পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

38

  • ভাই! আমাকে ঘৃণা করিও না,-- অথবা সে ভিক্ষাতেই বা কাজ কি ? ঘূণাম্পদকে অবশু ঘৃণা করিবে। আমি এ বিবাহ করব। যদি পৃথিবীর সকলে আমাকে ত্যাগ করে, তথাপি আমি বিবাহ করিব। নচেৎ আমি উন্মাদগ্ৰস্ত হইব-তাহার বড় বাকিও নাই

“এ কথা বলার পর আর বোধ হয়, কিছু বলিবার আবগুক করে না । তোমরাও বোধ হয় ইহার পর আমাকে নিবৃত্ত করিবার জন্য কোন কথা বলিবে না । যদি বল, তবে আমিও তর্ক করিতে প্রস্তুত আছি । “খদি কেহ বলে যে, বিধবা-বিবাহ হিন্দুধৰ্ম্মবিরুদ্ধ, তাহাকে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রবন্ধ পড়িতে দিই । যেখানে তাদৃশ শাস্ত্রবিশারদ মহামহোপাধ্যায় বলেন যে, বিধবা-বিবাহ শাস্ত্রসম্মত, তখন কে ইহা অশাস্ত্র বলিবে ? আর যদি বল, শাস্ত্রসম্মত হইলেও ইহা সমাজসম্মত নহে, আমি এ বিবাহ করিলে সমাজচ্যুত হইব, তাহার উত্তর, এ গোবিন্দপুরে আমাকে সমাজচু্যত করে, কার সাধা ? যেখানে আমিই সমাজ, সেখানে আমার আবার সমাজচ্যুতি কি ? তথাপি আমি তোমাদিগের মনোরক্ষার্থ এ বিবাহ গোপনে রাখিব—আপাততঃ কেহ জানিবে না । “তুমি এ সকল আপত্তি করিবে না। তুমি বলিবে, দুই বিবাহ নীতিবিরুদ্ধ কাজ । ভাই, কিসে জানিলে ইহা নীতিবিরুদ্ধ কাজ ? তুমি এ কথা ইংরেজের কাছে শিথিয়াছ, নচেৎ ভারতবর্ষে এ কথা ছিল না । কিন্তু ইংরেজরা কি অভ্রান্ত ? য়িহদার বিধি আছে বলিয়া ইংরেজদিগের এ সংস্কার-কিন্তু তুমি আমি য়িহুদীবিধি ঈশ্বরবাক্য বলিয়া মানি না। তবে কি হেতুতে এক পুরুষের দুই বিবাহ নীতিবিরুদ্ধ বলিব ? সু, “তুমি বলিবে, যদি এক পুরুষের দুই স্ত্রী হইতে পারে, তবে এক স্ত্রীর দুই স্বামী হয় না কেন ? উত্তর—এক স্ত্রীর দুই স্বামী হইলে অনেক অনিষ্ট ঘটিবার সম্ভাবনা ; এক পুরুষের দুই বিবাহে তাহার সম্ভাবনা নাই ! এক স্ত্রীর দুই স্বামী হইলে সন্তানের পিতৃনিরূপণ হয় না—পিতাই সন্তানের পালনকর্তা— তাহার অনিশ্চয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলত জন্মিতে পারে। কিন্তু পুরুষের দুই বিবাহে সন্তানের মাতার অনিশ্চয়তা জন্মে না । ইত্যাদি আরও অনেক কথা বলা যাইতে পারে । “ধাহা অধিকাংশ লোকের অনিষ্টকারক, তাহাই নীতিবিরুদ্ধ। তুমি যদি পুরুষের দুই বিৰাহ নীতিবিরুদ্ধ বিবেচনা কর, তবে দেখাও যে, ইহা অধিকাংশ লোকের অনিষ্টকর। বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী “গৃহে কলহাদির কথা বলিয়া তুমি আমাকে যুক্তি দিবে। আমি একটা যুক্তির কথা বলিব । আমি নিঃসন্তান, আমি মরিয়া গেলে, আমার পিতৃকুলের নাম লুপ্ত হইবে। আমি এ বিবাহ করিলে সন্তান হইবার সম্ভাবনা—ইহা কি অযুক্তি ? “শেষ আপত্তি—স্বৰ্য্যমুখী । স্নেহময়ী পত্নীর সপত্নীর কণ্টক করি কেন ? উত্তর—স্বৰ্য্যমুখী এ বিবাহে দুঃখিত নহেন তিনিই বিবাহের প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়াছেন—তিনিই ইহাতে আমাকে প্রবৃত্ত করিয়াছেন—তিনিই ইহাতে উদ্যোগী। তবে অীর করি আপত্তি ? ' “তবে কোনূ কারণে আমার এ বিবাহ নিন্দনীয় ?” ষড় বিংশ পরিচ্ছেদ কাহার অ} ত্তি ? কমলমণি পত্র পড়িয়া বলিলেন,—“কোন কারণে নিন্দনীয় ? জগদীশ্বর জানেন, কিন্তু কি ভ্ৰম ! পুরুষে বুঝি কিছুই বুঝে না । যা হোক, মন্ত্রিবর, আপনি সজ্জ করুন । অামীদিগের গোবিন্দপুরে যাইতে হুইবে ।” শ্ৰীশ । তুমি কি বিবাহ বন্ধ করিতে পরিবে ? কমল । ন পারি, দাদার সম্মুখে মরিব । ঐশ । তা পরিবে না । তবে নুতন ভাইজের : কাটিয়া আনিতে পারবে। চল, সেই উদ্দেণ্ঠে झोझै ! তখন উভয়ে গোবিন্দপুর যাত্রার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। পরদিন প্রাতে র্তাহারা নৌকারোহণে গোবিন্দপুর মাত্রা করিলেন । যথাকালে তথায় উপস্থিত হইলেন । বাটতে প্রবেশ করিবার পূৰ্ব্বেই দাসীদিগের এবং পল্লীস্থ স্ত্রীলোকদিগের সহিত সাক্ষাৎ হইল, অনেকেই কমলমণিকে নৌকা হইতে লইতে আসিল । বিবাহ হইয়া গিয়াছে কি না, জানিবার জন্য র্তাহার ও তাহার স্বামীর নিতান্ত ব্যগ্রতা জন্মিয়াছিল, কিন্তু দুই জনের কেহই এ কথা কাহাকেও জিজ্ঞাসা করিলেন না—এ লজ্জার কথ। কি প্রকারে অপর লোককে মুখ ফুটিয়া জিজ্ঞাসা করেন ? অতি ব্যস্তে কমলমণি অস্তঃপুরে প্রবেশ করি লেন ; এবার সতীশ যে পশ্চাৎ পড়িয়া রছিল, তাহ ভুলিয়া গেলেন । বাটীর ভিতর প্রবেশ করিয়া ।