পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষ্ণকান্তের উইল Ağ অন্ন, চড়চড়ি, সড়সড়ি, ঘণ্ট, দালন ইত্যাদিতে সিদ্ধহস্ত ; আবার আলিপনা, খয়েরের গহনা, ফুলের খেলনা, স্থচের কাজে তুলনারহিত । চুল বাধিতে, কন্যা সাজাইতে, পাড়ার একমাত্র অবলম্বন । তাহার আর কেহ সহায় ছিল না বলিয়া সে ব্রহ্মানন্দের বাটীতে থাকিত । রোহিণী রূপসী ঠন্‌ ঠন্‌ করিয়া দালের ছঁাড়িতে কাঠ দিতেছিল, দূরে একটা বিড়াল থাব পাতিয়া বসিয়াছিল, পশুজাতি রমণীদিগের বিদ্যুদামকটাক্ষে শিহরে কি না, দেখিবার জন্য রোহিণী তাহার উপর মধ্যে মধ্যে বিষপূর্ণ মধুর কটাক্ষ করিতে ছিল ; বিড়াল সে মধুর কটাক্ষকে ভর্জিত মৎস্তাঙ্কারের নিমন্ত্রণ মনে করিয়। অল্পে অল্পে অগ্রসর হইতেছিল, এমন সময়ে হরলাল বাবু জুতাসমেত মস্মস করিয়। ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিলেন । বিড়াল ভীত হইয়া ভর্জিত মৎস্তের লোভ পরিত্যাগ পূর্বক পলায়নে তৎপর হইল ; রোহিণী দালের কাঠী ফেলিয়া দিয়া, হাত ধূইয়l. মাথায় কাপড় দিয়া উঠিয়া দাড়াইল । নখে নখ খুটিয়া জিজ্ঞাস করিল, “বড়-কাক কবে এলেন ?” হরলাল বলিল, “কাল এসেছি । তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে ।” রোহিণী শিহরিল ; বলিল, “আজি এখানে খাবেন ? সোরু চালের ভাত চড়াব কি ?” হর। চড়াও, চড়া ও ; কিন্তু সে কথ। তোমার এক দিনের কখ। মনে পড়ে কি ? রোহিণী চুপ করিয়া মাটপানে চাহিয়া রহিল। হরলাল বলিল, “সেই দিন, যে দিন তুমি গঙ্গ৷ স্বান করিয়া আসিতে যাত্রীদিগের দলছাড়া হইয়। পিছাইয় পড়িয়াছিলে, মনে পড়ে ?” রোহিণী । ( বঁ। হাতের চারিটি আঙ্গুল ডাইন হাতে ধরিয়৷ অধোবদনে ) মনে পড়ে । হর । যে দিন তুমি পথ হারাইয়া মাঠে পড়িয়াছিলে, মনে পড়ে ? রো । পড়ে । হর । ষে দিন মাঠে তোমার রাত্রি হইল, তুমি একা—জনকতক বদমাস তোমার সঙ্গ নিল —মনে পড়ে ? নর । রো । পড়ে । হর । সেই দিন কে তোমায় রক্ষা করিয়াছিল ? রে। । তুমি । তুমি ঘোড়ার উপরে সেই মাঠ দিয়া কোথায় যাইতেছিলে— হর । শালীর বাড়ী ৷ • রো। তুমি দেখিতে পাইয়া আমার রক্ষা করিলে—আমায় পান্ধী-বেহার করিয়া বাড়ী : পাঠাইয়া দিলে। মনে পড়ে বই কি ! সে ঋণ । আমি কখনও পরিশোধ করিতে পারিৰ: না । - হর। আজ সে ঋণ পরিশোধ করিতে পার: —তার উপর আমায় জন্মের মত কিনিয়া রাৰিঙে পার—করিবে ? . . ." রো। কি বলুন—আমি প্রাণ দিয়াও আপনার উপকার করিব । . কর না কর, এ কথা কাহারও সাক্ষাতে ‘ হর । প্রকাশ করিও না । রে। । প্রাণ থাকিতে নয় । হর । দিব্য কর । রোহিণী দিব্য করিল । তখন হরলাল কৃষ্ণকাস্তের আসল উইল ও জাল উইলের কথা বুঝাইয়া বলিল । শেষ বলিল, “সেই আসল উইল চুরি করিয়া, জাল উইল ইহার বদলে রাখিয়া আসিতে হইবে । আমাদের বাটতে । তোমাদের যাতায়াত আছে, তুমি বুদ্ধিমতী, তুমি অনায়াসে পার । আমার জন্য ইহা করিবে ?” রোহিণী শিহরিল । বলিল, "চুরি । আমাকে কাটিয়া ফেলিলেও আমি পারিব না ।” হর । স্ত্রীলোক এমন অসারই বটে—কথার রাশি মাত্র । এই বুঝি, এ জন্মে তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করিতে পরিবে না ? রে। আর যা বলুন, সব পারিব । মরিতে বলেন, মরিব ; কিন্তু এ বিশ্বাসঘাতকের কাজ পারিব না । হরলাল কিছুতেই রোহিণীকে সম্মত করিতে ন পারিয়া সেই হাজার টাকার নোট রোহিণীর । হাতে দিতে গেল । বলিল, “এই হাজার টাক|. পুরস্কার আগাম নাও । এ কাজ তোমার করিতে । হুইবে ।” ‘. . রোহিণী নোট লইল না । বলিল, “টাকার প্রত্যাশা করি না । কৰ্ত্তার সমস্ত বিষয় দিলেও পারিব না । করিবার হইত ত আপনার কথাতেই করিতাম ।” হরলাল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল, বলিল, “মনে । করিয়াছিলাম, রোহিণি ! তুমি আমার হিতৈষী । পর , কখনও আপন হয় ? দেখ, আজি যদি আমার স্ত্রী থাকিত, আমি তোমার খোসামোদ করিতাম না । সেই আমার এ কাজ করিত "