পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

J. & জানালার দিকে কি একটা খড়-খড় শব্দ হুইল—কে যেন খড়খড়ি তুলিয়া দেখিতেছিল—হঠাৎ ফেলিয়া দিল । দেবেন্দ্র বোধ হয় মনে মনে কাহারও প্রতীক্ষা করিতেছিলেন – বলিলেন, “কে খড়খড়ি চুরি করে ?” কোন উত্তর না পাইয়া জানেল দিয়া দেখিলেন--- দেখিতে পাইলেন, এক জন স্ত্রীলোক পলায়। স্ত্রীলোক পলায় দেখিয়া দেবেন্দ্র জানেল খুলিয়া লাফাইয়া পড়িয়া *াহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ টলিতে টুলিতে ছুটিলেন । স্ত্রীলোক অনায়াসে পলাইলে পলাইতে পারিত, কিন্তু ইচ্ছাপূৰ্ব্বক পলাইল না, কি অন্ধকারের ফুলবাগানের মাঝে পথ হারাইল, তাহ বলা যায় না । o তাহাকে ধরিয়া অন্ধকারে তাহার মুখপানে চাহিয়া চিনিতে পারিলেন না । চুপি চুপি মদের ঝোকে বলিলেন, “বাবা ! কোন গাছ থেকে ?” পরে তাহাকে স্বরের ভিতর টানিয়া আনিয়া একবার এক দিকে, আবার আর এক দিকে আলো ধরিয়া দেখিয়া, সেইরূপ স্বরে বলিলেন, “তুমি কাদের পেত্নী গা ?” শেষে কিছুস্থির করিতে না পারিয়া বলিলেন, “পারলেম না বাপ ! আজ ফিরে যাও, অমাবস্তায় লুচি পাঠ দিয়ে পুজো দেব—আজ একটু কেবল ব্রাণ্ডি খেয়ে যাও ” এই বলিয়া মদ্যপ স্ত্রীলোকটিকে বৈঠকখানায় বসাইয়া, মঙ্গের গেলাস তাহার হাতে দিল । রীলোকট। তাহা গ্রহণ না করিয়৷ নামাইয়৷ *ৰিল । , তখন মাতাল আলোটা স্ত্রীলোকের মুখের কাছে লইয়া গেল। এদিক ওদিক চারিদিক্ আলোটা ফিরাইয়া ফিরাইয়৷ গম্ভীরভাবে তাহাকে নিরীক্ষণ করিয়৷ শেষে হঠাৎ আলোটা ফেলিয়া দিয়া গান ধরিল,—“তুমি কে বট হে, তোমায় চেন চেন করি।--"কোথাও দেখেছি হে ।” তখন সে স্ত্রীলোক ধরা পড়িয়াছি ভাবিয়া বলিল,

  • थाभि हौद्रा ”

“Hurrah I Three Cheers for oral to বলিয়া মাতাল লাফাইয়া উঠিল। তখন আবার ভূমিষ্ঠ হইয়া হীরাকে প্রণাম করিয়া গ্লাগহন্তে স্তৰ কুরিতে আরম্ভ করিল

  • নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমো নমঃ বা দেবী বটবৃক্ষে ছায়ারূপেণ সংস্থিতা ৷ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমো নমঃ ॥ ষা দেৰী দত্তগুহেষু হীরারূপেণ সংস্থিতা। * নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমো নমঃ । , যা দেবী পুকুরঘাটেষ্ণু চুপড়িহন্তেন সংস্থিত ॥

বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমো নমঃ । ষা দেবী ঘরদ্বারেষু ঝাটাহস্তেন সংস্থিত । নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমো নমঃ । যা দেবী মম গৃহেষু পেত্নীরূপেণ সংস্থিত ॥ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমস্তস্তৈ নমো নমঃ । ভার পর মালিনী মাসী –কি মনে ক'রে ?” হীর ইতিপূৰ্ব্বে বৈষ্ণবীর সঙ্গে সঙ্গে আসিয়া দিনমানে জানিয়া গিয়াছিল যে, হরিদাসী বৈষ্ণবী ও দেবেন্দ্র বাবু একই ব্যক্তি। কিন্তু কেন দেবেন্দ্র বৈষ্ণবী-বেশে দত্ত গৃহে যাতায়াত করিতেছে, এ কথা জানা সহজ নহে । হীরা মনে মনে অত্যন্ত দুঃসাহসিক সঙ্কল্প করিয়া এই সময়ে স্বয়ং দেবেন্দ্রের গৃহে আসিল । সে গোপনে উদ্যানমধ্যে প্রবেশ করিয়া, জানালার কাছে দাড়াইয়া, দেবেন্দ্রের কথাবাৰ্ত্ত শুনিয়াছিল । সুরেন্দ্রের সঙ্গে দেবেন্দ্রের কথোপকথন অন্তরাল হইতে শুনিয়া হীরা সিদ্ধমনস্কাম হইয় ফিরিয়া যাইতেছিল, যাইবার সময় অসাবধানে খড়খড়ি ফেলিয়া দিয়াছিল —ইহাতেই গোল বাধিল । এখন হীরা পলাইবার জন্য ব্যস্ত। দেবেন্দ্র তাহার হাতে আবার মদের গেলাস দিল । হীরা বলিল, “আপনি খান ।” বলিবামাত্র দেবেন্দ্র তাহা গলাধঃকরণ করিলেন । সেই গেলাস দেবেন্দ্রের পূর্ণ মাত্র হইল—দুই একবার ঢুলিয়া—দেবেন্দ্ৰ শুইয়া পড়িলেন। হীরা তখন উঠিয়া পলাইল । দেবেন্দ্র তখন ঝিমকিনি মারিয়া গায়িতে লাগিল ;–

  • বয়স তাহার বছর ষোল, দেখতে শুনতে কালে কোলো, পিলে অগ্রমাসে মলো ; আমি তখন থানায় পোড়ে ”

সে রাত্রে হীরা আর দত্তবাড়ীতে গেল না ; অাপন গৃহে গিয়া শয়ন করিয়া রহিল । পরদিন প্রাতে গিয়া স্বৰ্য্যমুখীর নিকট দেবেন্দ্রের সংবাদ বলিল । দেবেন্দ্র কুন্দের জন্য বৈষ্ণবী সাজিয়া যাতায়াত করে । কুন্দ ষে নির্দোষী, তাহ হীরাও বলিল না ; স্বৰ্য্যমুখীও বুঝিলেন না। হীরা কেন সে কথা লুকাইল—পাঠক তাহা ক্রমে বুঝিতে পরিবেন। স্বৰ্য্যমুখী দেখিয়াছিলেন, কুনা বৈষ্ণবীর সঙ্গে চুপি চুপি কথা কহিতেছে —সুতরাং স্বৰ্য্যমুখী তাহাকে দোষী মনে করিলেন । হীরার কথা শুনিয়া স্বৰ্য্যমুখীর নীলোৎপললোচন রাঙ্গ হইয়া উঠিল, তাহার কপালে শিরা স্থূলতাপ্রাপ্ত হইয়া প্রকটিত হইল। কমলও সকল শুনিলেন ।