পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুৰ্গেশনন্দিনী আসিও i যদি তথায় কেক তোমাকে এইরূপ দ্বিতীয় অঙ্গুরীয় দৃষ্টি করায় তবে তুমি তাহার সঙ্গে বাহিরে আসিও ; ভরসা করি, নিষ্কণ্টকে আসিতে পারিবে । তবে জগদীশ্বরের ইচ্ছা ।” বিমল কহিলেন: “জগদীশ্বর তোমাকে দীর্ঘজীবী করুন, আমি অধিক কি বলিব ।” বিমল রুদ্ধকণ্ঠ হইয়া আর কথা কহিতে পারিলেন না । - বিমলা ওসমানকে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া বিদায় লইবেন, এমন সময় ওসমান কহিলেন,—“এক কথা সাবধান করিয়া দিই। একাকিনী আসিবেন । আপনার সঙ্গে কেহ সঙ্গিনী থাকিলে কাৰ্য্য সিদ্ধ হইবে না, বরং প্রমাদ ঘটিবে ।” বিমল বুঝিতে পারিলেন যে, ওসমান তিলেক্তমাকে সঙ্গে আনিতে নিষেধ করিতেছেন । মনে মনে ভাবিলেন,–“ভাল, দুই জন না যাইতে পারি, তিলোত্তম একাই আসিবে ' বিমল বিদায় লইলেন । অষ্টম পরিচ্ছেদ আরোগ; দিন যাবে-তুমি যাহ। ইচ্ছ, তাহ কর, দিন যাবে-রবে না । যে অবস্থায় ইচ্ছা, সে অবস্থায় থাক, দিন যাবে –রবে না ! পথিক ! বড় দারুণ ঝটিক বৃষ্টিতে পতিত হইয়াছ ? উচ্চরবে শিরোপরি ঘনগর্জন হইতেছে ? বৃষ্টিতে প্লাবিত হইতেছ? অনাবৃত শরীরে করকাভিঘাত হইতেছে ? আশ্রয় পাইতেছ না ? ক্ষণেক ধৈর্য্য ধর, এ দিন ষাবে— রবে না। ক্ষণেক অপেক্ষ কর ; দুৰ্দ্দিন ঘুচিবে, মুদিন হইবে ; ভানুদয় হইবে, কালি পর্যাপ্ত অপেক্ষ কর । কাহার না দিন যায় ? কাহার দুঃখ স্থায়ী করিবার জন্য দিন বসিয়া থাকে ? তবে কেন রোদন. কর ? কার দিন গেল ন ? তিলোত্তম ধূলায় পড়িয়। আছে, তবু দিন যাইতেছে। বিমলার হৃৎপদ্মে প্রতিহিংসা-কালফণী - বসতি করিয়া সৰ্ব্বশরীর বিষে জর্জর করিতেছে, এক মুহূৰ্ত্ত তাহার দংশন অসহ ; এক দিনে কত মুহূৰ্ত্ত ! তথাপি দিন কি গেল না ? কতলু খাঁ মসনদে, শত্রুজয়ী ; মুখে দিনে যাই তেছে । দিন যাইতেছে—রছে না। 位》 জগতসিংহ রুগ্নশৰ্য্যায় ; রোগীর দিন কত দীর্ঘ, কে না জানে ? তথাপি দিন গেল । 'y. দিন গেল। দিনে দিনে জগৎসিংহের আরোগ্য জন্মিতে লাগিল। একেবারে যমদণ্ড হইতে নিস্কৃতি, পাইয়। রাজপুত্র দিনে দিনে নিরাপদ হইতে লাগিলেন:}; প্রথমে শরীরের গ্লানি দুর ; পরে আহার ; পরে বল ; শেষে চিন্ত । প্রথম চিন্তা-তিলোত্তম। কোথায়? রাজপুত্র ষতঃ আরোগ্য পাইতে লাগিলেন, তত সংবদ্ধিত ব্যাকুলতার সহিত সকলকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন ; ক্ষেই তুষ্টিজনক উত্তর দিল না । আম্বেষা জানেন না ; ওসমান বলেন না ; দাসদাসী জানে না, কি ইঙ্গিত-মতে বলে না। রাজপুত্র কণ্টকশয্যাশায়ীর ন্যায় চঞ্চল হইলেন । দ্বিতীয় চিন্তা –নিজ ভবিষ্যৎ । “কি হইবে ? অকস্মাৎ এ প্রশ্নের কে উত্তর দিতে পারে? রাজপুত্র দেখিলেন, তিনি বন্দী। করুণহৃদয় ওসমান ও আয়েষার অনুকম্পায় তিনি কারাগারের বিনিময়ে সুসজ্জিত সুবাসিত শয়নকক্ষে বসতি করিতেছেন ঃ দাসদাসী তাহার সেবা করিতেছে ; যখন যাহা প্রয়োজন তাহ ইচ্ছাব্যক্তির পূৰ্ব্বেই পাইতেছেন ; আয়েষ। সহোদরাধিক স্নেহের সহিত র্তাহার যত্ন করিতেছেন ; তথাপি দ্বারে প্রহরী ; স্বর্ণপিঞ্জরবাসী স্বরস পানীয়ে পরিতৃপ্ত বিহঙ্গমের ন্যায় রুদ্ধ আছেন। কবে মুক্তিপ্রাপ্ত হইবেন ? মুক্তিপ্রাপ্তির কি সম্ভাবনা ? তাহার সেনা সকল কোথায় ? সেনাপতিশূন্ত হইয়। তাহদের কি দশা হইল ? তৃতীয় চিন্তা—আম্বেষা। এ চমৎকারকারিণী, পরহিতমূৰ্ত্তিমতী কেমন করিয়৷ এই মৃন্ময় পৃথিবীতে অবতরণ করিল ? জগতসিংহ দেখিলেন, আয়েষার বিরাম নাই, শ্রান্তিবোধ নাই, অবহেলা নাই। রাত্রিদিন রোগীর শুশ্রুষা করিতেছেন । যত দিন ন! রাজপুত্র নীiেঃ হইলেন, তত দিন তিনি প্রত্যহ প্রভাতে দেখিণ্ডেল, প্রভাতসূর্য্যরূপিণী কুসুমদাম হস্তে করিয়া লাবণ্যময়। পদ-বিক্ষেপে নিঃশব্দে আগমন করিতেছেন। প্রতি, দিন দেখিতেন, যতক্ষণ স্নানাদি কার্য্যের সময় অতীত না হইয়া যায়, ততক্ষণ আয়েষ সে কক্ষ ত্যাগ করি: তেন না। প্রতিদিন দেখিতেন, ক্ষণকাল 隱 প্রত্যাগমন করিয়া কেবল নিতান্ত প্রয়োজনবশতঃ গাত্ৰোখান করিতেন, যতক্ষণ ন তাহার জননী বেগম র্তাহার নিকট কিঙ্করী পাঠাইতেন, ততক্ষণ “ষ্ঠাহার । সেবায় ক্ষাপ্ত হইতেন না। .