পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3%. " be রো। তোমার কাছে থাকাও যে, আমার কাছে থাকাও সে । . কুর । যদি আমাকে উইল দিবে না, তবে উহ চুরি করিলে কেন ? , রো। আপনারই জন্ত । আপনারই জন্য ইহা রছিল। যখন আপনি বিধবা-বিবাহ করিবেন, আপনার স্ত্রীকে এ উইল দিব । আপনি লইয়। ছিড়িয়া ফেলিবেন । হরলাল বুঝিল । বলিল, “ত হবে না-রোহিণি, টাকা যাহা চাও, দিব ।” রো। লক্ষ টাকা বলিয়াছিলে, তাই চাই I হর। তা হয় না। আমি জাল করি, চুরি করি, আপনারই হকের জন্য। তুমি চুরি করিয়াছ, কার ছকের জন্য ? রোহিনীর মুখ শুকাইল । রোহিণী অধোবদনে রহিল। হরলাল বলিতে লাগিল, “আমি যাই হই— কৃষ্ণকান্ত রায়ের পুত্র। যে চুরি করিয়াছে তাহাকে কখনও গৃহিণী করিতে পারিব ন৷ ” রোহিণী সহসা দাড়াইয়া উঠিয়া, মাথার কাপড় উচু করিয়া তুলিয়া, হরলালের মুখপানে চাহিল ; বলিল, “আমি চোর ! তুমি সাধু ! কে আমাকে চুরি করিতে বলিয়াছিল ? কে আমাকে বড় লোভ দেখাইল ? সরল স্ত্রীলোক দেখিয় কে প্রবঞ্চন করিল ? যে শঠতার চেয়ে আর শঠতা নাই, যে মিথ্যার চেয়ে আর মিথ্যা নাই, যা ইতরে বর্বরে মুখেও জানিতে পারে না, তুমি কৃষ্ণকান্ত রায়ের পুত্র হইয়। তাই করিলে! হায়! হায় ! আমি তোমার অযোগ্য ? তোমার মত নীচ শঠকে গ্রহণ করে, এমন হতভাগী কেহ নাই। তুমি যদি মেয়েমানুষ হইতে, তোমাকে আজ, যা দিয়া ঘরবীট দিই, তাই দেখাইতাম । তুমি পুরুষমানুষ, মানে মানে দুর হও!” হরলাল বুঝিল, উপযুক্ত হইয়াছে । মানে মানে বিদায় হইল—যাইবার সময় একটু টিপিটিপি হাসিয়া গেল। রোহিণীও বুঝিল যে, উপযুক্ত হইয়াছে— উভয় পক্ষে। সেও, খোপাট একটু আঁটিয়া নয়। রাধিতে বসিল। রাগে খোপাট খুলিয়া গিয়াছিল। তার চোখে জল আসিতেছিল । দিলেও নয় । যাহা দিবে पशिवछरट्झब्र ७jक्रांबली ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ তুমি, বসন্তের কোকিল ! প্রাণ ভরিয়া ডাক, তাহাতে আমার কিছুমাত্র আপত্তি নাই, কিন্তু তোমার প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ যে, সময় বুঝিয়। ডাকিবে । সময়ে, অসময়ে, সকল সময়ে ডাকাডাকি ভাল নহে। দেখ, আমি বহুসন্ধানে লেখনী, মসীপাত্র ইত্যাদির সাক্ষাৎ পাইয়া, আরও অধিক অনুসন্ধানের পর মনের সাক্ষাৎ পাইয়া, কৃষ্ণকাস্তের উইলের কথা ফঁাদিয়া লিখিতে বসিতেছিলাম, এমন সময়ে তুমি আকাশ হইতে ডাকিলে—“কুহু ! কুহু ! কুহু!” তুমি সুকণ্ঠ, আমি স্বীকার করি, কিন্তু সুকণ্ঠ বলিয়া কাহারও কিছু ডাকিবার অধিকার নাই । যাই হউক, আমার পলিত কেশ, চলিত কলম, এ সব স্থানে তোমার ডাকাডাকিতে বড় আসে যায় না । কিন্তু দেখ, যখন নব্য বাবু টাকার জালায় ব্যতিব্যস্ত হইয়া জমাখরচ লইয়া মাথাকুটাকুটি করিতেছেন, তখন তুমি হয় ত অফিসের ভগ্ন প্রাচীরের কাছ হইতে ডাকিলে “কুছ”—বাবুর আর জমাখরচ মিলিল না । যখন বিরহসন্তপ্ত সুন্দরী প্রায় সমস্ত দিনের পর অর্থাৎ বেল নয়টার সময়ে দুটি ভাত মুখে দিতে বসিয়াছেন, কেবল ক্ষীরের বাটিটি কোলে টানিয়া লইয়াছেন মাত্র, অমনি তুমি ডাকিলে –“কুছ"সুন্দরীর ক্ষীরের বাটি অমনি রহিল – হয় ত তাহাতে অন্যমনে লুণ মাখিয়া খাইলেন । যাহা হউক, তোমার কুহুরবে কিছু যাই আছে, নহিলে, যখন তুমি বকুলগাছে বসিয়৷ ডাকিতেছিলে--আর বিধবা রোহিণী কলসীকক্ষে জল আনিতে যাইতেছিল—তখন –কিন্তু আগে জল আনিতে যাওযার পরিচয়ট দিই । তা, কথাট এই । ব্রহ্মানন্দ ঘোষ দুঃখী লোক – দাসীচাকরাণীর বড় ধার ধারে না । সেটা সুবিধ। কি কুবিধা, তাহ বলিতে পারি না । সুবিধ হউক, কুবিধ হউক, যাহার চাকরাণী নাই, তাহার ঘরে ঠকামি, মিথ্যা সংবাদ, কেন্দল এবং ময়লা, এই চারিটি বস্তু নাই । চাকরাণী নামে দেবতা এই চারিটির স্বষ্টিকৰ্ত্ত । বিশেষ যাহার অনেকগুলি চাকরাণী, তাহার বাড়ীতে নিত্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ৮– নিত্য রাবণবধ । কোন চাকরাণী ভীমরূপিণী, সৰ্ব্বদাই সন্মার্জনীগদা হস্তে গৃহরণক্ষেত্রে ফিরিতে ছেন ; কেহ তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্ঞা দুর্য্যোধন, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণতুল্য বীরগণকে ভৎসনা করিতে ছেন ; কেহ কুম্ভকৰ্ণরূপিণী—ছয় মাস করিয়া নিদ্রা ধাইতেছেন ; নিদ্রান্তে সৰ্ব্বস্ব খাইতেছেন ; কেহু