স্বৰ্য্যমুখীকে নিভৃতে লইয়া গিয়া নগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কি ইরাকে বিদায় দিয়াছ?” স্থৰ্যমুখী বলিলেন, “দিয়াছি * অনস্তব হীরা ও কৌশল্যার বৃত্তাস্ত সবিশেষ বিবৃত করিলেন । শুনিয়া নগেন্দ্র বলিলেন, "মরুক ! তুমি কুন্দনন্দিনীকে কি বলিয়াছিলে ?” নগেন্দ্ৰ দেখিলেন, স্থৰ্যমুখীর মুখ শুকাইল । স্বৰ্য্যমুখী অফুটম্বরে বলিলেন, “কি বলিয়াছিলাম?” নী কোন দুৰ্ব্বাক্য ? সুর্য্যমুখী কিয়ৎকাল স্তব্ধ হষ্টয়া রহিলেন । পরে যাহা বলা উচিত, তাহাই বলিলেন । বলিলেন, “তুমি আমার সর্বস্ব । তুমি আমার ইহকাল, তুমি আমার পরকাল! তোমার কাছে কেন আমি লুকাইব ? কখনও কোন কথা তোমার কাছে লুকাই নাই, আজ কেন এক জন পরের কথা তোমার কাছে লুকাইব ? আমি কুন্দকে কুকথা বলিয়াছিলাম। পাছে তুমি রাগ কর বলিয়া তোমার কাছে ভরসা করিয়া বলি নাই । অপরাধ মার্জনা করিও । আমি সকল বলিতেছি ।” তখন স্থৰ্য্যমুখী হরিদাসী বৈষ্ণবীর পরিচয় হটতে কুন্দনন্দিনীর তিরস্কার পর্য্যন্ত অকপটে সকল বিরত করিলেন । . বলিয়া, শেষ কহিলেন, “আমি কুন্দনন্দিনীকে তাড়াইয়। আপনার মরমে আপনি মরিয়৷ তাfছ । দেশে দেশে তাহার তত্ত্বে লোক পাঠাইয়াছি । যদি সন্ধান পাইতাম, ফিরাইয়। আনি তাম । আমার অপরাধ চাইও ন৷ ” নগেন্দ্র তখন বলিলেন, “তোম:র বিশেষ অপরাধ · নই, তুমি যেরূপ কুন্দের কলঙ্ক শুনিয়াছিলে, তাহতে কোন ভদ্রলোকের স্ত্রী তাকে মিষ্ট কথা বলিবে, কি ঘরে স্থান দিবে ? কিন্তু একবার ভাবিলে ভাল হুইত যে, কথাটা সৰু কি না ?” স্বৰ্য্য। তখন সে কথা ভাবি নাই । এখন ভাবিতেছি । ন । ভাবিলে না কেন ? স্বৰ্য্য । আমার মনের ভ্রাস্তি জন্মিয়াছিল । বলিতে বলিতে স্থৰ্যমুখী—পতিপ্রাণী—সাধবী— নগেন্দ্রের চরণপ্রান্তে ভূতলে উপবেশন করিলেন এবং নগেন্দ্রের উভয় চরণ দুই হস্তে গ্রহণ করিয়া নয়ন জলে সিক্ত করিলেন। তখন মুখ তুলিয়া বলিলেন, “প্রাণাধিক তুমি । কোন কথা এ পাপ মনের ভিতর থাকিতে তোমার কাছে লুকাইব না । আমার অপরাধ লইবে না ?” নগেন্দ্র বলিলেন, “তোমায় বলিতে হুইবে না। আমি জানি, তুমি সন্দেহ করিয়াছিলে যে, আমি কুন্দনন্দিনীতে অনুরক্ত ” Sy ৩৭
- স্থৰ্যমুখী নগেঞ্জের, যুগলচরণে মুখ লুকাইয়া, কঁাদিতে লাগিলেন ; আবার সেই শিশির-সিক্ত কমল-তুল্য ক্লিষ্ট মুখমণ্ডল উন্নত করিয়া সৰ্ব্বতঃখাপহারী স্বামিমুখপ্রতি চাহিয়া বলিলেন, “কি বলিব তোমায় ? আমি যে দুঃখ পাইয়াছি, তাহ কি তোমায় বলিতে পারি ? মরিলে পাছে তোমার দুঃখ বাড়ে, এই জঙ্গ, মরি নাই । নহিলে যখন জানিয়াছিলাম, অষ্ঠা তোমার হৃদয় ভাগিনী, আমি তখন মরিতে চাহিয়াছিলাম ; মুখের মরা নহে—যেমন সকলে মরিতে চাহে, তেমন মরা নহে ; আমি যথার্থ আন্তরিক অকপটে মরিতে চাহিয়াছিলাম । আমার অপরাধ লষ্টও না।”
নগেন্দ্র অনেকক্ষণ স্থিরভাবে থাকিয়া, শেষ দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “সূর্যমুখি ! অপরাধ সকলই আমার । তোমার অপরাধ কিছুই নাই । আমি যথার্থ তোমার নিকট বিশ্বাসহন্ত । যথার্থই আমি তোমাকে ভুলিয়া কুন্দনন্দিনীতে— কি বলিব ? আমি যে ষন্ত্রণ পাইয়াছি, যে যন্ত্রণা পাইতেছি, তাহা তোমাকে কি বলিব ; তুমি মনে করিয়াছ, আমি চিত্তদমনের চেষ্টা করি নাই ; এমত ভাবিও না। আমি যত আমাকে তিরস্কার করিয়াছি, তুমি কখনও তত তিরস্কার করিবে না । আমি পাপাত্ম।—আমার চিন্তু বশ হইল না ।” স্বৰ্য্যমুখী আর সহ করিতে পারিলেন না। ষোড়হাত করিয়৷ কাতরস্বরে বলিলেন, “যাহা তোমার মনে থাকে, থাক—আমার কাছে আর বলিও না । তোমার প্রতি কথায় আমার বুকে শেল বিধিতেছে । —আমার অদৃষ্টে যাহা ছিল, তাহ ঘটিয়াছে— আর শুনিতে চাহি না । এ সকল আমার অশ্রাব্য ।” “না, তা নয় স্বৰ্য্যমুখি। আরও শুনিতে হইবে। যদি কথা পাড়িলে, তবে মনের কথা ব্যক্ত করিয়া বলি,—কেন না, অনেক দিন হইতে বলি-বলি করিতেছি । আমি এ সংসার ত্যাগ করিব । মরিৰ ন –কিন্তু দেশাস্তরে যাইব । বাড়ী-ঘর-সংসারে আর মুখ নাই। তোমাতে আমার আল্লখ নাই,— আমি তোমার অযোগ্য স্বামী । আমি আর কাছে থাকিয় তোমাকে ক্লেশ দিব না। কুননন্দিনীকে সন্ধান করিয়া অামি দেশদেশান্তরে ফিরিৰ । তুমি এ গৃহে গৃহিণী থাক । মনে মনে ভাবিও, তুমি বিধবা—যাহার স্বামী এরূপ পামর, সে বিধবা নয় ত কি ? কিন্তু আমি পামর বই আর যা-ই জুই, তোমাকে প্রবঞ্চনা করিব না । আমি অঙ্গাগড়প্রাণ হইয়াছি,—সে কথা তোমাকে স্পষ্ট বলিৰ ;
- می