পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՓԵ ও । তাহার কারণ এই যে, মহারাজ মানসিংহ স্বয়ং আমাদিগের অবস্থা সম্পূর্ণ অবগত নহেন, আপনার নিকট প্রকৃত বলবত্তা জানিতে পারিবেন ; আর মহাশয়ের অনুরোধে বিশেয কার্যসিদ্ধির সম্ভাবনা ; লিপির দ্বারা সেরূপ নহে। সন্ধির আশু এক ফল হুইবে যে, আপনি পুনৰ্ব্বার কারামুক্ত হইবেন। সুতরাং নবাব কভলু খাঁ সিদ্ধাস্ত করিয়াছেন যে, আপনি এ সন্ধিতে তাবশু অনুরোধ করিবেন। জ। আমি পিতৃ সন্নিধানে যাইতে অস্বীকৃত নহি । ও শুনিয়। সুখী হুইলাম ; কিন্তু আরও এক নিবেদন আছে । আপনি যদি ঐরূপ সন্ধি সম্পাদন করিতে ন পারেন, তবে আবার এ দুর্গমধ্যে প্রত্যাগমন করিভে অঙ্গীকার করিয়া যাউন । জ। আমি অঙ্গীকার করিলেই যে প্রত্যাগমন করিব, তাহার নিশ্চয় কি ? ওসমান হাসিয়া কহিলেন, “তাহ নিশ্চয় বটে। রাজপুতের বাক্য যে লঙ্ঘন হয় না, তাহা সকলেই জানে ৷” রাজপুত্ৰ সন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, “আমি অঙ্গীকার করিতেছি যে, পিতার সহিত সাক্ষাৎকারের পরেই একাকী দুর্গে প্রত্যাগমন করিব।” ও । আর কোন বিষয়ও স্বীকার করুন : তাহা হইলেই আমরা বিশেষ বাধিত হই।--আপনি যে মহারাজের সাক্ষাৎলাভ করিলে আমাদিগের বাসনামুযায়ী সন্ধির উদ্যোগ হইবেন, তাহাও স্বীকার করিয়া যাউন । রাজপুত্ৰ কহিলেন, “সেনাপতি মহাশয় ! এ অঙ্গীকার করিতে পারিলাম না। দিল্লীর সম্রাট আমাদিগকে পাঠানজয়ে নিযুক্ত করিয়াছেন, পাঠান জয়ই করিব । সন্ধি করিতে নিযুক্ত করেন নাই, সন্ধি করিব না কিংব। সে অনুরোধও করিব না।” ওসমানের মুখভঙ্গীতে সন্তোষ অথচ ক্ষোভ উভয়ই প্রকাশ হইল ; কহিলেন, “যুবরাজ ! আপনি রাজপুত্রের ন্তায় উত্তর দিয়াছেন ; কিন্তু বিবেচন৷ করিয়া দেখুন, আপনার মুক্তির আর অন্য উপায় माझे ।” জ। আমার মুক্তিতে দিল্লীশ্বরের কি ? রাজ পুতকুলেও অনেক রাজপুত্র আছে। ওসমান কাতর হইয়া কহিলেন, “যুবরাজ ! আমার পরামর্শ শুনুন, এ অভিপ্রায় ত্যাগ করুন ।” জ ; কেন মহাশয় ? ও । রাজপুত্র! স্পষ্ট কথা কহিতেছি, আপনার দ্বারা কাৰ্য্যসিদ্ধি হইবে বলিয়াই নবাব সাহেব আপনাকে ৰঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী এ পর্যন্ত আদরে রাখিয়াছিলেন ; জাপনি যদি তাহাতে বক্র হয়েন, তবে আপনার সমূহ পীড়া ঘটাইবেন । ... . জ। আবার ভয় প্রদর্শন ! এইমাত্ৰ:জামি কারাবাসের প্রার্থনা আপনাকে জানাইতেছি " ". ও । যুবরাজ ! কেবল কারাবাসেই যদি নবাব তৃপ্ত হয়েন, তবে মঙ্গল জানিবেন । সুবরাজ ভ্রভঙ্গী করিলেন । কহিলেন, “না হয়; বীরেন্দ্রসিংহের রক্তস্রোতঃ বৃদ্ধি করাইব ।” চক্ষু হইতে তাহার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইল । ওসমান কছিলেন, “আমি বিদায় হইলাম। আমার কার্য আমি করিলাম, কতলুগার আদেশ অন্য দূতমুখে শ্রবণ করিবেন।” কিছু পরে কথিত দূত আগমন করিল। সে ব্যক্তি সৈনিক পুরুষের বেশধারী, সাধারণ পদাতিক অপেক্ষ কিছু উচ্চপদস্থ সৈনিকের ন্যায়। তাহার সমভি ব্যাহারী আর ঢারি জন অস্ত্রধারী পদাতিক ছিল । রাজপুত্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার কার্য কি ?” সৈনিক কহিল, “আপনার বাসগৃহ পরিবর্তন করিতে হইবে।” “আমি প্রস্তুত আছি, uল" বলিন। রাজপুত্র দূতের অনুগামী হইলেন । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ অলৌকিক আভরণ মহোৎসব উপস্থিত। অদ্য কতলু খার জন্মদিন । দিবসে রঙ্গ, নৃত্য, দান, আহার, পান ইত্যাদিতে সকলেই ব্যাপৃত ছিল। রাত্রিতে ততোধিক । এইমাত্র সায়াহ্নকাল উত্তীর্ণ হইয়াছে ; দুর্গমধ্য আলোকময় ; সৈনিক, সিপাহী, ওমরাহ, ভৃত্য, পৌরবর্গ, ভিক্ষুক, মদ্যপ, নট, নর্তকী, গায়ক, গায়িকা, বাদক, ঐন্দ্রজালিক, পুষ্পবিক্রেতা, গন্ধবিক্রেতা, তাম্বলবিক্রেতা, আহারীয়বিক্রেতা, শিল্প কার্যোৎপন্নদ্রব্যজাতবিক্রেতা, এই সকলে চতুৰ্দিক্ পরি-. পূর্ণ। যথায় যাও, তথায় কেবল দীপমালা, গীতবাদ্য, । গন্ধবারি, পান, পুষ্প, বাজী, বেখ্যা । অস্তঃপুরমধ্যেও . কতক কতক ঐরুপ । নবাবের বিহারগুহ অপেক্ষাকৃত স্থিরতর, কিন্তু অপেক্ষাকৃত প্রমোদময় ! কক্ষে কক্ষে । রজতদীপ, স্ফটিকদীপ, গন্ধদীপ ক্ষিন্ধোজ্জল আলোক বর্ষণ করিতেছে ; সুগন্ধিকুসুমদাম পুপাধারে, স্তম্ভে, শয্যায়, আসনে আর পুরবাসিনীদিগের অঙ্গে বিরাজ