পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছুগেশনন্দিনী । এ জীবন ত্যাগ করিতে ব্যতীত আর ধারণ করিতে . ইচ্ছা করে না । এ কারাগার ত্যাগ করিতে বাসন। করি না ; আমার মনের সকল দুঃখ আপনি জানেন ন। ; আমি জানাইতেও পারি ন৷ ” যে করুণস্বরে রাজপুল কথা কহিলেন, তাহাতে আম্বেষা বিস্মিত হইলেন, অধিকতর কাতর হইলেন। তখন আর নবাবপুলী ভাব রহিল না ; দূরত রহিল না ; স্নেহময়ী রমণী, রমণীর ন্যায় যত্নে কোমলকরপল্লবে রাজপুত্রের কর ধারণ করিলেন ; আবার তখনই তাহার হস্ত ত্যাগ করিয়া, রাজপুল্লের মুখপানে উৰ্দ্ধদৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “কুমার ! এ দারুণ দুঃখ তোমার হৃদয়মধ্যে কেন ? আমাকে পর জ্ঞান করিও ন। যদি সাহস দাও, তবে বলি,—বীরেন্দ্রসিংহের কন্ত| কি—” আয়েযীর কথা শেষ হইতে ন হইতেই রাজকুমার কহিলেন, “ও কথায় আর কাজ কি ! সে স্বপ্ন ভঙ্গ হইয়াছে ।" আয়েয নীরবে রহিলেন,—জগতসিংহও নীরবে রহিলেন, উভয়ে বহুক্ষণ নীরবে রহিলেন ; আয়েষ। র্তাহার উপর মুখ অবনত করিয়৷ রছিলেন। রাজপুল অকস্মাৎ শিহরিয়া উঠিলেন ; তাহার করপল্পবে কবোঞ্চ বারিবিন্দু পড়িল । জগতসিংহু দৃষ্টি নিম্ন করিয়৷ আয়েষর মুখপদ্ম নিরীক্ষণ করিয়৷ দেখিলেন, আয়েষ। কাদিতেছে ; উজ্জল গণ্ডস্থলে দরদর ধারা বহিতেছে । রাজপুত্র বিস্মিত হইয়। কহিলেন, “এ কি আয়েষ। ? তুমি কঁাদিতেছ?” আয়েষা কোন উত্তর না করিয়৷ ধীরে ধীরে গোলাবফুলটি নিঃশেষে ছিন্ন করিলেন । পুষ্প শতখণ্ড হইলে কহিলেন, “যুবরাজ ! আজি যে তোমার নিকট এ ভাবে বিদায় লইব, তাহ মনে ছিল না । আমি অনেক সহ করিতে পারি, কিন্তু কারাগারে তোমাকে একাকী যে এ মনঃপীড়ার যন্ত্রণ। ভোগ করিতে রাখিয়া যাইব, তাহ পারিতেছি না । জগতসিংহ ! তুমি আমার সঙ্গে বাহিরে আইস ; অশ্বশালায় অশ্ব আছে, দিব ; আদ্য রাত্রেই নিজ শিবিরে যাইও ।” তদণ্ডে যদি ইষ্টদেবী ভবানী সশরীরে আসিয়া বরপ্রদ৷ হইতেন, তথাপি রাজপুত্র অধিক চমৎকৃত হইতে পারিতেন না। রাজপুত্র প্রথমে উত্তর করিতে পারিলেন না । আয়েষা পুনৰ্ব্বার কহিলেন, “জগতসিংহ ! রাজকুমার! এস ” 象 জগৎসিংহ অনেকক্ষণ পরে কছিলেন, “আয়েষ, তুমি আমাকে কারাগার হইতে মুক্ত করিয়া দিবে ?” ہے۔حسf: چ ఆః আয়েষা কহিলেন, “এই দণ্ডে ।” র। । তোমার পিতার অজ্ঞাতে ? .* আ । সে জন্য চিন্তা করিও না, তুমি - গেলে—আমি তাহকে জানাইব । - -' “প্রহরীরা যাইতে দিবে কেন ?” আয়েষা কণ্ঠ হইতে রত্নকন্ঠী ছিড়িয়া দেখাইয়া কহিলেন, “এই পুরস্কার লোভে প্রহরী পথ ছাড়িয়া দিবে ।” রাজপুত্র পুনৰ্ব্বার কছিলেন, “এ কথা প্রকাশ হইলে, তুমি তোমার পিতার নিকট যন্ত্রণ পাইবে ।” । “তাহাতে ক্ষতি কি ?” - - “আয়েষ। . আমি যাইব না।” " আয়েযার মুখ শুষ্ক হইল । ক্ষুণ্ণ হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন ?" রা। তোমার নিকট প্রাণ পৰ্য্যন্ত পাইয়াছি, তোমার যাহাতে যন্ত্রণা হইবে, তাহা অামি কদাচ কমিব नीं । আয়েষ প্রায় রুদ্ধকণ্ঠে কহিলেন, “নিশ্চিত যাইবে না ?” রাজকুমার কহিলেন, “তুমি একাকিনী ষাও ” আয়েষ পুনর্বর নীরব হুইয়া রছিলেন । আবার চক্ষে দরদর ধারা বিগলিত হইতে লাগিল ; আয়েযা কষ্টে অশ্রুসংবরণ করিতে লাগিলেন । রাজপুত্র আয়েষার নিঃশব্দ রোদন দেখিয়া চমৎ কৃত হইলেন । কহিলেন, “আয়েষী ! রোদন করিতেছ কেন ?" আয়েয। কথা কহিলেন না। রাজপুত্র আবার কহিলেন, “আয়েষা ! আমার অনুরোধ রাখ, রোদনের কারণ যদি প্রকাশু হয়, তবে আমার নিকট প্রকাশ কর । যদি আমার প্রাণদান করিলে তোমার নীরব রোদনের কারণ নিরাকরণ হয়, তাহা আমি করিব । আমি যে বন্দিত্ব স্বীকার করিলাম, কেবল ইহাতেই কখনও আয়েষার চক্ষে জল আইসে নাই। তোমার পিতার কারাগারে আমার দ্যায় অনেক বন্দী কষ্ট পাইয়াছে।” - আয়েষ আশু রাজপুত্রের কথার উত্তর না করিয়া অশ্রুজল অঞ্চলে মুছিলেন । ক্ষণেক নীরবে নিম্পনা থাকিয় কহিলেন, “রাজপুত্ৰ ! আমি আর র্কাদিব না।” রাজপুত্র প্রশ্নের উত্তর না পাইয়া কিছু ক্ষুণ্ণ হইলেন । উভয়ে আবার নীরবে মুখ অবনত, করিয়া রহিলেন । - প্রকোষ্ঠ প্রাকারে অার এক ব্যক্তির ছায়া পড়িলঃ কেহ তাহ দেখিতে পাইল না। তৃতীয় ব্যক্তি আসিয়া