লম্বমান হইয়। পড়িল ; বলহীন মুষ্টি হইতে আসি ঝঞ্চনা সহকারে ভূতলে পড়িয়া গেল ; রাজপুত্র বিচেতন হুইয়। স্বকর নিহত এক পাঠানের মৃতদেহের উপর মূচ্ছিত হইয়। পড়িলেন । বিংশতি পাঠান রাজপুত্রের উষ্ণষের রত্ন অপহরণ করিতে ধাবমান হইল । ওসমান বজ গম্ভীরস্বরে কহিলেন, “কেহ রাজপুত্রকে স্পর্শ করিও না ।” সকলে বিরত হইল । ওসমান গা ও অপর এক জন সৈনিক তাহীকে ধরাধরি করিয়া পালঙ্কের উপর উঠাইয়া শয়ন করাইলেন । জগতসিংহ চারিদণ্ড পূৰ্ব্বে তিলদ্ধ জঙ্গ আশা করিয়াছিলেন যে, তিলেক্তমাকে বিবাহ করিয়| এক দিন সেক্ট পলিঙ্কে তিলেভমার সহিত বিরাজ করিবেন- -সে পালঙ্ক তাহার মৃত্যুশয্যাপ্রায় হইল । জগতসিংহকে শয়ন করাষ্টয়। ওসমান গ৷ সৈনিকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন -"স্ত্রীলোকেরা কৈ ?” ওসমান বিমল ও তিলোত্তমাকে দেখিতে পাইলেন না ; যখন দি তীয়বার সেনাপ্রবাহ কক্ষমধ্যে প্রধাবিত হয়, তখন বিমল ভবিষ্যৎ বুঝিতে পারিয়াছিলেন, উপায়াস্তরবিরহে পালঙ্কতলে তিলোত্তমাকে লইয়া লুক্কায়িত হইয়াছিলেন, কেহ তাহ দেখে নাই । | 6ھ ওসমান তাহাদিগকে না দেখিতে পাইয়া কছিলেন, “স্ত্রীলোকেরা কোথায় ? তোমরা তাবৎ তুর্গমধ্যে অন্বেষণ কর. বাদী ভয়ানক বুদ্ধিমতী ; সে যদি পলায়, তবে আমার মন নিশ্চিন্তু থাকিবে না, কিন্তু সাবধান, বারেন্দ্রের কন্যার প্রতি যেন কোন অত্যাচার না হয় ।” সেনাগণ কতক কতক সর্গের অঙ্গ্যান্য ভাগ অন্বেষণ করিতে গেল ! ই এক জন কক্ষমধ্যে অনুসন্ধান করিতে লাগিল ৷ এক জন অন্য এক দিক্‌ দেখিয়া আলে| লষ্টয়া পালঙ্ক তলমধ্যে দৃষ্টিপাত করিল। যাহা সন্ধান করিতেছিল, তাহ দেখিতে পাষ্টয়া কহিল, “এইখানেই আছে ।” ওসমানের মুখ হৰ্ষপ্রফুল্প হইল। কহিলেন;– “তোমরা বাহিরে আইস, কোন চিন্ত নাই ।” বিমল অগ্রে বাহির হইয়। তিলোত্তমাকে বাহিরে আনিয়া বসাইলেন । তখন তিলোত্তমার চৈতষ্ঠ হইতেছে --বসিতে পারিলেন । ধীরে ধীরে বিমলাকে জিজ্ঞাসা করিলেন —“আমরা কোথায় আসিয়াছি ?” বিমলা কাণে কাণে কহিলেন—“কোন চিন্তা নাই, অবগুণ্ঠন দিয়া বসে ।" যে ব্যক্তি অনুসন্ধান করিয়। বাহির করিয়াছিল, সে ওসমানকে কহিল, “জনাব ! গোলাম খুজিয়৷ বাহির করিয়াছে ।" ওসমান কহিলেন,--“তুমি পুরস্কার প্রার্থনা করিতেছ ? তোমার নাম কি ?” সে কহিল, “গোলামের নাম করিমবক্স । কিন্তু । করিমবক্স বলিলে কেহ চেনে না। পূৰ্ব্বে আমি মোগল সৈন্য ছিলাম, এ জন্ত সকলে রহস্তে আমাকে মোগল সেনাপতি বলিয়৷ ডাকে ।” বিমল শুনিয়া শিহরিয়! উঠিলেন । অভিরামস্বামীর জ্যোতির্গণন। তাহার স্মরণ হইল । ওসমান কহিলেন,--"আচ্ছ, স্মরণ থাকিবে ।”