পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘. . b» সে ঘরের বাহিরে অসিলে, নিৰ্ম্মল তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছুটিয়া আসিল । আসিয়া তাহার হাতে একটি আসরফি দিয়া বলিল, “আয়ি বুড়ী, দেখিও, যাহা শুনিলে, কাহারও সাক্ষাতে মুখে জানিও না। রাজকুমারীর মুখের আটক নাই – এখনও উহার ছেলে বয়স ” বুড়ী আসরফিটি লইয়া বসিল, “ত এ কি আর বলতে হয় মা ! আমি স্লোমাদের দাসী-আমি কি আর এ সকল কথা মুখে আনি ?” নিৰ্ম্মল সস্তুষ্ট হইয়া ফিরিয়া গেল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ চিত্রবিচারণ পরদিন চঞ্চলকুমারী ক্রীত চিত্রগুলি এক বসিয়া মনোযোগের সহিত দেখিতেছিলেন। নিৰ্ম্মলকুমারী আসিয়া সেখানে উপস্থিত হইল । তাহাকে দেখিয়া চঞ্চল বলিল, “নিৰ্ম্মল! ইহার মধ্যে কাহাকেও তোমার বিবাহ করিতে ইচ্ছা করে ?” নিৰ্ম্মল বলিল, “যাহাকে আমার বিবাহ করিতে ইচ্ছা করে, তাহার চিত্র ত তুমি পা দিয়া ভাঙ্গিয়৷ .ফেলিয়াছ ।” চঞ্চল । ঔরঙ্গজেবকে ? নিৰ্ম্মল! আশ্চর্য্য হইলে যে ? চঞ্চল । বদ্‌জান্তের ধাড়ি ষে ! অমন পাষণ্ড সে আর পৃথিবীতে জন্মে নাই ! নিৰ্ম্মল । বদ্‌জাতকে বশ করিতেই আমার আনন্দ। তোমার মনে নাই, আমি বাঘ পুষিতাম ? আমি এক দিন না এক দিন ঔরঙ্গজেবকে বিবাহ করিব, ইচ্ছা আছে । চঞ্চল । মুসলমান যে ? নিৰ্ম্মল । আমার হাতে পড়িলে ঔরঙ্গজেবও হিন্দু হইবে । চঞ্চল । তুমি মর। নিৰ্ম্মল। কিছুমাত্র আপত্তি নাই—কিন্তু ঐ একখানা কার ছবি তুমি পাচবার করিয়া দেখিতেছ, সে খবরটা লইয়া তবে মরিব । চঞ্চলকুমারী তখন আর পাঁচখানা চিত্রের মধ্যে ক্ষিপ্রহস্তে করন্থ চিত্রখানি মিশাইয়া দিয়া বলিল, "কোন ছবি আবার পাঁচবার করিয়া দেখিতেছিলাম ? মানুষে মানুষের একটা কলঙ্ক দিতে পারিলেই কি হয় ? ফোন্‌ ছবিখনে পাচবার করিয়া দেখিতেছিলাম ?” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী নিৰ্ম্মল হাসিয়া বলিল, “একখান তসবীর দেখিতেছিলে, তার আর কলঙ্ক কি ? রাজকুমারি, তুমি রাগ করিলে বলিয়া আমার কাছে ধরা পড়িলে । কার এমন কপাল প্রসন্ন, তসবীরগুলা দেখিলে আমি খুজিয়া বাহির করিতে পারি।” চঞ্চলকুমারী । আকবর শাহের । নিৰ্ম্মল । আকবরের নামে রাজপুতনী ঝাড়ু মারে । তা ত নহেই । এই বলিয়া নিৰ্ম্মলকুমারী তসৰীরের গোছা হাতে লইয়া খুজিতে লাগিল । বলিল, “তুমি রেখানি দেখিতেছিলে, তাহার উলুট পিঠে একটা কালে দাগ আছে দেখিয়াছি।” সেই চিহ্ন ধরিয়া নিৰ্ম্মলকুমারী একখানা ছবি বাহির করিয়া চঞ্চলকুমারীর হাতে निळा, বলিল, “এইখানি I' চঞ্চলকুমারী রাগ করিয়া ছবিখান ফেলিয়া দিল । বলিল, “তোর আর কিছু কাঙ্ক নেই, তাই তুই লোককে জালাতন করিতে আরম্ভ করেছিস । তুই দূর হ ।” নিৰ্ম্মল। দূর হব না । তl, রাজকুঙার । এ বুড়ার ছবিতে দেখিবার তুমি এত কি পেয়েছ ?” চঞ্চল । বুড়ো ! তোর কি চোখ গিয়াছে না কি ? নিৰ্ম্মল চঞ্চলকে জালাইতেছিল, চঞ্চলের রাগ দেখিয়া টিপি টিপি হাসিতে লাগিল । নিৰ্ম্মল বড় সুন্দরী, মধুর সরস হাসিতে তাহার সৌন্দর্য্য বড় খুলিল। নিৰ্ম্মল হাসিয়া বলিল, “তা ছবিতে বুড়া না দেখাকৃ—লোকে বলে, মহারাণ রাজসিংহের বয়স অনেক হয়েছে । তার দুই পুত্র উপযুক্ত হইয়াছে।” চঞ্চল । ও কি রাজসিংহের ছবি ? তা অত কে জানে সখি ? নিৰ্ম্মল । কাল কিনেছ—আজ কিছু জান না সখি ? তা মানুষটার বয়সও হয়েছে, এমন যে খুব সুপুরুষ, তাও নয় । তবে দেখিতেছিলে কি ?— চঞ্চল । গৌরী সমূঝে ভসমভার, পিয়ারী সমঝে কাল । শচী সমূঝে সহস্ৰলোচন, বীর সমূঝে বীরবালা ॥ গঙ্গাগৰ্জন শভূজটপর, ধরণী বৈঠত বামুকিফপ্‌মে । পবন হোয়ুত অগুন-সখী, বীর ভজত যুবতী মনুমে। নিৰ্ম্মল । এখন, তুমি দেখিতেছি, আপনি মরিবার •& জন্য ফঁাদ পাতিলে । রাজসিংহকে ভজিলে, রাজ সিংহকে কি কখন পাইতে পারিবে ?”