পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ు বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী । গুবার রোহিণী একটু হাসিল । হরলাল } জিজ্ঞাসা করিল, “হাসিলে যে ?” রো। আপনার স্ত্রীর নামে সেই বিধবাবিব|হের কথা মনে পড়িল। আপনি না কি বিধবাবিবাহ করিবেন ? হর। ইচ্ছা ত আছে—কিন্তু মনের মত বিধবা পাই কই ? রো। তা বিধবাই হৌক, আর সধবাই হৌক— বলি, বিধবাই হোক, কুমারীই হোঁক—একটা বিবাহ করিয়া সংসারী হইলে ভাল হয় । আমরা আত্মীয়স্বজন, সকলেরই তা হলে আহলাদ হয় । হর । দেখ রোহিণি, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসন্মত । রো । তা ত এখন লোকে বলিতেছে । - হর। দেখ, তুমিও একটা বিবাহ করিতে পার —কেন করিবে না ? রোহিণী মাথার কাপড় একটু টানিয়া মুখ ফিরাইল । হরলাল বলিতে লাগিল, “দেখ, তোমাদের সঙ্গে আমাদের গ্রামস্থবাদ মাত্র—সম্পর্কে বাধে নণ” এবার রোহিণী লম্বা করিয়া মাথায় কাপড় টানিয়া দিয়া, উমন গোড়ায় বসিয়া ডালে কাঠ দিতে আরম্ভ 研1 দেখিয়া বিষণ্ণ হইয়া হরলাল ফিরিয়া চলিল । হরলাল দ্বার পর্য্যন্ত গেলে রোহিণী বলিল, “কাগজখানা না হয় রাখিয়া যান, দেখি কি করিতে পারি ” হরলাল আহলাদিত হইয়া জাল উইল ও নোট রোহিণীর নিকটে রাখিল । দেখিয়া রোহিণী বলিল, “নোট না । শুধু উইগঙ্গানা রাখুন।” হরলাল তখন জুলি উইল রাখিয়া নোট লইয়। গেল । চতুর্থ পরিচ্ছেদ ঐ দিবস রাত্রি আটটার সময় কৃষ্ণকান্ত রায় জাপন শয়ন-মন্দিরে পর্যাঙ্কে বসিয়া, উপাধানে পৃষ্ঠ রক্ষা করিয়া, শটুকায় তামাক টানিতেছিলেন এবং সংসারে একমাত্র ঔষধ—মাদকমধ্যে শ্রেষ্ঠ অহিফেন ওরফে আফিমের নেশায় মিঠে রকম ঝিমাইতেছিলেন । ৰিীমাইতে ঝিমাইতে খেয়াল দেখিতেছিলেন, যেন উইলখানি হঠাৎ বিক্রয়-কোবলা হইয়া গিয়াছে । যেন হরলাল তিন টাকা তের আনা দু-কড়া ক্রাত্তি মূল্যে তাহার সমুদায় সম্পত্তি কিনিয়া লইয়াছে। আবার যেন কে বলিয়া দিল যে, "না, এ দানপত্র নহে, তমলুক।” তখনই যেন দেখিলেন যে, ব্ৰহ্মার বেটা বিষ্ণু আসিয়া বৃষভারূঢ় মহাদেবের কাছে এক কোঁটা আফিম কর্জ লইয়া এই দলিল লিখিয়া দিয়া এই বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড বন্ধক রাখিয়াছেন—মহাদেব গাজার ঝোকে ফোরক্লোজ করিতে ভুলিয়া গিয়াছেন । এমন সময়ে রোহিণী ধীরে ধীরে সেই গৃহমধ্যে কক্ষে প্রবেশ করিয়া বলিল, “ঠাকুরদাদা কি ঘুমাইয়াছ ?” কৃষ্ণকান্ত ঝিমাইতে বিমাইতে কহিলেন, “কে, নন্দী ? ঠাকুরকে এই বেল ফোরক্লোজ করিতে বল ।” রোহিণী বুঝিল যে, কৃষ্ণকাস্তের আফিমের আমল হইয়াছে । হাসিয়া বলিল, “ঠাকুরদাদা, নন্দী কে ?” কৃষ্ণকান্ত ঘাড় না তুলিয়া বলিলেন, “হুম, ঠিক বলেছ । বৃন্দাবনে গোয়াল-বাড়ী মাখন খেয়েছে— আজও তার কড়ি দেয় নাই ।” রোহিণী খিল্‌খিল্‌ করিয়া হাসিয়া উঠিল। তখন কৃঞ্চকাস্তের চমক হইল, মাথা তুলিয়া দেখিয়া বলিলেন, “কে ও, অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী ?” রোহিণী উত্তর করিল, “মৃগশিরা, আদ্রা, পুনৰ্ব্বসু, খুন্ত্য ।” কৃষ্ণ । অশ্লেষা মঘা, পূর্বফল্গুনী । রো। ঠাকুরদাদা ! আমি কি তোমার কাছে জ্যোতিষ শিখতে এসেছি ? কৃষ্ণ । তাই ত ! তবে কি মনে করিয়া ? আফিঙ্গ চাই না ত? রে। ষে সামগ্ৰী প্রাণ ধরে দিতে পারবে না, তাহার জন্য কি আমি এয়েছি ? আমাকে কাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন, তাই এসেছি । কৃষ্ণ । এই—এই ! তবে আফিঙ্গেরই জন্ত ! রো । না, ঠাকুরদাদা, না । তোমার দিবা, আফিঙ্গ চাই না । কাক বললেন যে, যে উইল আজ লেখা-পড়া হয়েছে, তাতে তোমার দস্তখত হয় নাই । কৃষ্ণ । সে কি ? আমার বেশ মনে পড়িতেছে রো। না, কাক কহিলেন যে, তাহার যেন স্মরণ হচ্ছে, তুমি তাতে দস্তখত কর নাই, ভাল, সন্দেহ রাখার দরকার কি ? তুমি কেন সেখান খুলে একবার দেখ না । কৃষ্ণ । বটে—তবে আলোটা ধর দেখি । বলিয়া কৃষ্ণকান্ত উঠিয়া উপাধানের নিম্ন হইতে একটি চাবি লইলেন। রোহিণী নিকটস্থ দীপ হস্তে লইল । কৃষ্ণকান্ত প্রথমে একটি ক্ষুদ্র হাতবাক্স খুলিয়া একটি বিচিত্র চাবি লইয়া, পরে একটা চেষ্ট ড্রয়ারের একটি