পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8રે. --ধৰ্ম্মে আমার মন নাই। তবে যে আমি কুলটা মই বলিয়া স্পৰ্দ্ধা করিলাম, তাহার কারণ এই, আমার মনে মনে প্রতিজ্ঞা আছে, আপনার ভাল বাসার লোভে পড়িয়া কলঙ্ক কিনিব না । যদি আপনি আমাকে একটুকুও ভালবাসিতেন, তাহ হইলে আমি এ প্রতিজ্ঞা করিভাম না—আমার ধৰ্ম্মজ্ঞান নাই, ধৰ্ম্মে ভক্তি নাই—আমি আপনার ভালবাসার তুলনায় কলঙ্ককে তৃণজ্ঞান করি। কিন্তু আপনি যেখানে ভালবাসেন ন—সেখানে কি সুখের জন্যে কলঙ্ক কিনিব ? কিসের লোভে আমার গৌরব ছাড়িব ? আপনি যুবতী স্ত্রী হাতে পাইলে কখন ছাড়েন না, এ জন্ত আমার পূজা গ্রহণ করিলেও করিতে পারেন, কিন্তু কালে আমাকে হয় ত ভুলিয়া যাইবেন, নয় ত যদি মনে রাখেন, তবে আমার কথা লইয়া দলবলের কাছে উপহাস করিবেন---এমন স্থানে কেন আমি আপনার বাদী হইব ? কিন্তু যে দিন আপনি আমাকে ভালবাসিবেন, সেই দিন আপনার দাসী হইয়া চরণসেবা করিব।” দেবেন্দ্র হীরার মুখে এই তিন প্রকার কথা শুনিলেন। তাছার চিত্তের অবস্থা বুঝিলেন । মনে মনে ভাবিলেন, “আমি তোমাকে চিনিলাম, এখন কলে নাচাইতে পারি। ষে দিন মনে করিব, সেই দিন তোমার দ্বারা কাৰ্য্যোদ্ধার করিৰ ” এই তাবিয়া চলিয়া গেলেন । দেবেন্দ্র হীরার সম্পূর্ণ পরিচয় পান নি । পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ খোস-খবর বেলা দুই প্রহর । শ্ৰীশ বাবু আপিসে বাহির হুইয়াছেন । বাটীর লোকজন সব আহারাস্তে নিদ্রা যাইতেছে । বৈঠকখানায় চাবী বন্ধ—একটা দোআঁসলাগোছ টেরিয়র বৈঠকখানার বাহিরে পাপোসের উপর পায়ের ভিতর মাথ। রাখিয়া ঘুমাইতেছে । অবকাশ পাইয়া কোন প্রেমময়ী চাকরাণী কোন য়সিক চাকরের নিকট বসিয়া গোপনে তামাকু খাইতেছে, আর ফিসফিস করিয়া বকিতেছে। কমলমণি শয্যাগৃহে বসিয়া পা ছড়াইয়া সুচী হস্তে কার্পেট তুলিতেছেন—কেশবেশ একটু আলুথালু— কোথায় কেহ নাই, কেবল কাছে সতীশ বাবু বলিয়। মুখে অনেক প্রকার শত্ব কহিতেছেন এবং বুকে লাল cशनिय्tइन । गडी* बाबू अवश्य ब्रांडाब निकों হইতে উলগুলি অপহরণ করিবার ষত্ব করিয়াছিলেন, কিন্তু পাহারা বড় কড়াকড় দেখিয়া একটা মৃন্ময় ব্যান্ত্রের মুগুলেহনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। দুরে একটা বিড়াল থাবা পাতিয়া বসিয়া, উভয়কে পৰ্য্যবেক্ষণ করিতেছিল । তাহার তাব অতি গম্ভীর ; মুখে বিশেষ বিজ্ঞতার লক্ষণ ; এবং চিত্ত চাঞ্চল্যশূন্য। বোধ হয়, বিড়াল ভাবিতেছিল, “মানুষের দশ অতি ভয়ানক, সৰ্ব্বদা কার্পেটতোলা, পুতুল খেলা প্রভৃতি তুচ্ছ কাজে ইহাদের মন নিবিষ্ট, ধৰ্ম্ম কৰ্ম্মে মতি নাই, বিড়াল জাতির আহার যোগাইবার মন নাই, অতএব ইহাদের পরকালে কি হইবে ?” অন্যত্র একটা টিক্টিকি প্রাচীরাবলম্বন করিয়া উৰ্দ্ধমুখে একটি মক্ষিকার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছিল । সে-ও মক্ষিকাজাতির ফুশচরিত্রের কথা মনে মনে আন্দোলন করিতেছিল, সন্দেহ নাই। একটি প্রজাপতি উড়িয়া বেড়াইতেছিল। সতীশ বাবু যেখানে বসিয়া সন্দেশ ভোজন করিয়াছিলেন, ঝণকে ঝণকে সেখানে মাছি বসিতেছিল— পিপীলিকারাও সারি দিতে আরম্ভ করিয়াছিল । ক্ষণকাল পরে টিকৃটিকি মক্ষিককে হস্তগত করিতে না পারিয়া অন্যদিকে সরিয়া গেল । বিড়ালও মনুষ্যচরিত্র-পরিবর্তনের কোন লক্ষণ সম্প্রতি উপস্থিত না দেখিয়া, হাই তুলিয়া, ধীরে ধীরে অন্যত্র চলিয়া গেল। প্রজাপতি উড়িয়া বাহির হইয়া গেল । কমলমণিও বিরক্ত হইয়া কার্পেট রাখিলেন এবং সতু বাবুর সঙ্গে আলাপে প্রবৃত্ত হইলেন । কমলমণি বলিলেন, “অ, সতু বাবু, মানুষে আপিসে যায় কেন বলিতে পার ?” সতু বাবু বলিলেন, “ইলি—লি –রি ।” কম । সতু বাবু, কখনও আপিসে যেও না । সতু বলিল, “হাম!” কমলমণি বলিলেন, “তোমার হাস্ করার ভাবনা কি ? তোমার হাম করার জন্ত আপিসে যেতে হবে না। আপিলে যেও না—আপিলে গেলে ৰীে কুপুর বেলা বসে র্কাদুবে ।” সতু বাবু ৰীে কথাটা বুঝিলেন, কেন না কমলমণি সৰ্ব্বদা তাহাকে ভয় দেখাইতেন যে, বেী অম্বিয় মারিবে। সতু বাবু এবার উত্তর করিলেন, “ৰেীমাবে I* কমল বলিলেন, “মনে থাকে যেন, অপিসে গেলে বোঁ মারিবে ।” এইরূপ কথোপকথন কতক্ষণ চলিতে পারিত, তাছা বলা যায় না, কেন না, এই সময়ে এক জন দাসী খুমে চোখ মুছিতে মুছিতে আসিয়া একখালি পত্র