পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুর্গেশনন্দিনী e크 속ee, প্রথম পরিচ্ছেদ দেবমন্দির ৯৯৭ বঙ্গাব্দের নিদাঘশেষে এক দিন এক জন অশ্বারোহী পুরুষ বিষ্ণুপুর হইতে মান্দারণের পথে একাকী গমন করিতেছিলেন । দিনমণি অস্তাচলগমনোদ্যোগী দেখিয়া অশ্বারোহী দ্রুতবেগে অশ্বসঞ্চালন করিতে লাগিলেন । কেন না, সন্মুখে প্রকাও প্রান্তর, কি জানি, যদি কালধৰ্ম্মে প্রদোষকালে প্রবল ঝটিকা বৃষ্টি আরম্ভ হয়, তবে সেই প্রাস্তরে নিরাশ্রয়ে যৎপরোনাস্তি পীড়িত হইতে হইবে । প্রান্তর পার হইতে ন হইতেই স্থৰ্য্যাস্ত হইল ; ক্রমে নৈশগগন নীলনীরদমালtয় আবৃত হইতে লাগিল । নিশারম্ভেই এমত ঘোরতর অন্ধকার দিগন্ত-সংস্থিত হইল যে, অশ্বচালনা অতি কঠিন হইতে লাগিল । পান্থ কেবল বিদ্যুদীপ্তি প্রদর্শিত পথে কোনমতে চলিতে লাগিলেন । অল্পকালমধ্যে মহারবে নৈদীঘ-ঝটিকা প্রধাবিত হইল এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিধারা পড়িতে লাগিল । ঘোটকারূঢ় ব্যক্তি গন্তব্যপথের আর কিছুমাত্র স্থিরতা পাইলেন না । অশ্ব-বলগা শ্লথ করাতে অশ্ব যথেচ্ছ গমন করিতে লাগিল। এইরূপ, কিয়দর গমন করিয়া ঘোটকচরণে কোন কঠিন দ্রব্যসংঘাতে ঘোটকের পদস্খলন হুইল । ঐ সময় একবার বিদ্যুৎপ্রকাশ হওয়াতে পথিক সন্মুখে প্রকাণ্ড ধৰলাকার কোন পদার্থ চকিতমাত্র দেখিতে পাইলেন । ঐ ধবলাকার স্তুপ অট্টালিক হইবে, এই বিবেচনায়, অশ্বারোহী লাফ দিয়া ভূতলে অবতরণ করিলেন । অবতরণমাত্র জানিতে পারিলেন যে, প্রস্তর-নিৰ্ম্মিত সোপানাবলীর সংস্রবে ঘোটকের চরণ স্থলিত হইয়াছিল ; অতএব নিকটে আশ্রয়স্থান আছে জানিয়া অশ্বকে ছাড়িয়া দিলেন । নিজে অন্ধকারে সাবধানে সোপানমার্গে পদক্ষেপ করিতে লাগিলেন । অচিরাৎ তাড়িতালোকে জানিতে পারিলেন যে, সম্মুখস্থ অট্টালিকা এক দেবমন্দির । কৌশলে মন্দিরের ক্ষুদ্র দ্বারে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন যে, দ্বার রুদ্ধ, হস্তমার্জনে জানিলেন, দ্বার বহিদিক্ হইতে রুদ্ধ হয় নাই । এই জনহীন প্রাস্তরস্থিত মন্দিরে এমত সময়ে কে ভিতর হইতে অর্গল আবদ্ধ করিল, এই চিন্তায় পথিক কিঞ্চিৎ বিক্ষিত ও কৌতুহলাবিষ্ট হইলেন। মস্তকোপরি প্রবল বেগে ধারাপাত হুইতেছিল, স্বতরাং যে কোন ব্যক্তি দেবালয়মধ্যবাসী হউক, পথিক ভূয়োভূয়ং বলদপিত করাঘাত করিতে লাগিলেন, কেহই দ্বারোন্মোচন করিতে আসিল না । ইচ্ছ, পদাঘাতে কবাট মুক্ত করেন, কিন্তু দেবী লয়ের পাছে অমৰ্য্যাদা হয়, এই অীশঙ্কায় পথিক ততদূর করিলেন না, তথাপি তিনি কবাটে যে দারুণ করপ্রহার করিতেছিলেন, কাষ্ঠের কবটি তাহা অধিকক্ষণ সহিতে পারিল না, অল্পকালেই অর্গলচু্যত হইল । দ্বার খুলিয়া যাইবামাত্র যুবা যেমন মন্দিরাভ্যস্তরে প্রবেশ করিলেন, আমনি মন্দিরমধ্যে অস্ফুট চীৎকারধ্বনি র্তাহার কর্ণে প্রবেশ করিল ও তন্মুহূৰ্ত্তে মুক্তদ্বারপথে ঝটিক বেগ প্রবাহিত হওয়াতে তথায় যে ক্ষীণ প্রদীপ জ্বলিতেছিল, তাহ নিবিয়া গেল । মন্দিরমধ্যে মনুষ্যই বা কে আছে, দেবই বা কি মূৰ্ত্তি, প্রবিষ্টব্যক্তি তাহার কিছুই দেখিতে পাইলেন না । আপনার অবস্থ। এইরূপ দেখিয়া নিভাক যুবপুরুষ কেবল হাস্ত করিয়া প্রথমতঃ ভক্তিভাবে মন্দিরমধ্যস্থ অদৃশু দেবমূৰ্ত্তির উদেশে প্রণাম করিলেন । পরে গাত্ৰোখান করিয়া অন্ধকারমধ্যে ডাকিয়া কছিলেন, “মন্দিরমধ্যে কে আছ ?” কেহই প্রশ্নের উত্তর করিল না, কিন্তু অলঙ্কার-ঝঙ্কারশব্দ কর্ণে প্রবেশ করিল । পথিক তখন বৃথা বাক্যব্যয় নিম্প্রয়োজন বিবেচনা করিয়া, বৃষ্টিধারী ও ঝটিকা প্রবেশরোধার্থ দ্বার যোজিত করিলেন এবং ভগ্নার্গলের পরিবর্তে আত্মশরীর দ্বারে নিবিষ্ট করিয়া পুনৰ্ব্বার কছিলেন, “যে কেহ মন্দিরমধ্যে থাক, শ্রবণ