পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ماه از ঝিতে পরিবেন। আমি কাদিয়া উৰ্ম্মিল দেবীর পদতলে পড়িলাম, আত্মদোষ সকল ব্যক্ত করিলাম। সকল দোষ আপনার স্বন্ধে স্বীকার করিয়া লইলাম । পিতার সহিত সাক্ষাৎ হইলে তাহারও চরণে লুষ্ঠিত হইলাম। মহারাজ তাহাকে ভক্তি করেন, তাহাকে গুরুবং শ্রদ্ধা করেন : অবশ্ব তাহার অনুরোধ রক্ষা করিবেন। কহিলাম - 'আপনার জ্যেষ্ঠ কন্যাকে স্মরণ করুন ' বোধ করি, পিতা মহারাজের সহিত একত্র যুক্তি করিয়াছিলেন। তিনি আমার রোদনে কর্ণপাতও করিলেন না। রুষ্ট হুইয়। কহিলেন, পাপীয়সি ! একেবারে লজ্জা ত্যাগ করিয়াছিস্ ! উৰ্ম্মিল! দেবী আমার প্রাণরক্ষার্থ মহারাজের নিকট বহুবিধ কহিলেন । মহারাজ কহিলেন--আমি তবে চোরকে মুক্ত করি, সে যদি বিমলাকে বিবাহ করে । - আমি তুখন মহারাজের অভিসন্ধি বুঝিয় নিঃশব্দ হইলাম। /প্রাণেশ্বর মহারাজের বাক্যে বিষম রুষ্ট হইয়া কহিলেন,—“আমি যাবজ্জীবন কারাগারে থাকিব সেও ভাল ; প্রাণদণ্ড দিব, সে-ও ভাল ; তথাপি ন্যাকে কখন বিবাহ করিব না। আপনি হিন্দু হইয়। কি প্রকারে এমন অনুরোধ করিতেছেন ? মহারাজ কহিলেন, “যখন আমার ভগিনীকে শাহজাদা সেলিমের সহিত বিবাহ দিতে পারিয়াছি, তখন তোমাকে ব্রাহ্মণ-কন্ত| বিবাহ করিতে অনুরোধ করিব, বিচিত্র কি ?’ তথাপি তিনি সম্মত হইলেন না । বরং কহিলেন, ‘মহারাজ, যাহা হইবার, তাহ হইল। আমাকে মুক্তি দিউন, আমি বিমলার আর কখন নাম করিব না ? মহারাজ কহিলেন, তাহা হইলে তুমি যে অপরাধ করিয়াছ, তাহার প্রায়শ্চিত্ত হইল কই ? তুমি বিমলাকে ত্যাগ করিবে, অন্যজনে তাহাকে কলঙ্কিনী বলিয়া ঘৃণা করিয়া স্পর্শ করিবে না। ’ তথাপি আশু তাহার বিবাহে মতি হইল না, পরিশেষে যখন আর কারাগার-যন্ত্রণ সহ হুইল না, তখন অগত্য অৰ্দ্ধসন্মত হইয়া কহিলেন, ‘বিমল যদি আমার গৃহে পরিচারিক হইয়া থাকিতে পারে, বিবাহের কথা আমার জীবিতকালে কখন উত্থাপন না করে, আমার ধৰ্ম্মপত্নী বলিয়৷ কখন পরিচয় না দেয়, তবে শূদ্রীকে বিবাহ করি— ; নচেৎ নহে ।” , , আমি বিপুল পুলকসহকারে তাহাই স্বীকার করিলাম। আমি ধন গৌরবপরিচয়াদির জন্য কাতর তুষ্ট বঙ্কিমচক্রের গ্রন্থাবলী ছিলাম না । পিতা এবং মহারাজ উভয়েই সন্মত হইলেন । আমি দাসীবেশে রাজভবন হইতে নিজভর্তৃভবনে আসিলাম । অনিচ্ছায়, পরবল পীড়ায় তিনি আমাকে বিবাহ করিয়াছিলেন । এমন অবস্থায় বিবাহ করিলে কে স্ত্রীকে আদর করিতে পারে ? বিবাহের পরে প্রভু আমাকে বিষ দেখিতে লাগিলেন। পূৰ্ব্বের প্রণয় তৎকালে একবারে দূর হইল। মহারাজ মানসিংহ রুত অপমান সৰ্ব্বদ। স্মরণ করিয়া আমাকে তিরস্কারও করিতেন । সে তিরস্কার আমার আদর বোধ হইত । এষ্টরূপে কিছুকাল গেল; কিন্তু সে সকল পরিচয়েই ব। প্রয়োজন কি ? আমার পরিচয় দেওয়া হইয়াছে, অন্য কথা আবশ্বক নহে। কালে আমি পুনৰ্ব্বার স্বামি প্রণয়ভাগিনী হইয়াছিলাম, কিন্তু অম্বরপতির প্রতি র্তাহার পূর্ববৎ বিষদৃষ্টি রহিল! কপালের লিখন, নচেৎ এ সব ঘটিবে কেন ? - আমার পরিচয় দেওয়৷ শেষ হইল। কেবল আত্মপ্রতিশ্রুতি উদ্ধার করাই আমার উদ্দেশ্য নহে । অনেকে মনে করে, আমি কুলধৰ্ম্ম বিসর্জন করিয়া গড়মান্দারণের অধিপতির নিকট ছিলাম । আমার লোকাস্তব হইলে নাম হইতে সে কালি আপনি মুছাইবেন এই ভরসাতেই আপনাকে এত লিখিলাম । এই পত্রে কেবল আত্মবিবরণই লিখিলাম । যাহার সংবাদ জন্য আপনি চঞ্চলচিত্ত তাহার নামোল্লেখও করিলাম না । মনে করুন, সে নাম এ পৃথিবীতে লোপ হইয়াছে । তিলোত্তমা বলিয়া যে কেহ কখন ছিল, তাহ বিস্তৃত হউন "— ওসমান লিপিপাঠ সমাপ্ত করিয়া কহিলেন, মা ! আপনি আমার জীবন রক্ষা করিয়াছিলেন, আমি আপনার প্রত্যুপকার করিব।” বিমলা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “আর আমার পৃথিবীতে উপকার কি আছে ? তুমি আমার কি উপকার করিবে ? তবে এক উপকার—” ওসমান কহিলেন,—“আমি তাহাই সাধন করিব।” বিমলার চক্ষু প্রোজ্জল হইল, কহিলেন;–“ওস্ মান ! কি কহিতেছ ? এ দগ্ধ হৃদয়কে আর কেন প্রবঞ্চন কর ?” ওসমান হস্ত হইতে একটি অঙ্গুরীয় মুক্ত করিয়া কহিলেন, “এই অঙ্গুরীয় গ্রহণ কর, দুই এক দিনমধ্যে কিছু সাধন হইবে না। কতলু খার জন্মদিন আগতপ্রায়, সে দিবস বড় উৎসব হইয়া থাকে। প্রহরিগণ আমোদে মত্ত থাকে। সেই দিবস আমি তোমাকে উদ্ধার করিব । তুমি সেই দিবস নিশীথে অস্তঃপুরষ্কারে £4