পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ል• রাজপুত্ৰ কহিলেন “কি ?” কতলু খাঁর কর্মে এই প্রশ্ন মেঘগর্জনবৎ বোধ হইল। কভলু খ। বলিতে লাগিলেন, এই ক-কঙ্গার—মত—পবিত্র –তুমি—উঃ ! বড় তৃষা—যাই ষে–আয়েষা !" সু, আর কথা সরিল না ; সাধ্যাতীত পরিশ্রম হইয়াছিল, শ্রমাতিরেকফলে নিৰ্জ্জীব মস্তক ভূমিতে গড়াইয়া পড়িল । কন্যার নাম মুখে থাকিতে থাকিতে নবাব কতলু খার প্রাণবিয়োগ হইল। অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ প্রতিযোগিতা জগতসিংহ কারামুক্ত হইয়। পিতৃশিবিরে গমন৷ নস্তর নিজ স্বীকারানুযায়ী মোগল-পাঠানের সন্ধি সম্বন্ধ করাইলেন । পাঠানের দিল্লীশ্বরের অধীনত। স্বীকার করিষ্কাও উৎকলাধিকারী হইয়। রহিলেন । সন্ধির বিস্তারিত বিবরণ ইতিবৃত্তে বর্ণনীয়। এ স্থলে অতিবিস্তার নিম্প্রয়োজন । সন্ধিসমাপনাস্তে উভয় দল কিছু দিন পূৰ্ব্বাবস্থিতির স্থানে রহিলেন । নবপ্রতিসংবৰ্দ্ধনাৰ্থে কতলু খার পুত্রদিগকে সমভি ব্যাহারে লইয়া প্রধান রাজমন্ত্রী খুজি ইস ও সেনাপতি ওসমান রাজা মানসিংহের শিবিরে গমন করিলেন ; সাৰ্দ্ধশত হস্তী অlর অঙ্গান্ত মহার্ঘ্য দ্রব্য উপঢৌকন দিয়া রাজার পরিতোষ জন্মাইলেন ; রাজাও তাহাদিগের বহুবিধ সম্মান করিয়! সকলকে খেলোয়াৎ দিয়া বিদায় করিলেন । এইরূপ সন্ধিসম্বন্ধ সমাপন করিতে ও শিবির ভঙ্গোদ্যোগ করিতে কিছুদিন গত হইল । পরিশেষে রাজপুত সেনার পাটনায় যাত্রার সময় আগত হইলে, জগতসিংহ এক দিবস অপরাহ্লে সহচর সমভিব্যাহারে পাঠান-দুর্গে ওসমান প্রভৃতির নিকট বিদায় লইতে গমন করিলেন । কারাগারে সাক্ষাতের পর ওসমান রাজপুত্রের প্রতি আর সৌহৃদ্যভাব প্রকাশ করেন নাই । অদ্য সামাঙ্গ কথাবাৰ্ত্ত কহিয়৷ :বিদায় দিলেন । জগতসিংহ ওসমানের নিকট ক্ষুণ্ণমনে বিদায় লইয়। খাজা ইসার নিকট বিদায় লইতে গেলেন । তথ৷ হইতে আয়েষার নিকট বিদায় লইবার অভিপ্রায়ে চলিলেন। এক জন অন্তঃপুর রক্ষী দ্বারা আয়েষার নিকট সংবাদ পাঠাইলেন, আর রক্ষাকে কহিয়া দিলেন যে, “বলিও, নবাব সাহেবের লোকাস্তর পরে আর বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী 尊 র্তাহার সহিত সাক্ষাৎ হয় নাই। এক্ষণে আমি পাটনায় চলিলাম, পুনৰ্ব্বার সাক্ষাতের সম্ভাবনা বিরল ; অতএব তাহাকে অভিবাদন করিয়া যাইতে চাহি ।” খোজা কিয়ৎক্ষণ পরে প্রত্যাগমন করিয়া কহিল, “নবাবপুত্ৰী বলিয়া পাঠাইলেন যে, তিনি যুবরাজের সহিত সাক্ষাৎ করিবেন না, অপরাধ মার্জনা করিবেন ।” রাজপুত্র সম্বদ্ধিত বিষাদে আত্মশিবিরাভিমুখ হইলেন । দুর্গদ্বারে দেখিলেন, ওসমান তাহার প্রতীক্ষা করিতেছেন । রাজপুত্র ওসমানকে দেখিয়া পুনরপি অভিবাদন করিয়া চলিয়া যান, ওসমান পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন । রাজপুত্ৰ কহিলেন, “সেনাপতি মহাশয়, আপনার যদি কোন আজ্ঞ থাকে, প্রকাশ করুন, আমি প্রতিপালন করিয়া কৃতার্থ হই ।” ওসমান কহিলেন, “আপনার সহিত কোন বিশেষ কথা আছে, এত সহচর-সাক্ষাৎ তাহ বলিতে পারিব ন, সহচরদিগকে অগ্রসর হইতে অনুমতি করুন, একাকী আমার সঙ্গে আসুন ।" রাজপুত্র বিন। সঙ্কোচে সহচরগণকে অগ্রসর হইতে বলিয়া দিয়া এক অশ্বারোহণে পাঠানের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন ; ওসমানও অশ্ব আনাইয়া আরোহণ করিলেন । কিয়দর গমন করিয়া ওসমান রাজপুত্র সঙ্গে এক নিবিড় শালবনমধ্যে প্রবেশ করিলেন । বনের মধ্যস্থলে এক ভগ্ন অট্টালিক ছিল ; বোধ হয়, অতিপূৰ্ব্বকালে কোন রাজবিদ্রোহী এ স্থলে আসিয়া কাননাভ্যন্তরে লুক্কাইত ছিল ৷ শালবৃক্ষে ঘোটক বন্ধন করিয়া, ওসমান রাজপুত্রকে সেষ্ট অট্টালিকার মধ্যে লইয়া গেলেন । অট্টালিক। মনুষ্যশূন্ত । মধ্যস্থলে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ, তাহার এক পাশ্বে এক যাবনিক সমাধিখাত প্রস্তুত রহিয়াছে ; অথচ শব নাই ; অপর পাশ্বে চিতাসজ্জা রহিয়াছে, অথচ কোন মৃতদেহ নাই । প্রাঙ্গণমধ্যে আসিলে করিলেন, “এ সকল কি ?" ওসমান কহিলেন, “এ সকল আমার আজ্ঞাক্ৰমে হইয়াছে ; আজ যদি আমার মৃত্যু হয়, তবে মহাশয় আমাকে এই কবরমধ্যে সমাধিস্থ করিবেন, কেহ জানিবে না ; যদি আপনি দেহত্যাগ করেন, তবে এই চিতায় ব্রাহ্মণ দ্বারা আপনার সৎকার করাইব, অপর কেহ জানিবে না।" রাজপুত্র বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “এ সকল কথার তাৎপৰ্য্য কি ?” - রাজকুমার জিজ্ঞাসা