পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুর্গেশনন্দিনী ওসমান আয়েষাকে মাতৃগৃহ পৰ্য্যন্ত রাখিয়া আসিয় বিষঃ-মনে নিজ আবাস-মন্দিরমধ্যে প্রত্যাগমন করিলেন । আর জগতসিংহ ? বিষম জরবিকারে অচেতন শয্যা শায়ী হইয়া রহিলেন । - 净 তৃতীয় পরিচ্ছেদ তুমি না তিলোত্তম ? পরদিন প্রদোষকালে জগতসিংহের অবস্থানকক্ষে আয়েষা, ওসমান, আর চিকিৎসক পূৰ্ব্ববৎ নিঃশব্দে বসিয়া আছেন ; আয়েয। পালঙ্কে বসিয়| স্বহস্তে ব্যজনাদি করিতেছেন ; চিকিৎসক ঘন ঘন জগৎসিংহের নাড়ী দেখিতেছেন ; জগতসিংহ অচেতন । চিকিৎসক কহিয়াছেন, সেই রালে জরত্যাগের সময়ে জগতসিংহের লয় হইবার সম্ভাবন, যদি সে সময়ে শুধরাইয়া যান, তবে আর চিন্ত থাকিবে ন--নিশ্চিত রক্ষ পাইবেন । জরবিশ্রামের সময় আগত, এই জন্ত সকলেই বিশেষ ব্যগ্ৰ চিকিৎসক মুহম্মুহুঃ নাড়ী দেখিতেছেন, “নাড়ী ক্ষীণ ” “আর? ক্ষীণ”—“কিঞ্চিৎ সবল” ইত্যাদি মুহমুহুঃ অন্টশদে বলিতেছেন । সহসা চিকিৎসকের মূখ কালিমাপ্রাপ্ত কষ্টল । বলিলেন,--“সময় আগত ” আয়েষ ও ওসমান নিম্পন্দ হইয়া শুনিতে লাগিলেন, হকিম নাড়ী ধরিয়া রহিলেন । কিয়ৎক্ষণ পরে চিকিৎসক কহিলেন –“গতিক মন্দ ” আয়েষার মুখ আরও স্নান হইল । হঠাৎ জগতসিংহের মুখে বিকট ভঙ্গী উপস্থিত হইল : মূখ শ্বেতবর্ণ হইয়া আসিল । হস্তে দৃঢ়মুষ্টি বাধিল ; চক্ষে 'অলৌকিক স্পন্দন হুইতে লাগিল । আমেষ বুঝিলেন, কৃতান্তের গ্রাস পূর্ণ হইতে আর বিলঙ্গ নাই । চিকিৎসক হস্তস্তিত পাত্রে ঔষপ লইয়। বসিয়াছিলেন ; এরূপ লক্ষণ দেখিবামারই অঙ্গুলি দ্বারা রোগীর মুখব্যাদন করাইয়। ঐ ঔষধ পান করাইলেন । ঔষধ ওষ্ঠোপান্ত হইতে নির্গত হইব। পড়িল, কিঞ্চিৎ উদরে গেল । উদরে প্রবেশমাত্রই রোগীর দেহের অবস্ত পরিবর্তিত হইতে লাগিল। ক্রমে মুখের বিকটভঙ্গী দূরে গিয়া কান্তি স্থির হইল, বর্ণের অস্বাভাবিক শ্বেতভাব বিনষ্ট হইয়া ক্রমে রক্তসঞ্চার হইতে লাগিল ; হস্তের মুষ্টি শিথিল হইল ; চক্ষু স্থির হইয় পুনৰ্ব্বার মুদ্রিত হইল । হকিম অত্যন্ত মনোভিনিবেশ পূৰ্ব্বক নাড়ী দেখিতে লাগিলেন । অনেকক্ষণ দেখিয়া সহৰ্ষে কহিলেন;– আর চিন্তা নাই—রক্ষা পাইয়াছেন ।” ২য় – ৬ 8 Ꮌ ওসমান জিজ্ঞাসা করিলেন, “জরত্যাগ হইয়াছে ?” ভিষকৃ কহিলেন;–“হইয়াছে।” আয়েষ ও ওসমান—উভয়েরই মুখ প্রফুল্প হইল। ভিষক কহিলেন,—“এখন আর কোন চিন্ত৷ নাই, আমার বসিয়! থাকার প্রয়োজন করে না ; এই ঔষধ দুই প্রহর রাত্রি পর্য্যন্ত ঘড়ী ঘড়ী খাওয়াইবেন ।” এই বলিয়। ভিষক প্রস্থান করিলেন । ওস মান অর দুই চারি দণ্ড বসিয় নিজ আবাসগৃহে গেলেন । আয়েয। পূৰ্ব্ববৎ পালঙ্কে বসিয়া ঔষধাদি সেবন করাষ্টতে লাগিলেন । রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্বে রাজকুমার নয়ন উন্মীলন করিলেন । প্রথমেই আর্ষোর সুখপ্রফুল্ল মুখ দেখিতে পাইলেন । চক্ষুর কটাক্ষভাব দেখিয়। অয়েষার বোধ হইল, ষেন তাহার বুদ্ধির ভ্রম জন্মিতেছে, যেন তিনি কিছু স্মরণ করিতে চেষ্ট করিতেছেন, কিন্তু যত্ন বিফল হইতেছে । অনেকক্ষণ পরে তারেষার প্রতি চাহিয়া কহিলেন, “আমি কোথায় ?” ই দিবসের পর রাজপুত্র এই প্রথম কথা কহিলেন । আয়েম কহিলেন, “কতলুগার গুর্গে " রাজপুত্র আবার পূর্ববৎ স্মরণ করিতে লাগিলেন, অনেকক্ষণ পরে কহিলেন, “আমি কেন এখানে ?” আয়েম প্রথমে নিরুত্তর হইয়া রহিলেন ; পরে কহিলেন, “আপনি পীড়িত ” রাজপুত্ৰ ভাবিতে ভাবিতে মস্তক আন্দোলন করিয়া কহিলেন,-“ন না, আমি বন্দী হইয়াছি।” এই কথা বলিতে রাজপুত্রের মুখের ভাবাস্তর হইল । আয়েষ। উত্তর করিলেন না, দেখিলেন, রাজপুত্রের স্মৃতিক্ষমতা পুনরুদ্দীপ্ত হইতেছে । ক্ষণপরে রাজপুত্র পুনর্ধার জিজ্ঞা: কfরলেন— “তুমি-কে ?” “আমি আয়েম। " “আয়েষ কে ?” “কভলু থার কন্ত| ” রাজপুত্র আবার ক্ষণকাল নিস্তব্ধ রহিলেন, . এককালে অধিকক্ষণ কথা কহিতে শক্তি নাই । কিযুৎক্ষণ নীরবে বিশ্রাম লাভ করিয়| কহিলেন -—“আমি কয় দিন এখানে আছি ?" “চারি দিন ।” “গড়মান্দারণ অদ্যাপি তোমাদিগের অধিকারে আছে ?” - “আছে r