পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

瑟、營。 鬆 攀y ..সাধী স্ত্রী ;-এ সকল এক জনের ভাগ্যে প্রায় ঘটে লা। নগেন্দ্রের এ সকলই ঘটিয়াছিল। প্রধানপক্ষে, লগেন্দ্র নিজ চরিত্রগুণেই চিরকাল সুখী ; তিনি সত্যবাদী, অথচ প্রিয়ংবদ ; পরোপকারী, অথচ ন্যায়নিষ্ঠ ; দাতা, অথচ মিতব্যস্ত্রী ; স্নেহশীল, অথচ কৰ্ত্তব্যকৰ্ম্মে স্থিরসংকল্প । পিতামাত বৰ্ত্তমান থাকিতে র্তাহাদিগের নিতাস্ত ভক্ত এবং প্রিয়কারী ছিলেন ; ভাৰ্য্যার প্রতি নিতান্ত অমুরক্ত ছিলেন ; বন্ধুর হিতকারী ; ভূত্যের প্রতি কৃপাবান্‌ ; অনুগতের প্রতিপালক ; শত্রুর প্রতি বিষাদপূন্ত। তিনি পরামর্শে বিজ্ঞ ; কাৰ্য্যে সরল ; আলাপে নম্র ; রহস্তে বাত্ময় । এরূপ চরিত্রের পুরস্কারই অবিচ্ছিন্ন সুখ ;-নগেন্দ্রের অশৈশব তাঁহাই ঘটিয়াছিল। র্তাহার দেশে সম্মান, বিদেশে যশঃ ; অনুগত ভৃত্য ; প্রজাগণের সন্নিধানে ভক্তি ; স্বৰ্য্যমুখীর নিকট অবিচলিত, অপরিমিত অকলুষিত স্নেহরাশি। যদি তাহার কপালে এত সুখ না ঘটিত, তবে তিনি কখনও এত দুঃখী হইতেন না । দুঃখী না হইলে লোভে পড়িতে হয় না । যাহার বাহাতে অভাব, তাঙ্গার তাহাতেই লোভ ৷ কুন্দনন্দিনীকে লুব্ধলোচনে দেখিবার পূৰ্ব্বে নগেন্দ্র কখনও লোভে পড়েন নাই, কেন না, কখনও কিছুরই অভাব জানিতে পারেন নাই । সুতরাং লোভসংবরণ করিবার জন্য যে মানসিক অভ্যাস বা শিক্ষা আবগুক, তাহা তাহার হয় নাই । এই জন্যই তিনি চিত্তসংযমে প্রবৃত্ত হইয়াও সক্ষম হইলেন না। অবিছিন্ন সুখ, দুঃখের মূল ; পূৰ্ব্বগামী দুঃখ ব্যতীত স্থায়ী মুখ জন্মে না ; নগেন্দ্রের যে দোষ নাই, এমন বলি না। র্তাহার দোষ গুরুতর ; প্রায়শ্চিত্তও গুরুতর আরম্ভ হইল । ত্রিংশ পরিচ্ছেদ অন্বেষণ বলাবাহুল্য যে, যখন স্থৰ্যমুখীর পলায়নের সংবাদ গৃহমধ্যে রাষ্ট্র হইল, তখন তাহার অন্বেষণে লোক পাঠাইবার বড় তাড়াতাড়ি পুড়িয়া গেল। নগেন্দ্র ষ্টারিদিকে লোক পাঠাইলেন, শ্ৰীশচন্দ্র লোক পাঠাইেৈলন, কমলমণি চারিদিকে লোক পাঠাইলেন। বড় বড় দাসীরা জলের কলসী ফেলিয় ছুটিল ; হিন্দুস্থানী ধীয়বানের বঁাশের লাঠি হাতে করিয়া, তুলাভর :ফরাসীর ছিটের মেরজাই গায়ে দিয়া, মস মস করিয়া নাগরা জুতার শব্দ করিয়া চলিল—খানসামার৷ বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ب : ي. يبية

  • *** . .:ম;

গামছা কাধে, গোট কাকালে, মাতাঠাকুরাণীকে ফিরাতে চলিল। কতকগুলি আত্মীয় লোক গাড়ী লইয়া বড় রাস্তায় গেল । গ্রামস্থ লোক মাঠে ঘাটে খুজিয়া দেখিতে লাগিল ; কোথাও বা গাছতলায় কমিট করিয়া তামাকু পোড়াইতে লাগিল। ভদ্রলোকেরাও বারোইয়ারির আটচালায়, শিবের মন্দিরের রকে, ন্যায়ুকচ কচি ঠাকুরের টোলে এবং অন্যান্য তথাবিধ স্থানে বসিয়া ঘোট করিতে লাগিলেন । মাগী-ছাগী স্নানের ঘাটগুলাকে ছোট আদালত করিয়া তুলিল । বালকমহলে ঘোর পর্বাহ বাধিয়া গেল, অনেক ছেলে ভরসা , করিতে লাগিল, পাঠশালার ছুটী হুইবে । প্রথমে ক্রীশচন্দ্র নগেন্দ্র এবং কমলকে ভরসা দিতে লাগিলেন, “তিনি কখনও পথ হাটেন নাই—কতদূর যাইবেন ? এক পোওয়া আধ ক্রোশ পথ গিয়া কোথায় বসিয়া আছেন, এখনই সন্ধান পাইব ।” কিন্তু যখন তিন ঘণ্টা অতীত হইল, অথচ স্বৰ্য্যমুখীর কোন সংবাদ পাওয়া গেল না, তখন নগেন্দ্র স্বয়ং তাহার সন্ধানে বাহির হইলেন । কিছুক্ষণ রৌদ্রে পুড়িয়া মনে করিলেন, “আমি খুজিয়৷ বেড়াইতেছি, কিন্তু হয় ত স্বর্যমুখীকে এতক্ষণ বাড়ী আনিয়াছে।” এই বলিয়া ফিরিলেন। বাড়ী আসিয়া দেখিলেন, স্বৰ্য্যমুখীর কোন সংবাদ নাই । আবার বাহির হইলেন । আবার ফিরিয়া বাড়ী আসিলেন । এইরূপে দিনমান গেল। বস্তুতঃ খ্ৰীশচন্দ্র যাহা বলিয়াছিলেন, তাহী সত্য । স্থৰ্যমুখী কখনও পদব্রজে বাটীর বাহির হুয়েন নাই । কত দূর যাইবেন ? বাট হইতে অৰ্দ্ধক্রোশ দূরে একটা পুষ্করিণীর ধারে আম্রবাগানে শয়ন করিয়াছিলেন । এক জন খানসামা, ষে অস্তঃপুরে যাতায়াত করিত, সেই সন্ধান করিতে করিতে সেইখানে আসিয়া তাহাকে দেখিল । চিনিয়া বলিল,—“আজ্ঞে, আসুন ।” স্বৰ্য্যমুখী কোন উত্তর করিলেন না । সে আবার বলিল, “আঞ্জে, আমুন!” বাড়ীতে সকলে বড় ব্যস্ত হইয়াছেন " তখন স্বৰ্য্যমুখী ক্রোধভরে কছিলেন, “আমাকে ফিরাইবার তুই কে ?” খানসামা ভীত হইল। তথাপি সে দাড়াইয়া রহিল । স্বৰ্য্যমুখী তাহাকে কহিলেন, “তুই যদি এখানে দাড়াইবি ; তবে এই পুষ্করিণীর জলে আমি ডুবিয়া মরিব।” খানসামা কিছু করিতে না পারিয়া দ্রুত গিল্প নগেন্দ্রকে সংবাদ দিল । নগেন্দ্র শিবিক লইয়া স্বয়ং সেইখানে আসিলেন। কিন্তু তখন আর স্বৰ্য্যমুখীকে সেখানে পাইলেন না। নিকটে অনুসন্ধান করিলেন, কিন্তু কিছুই হইল না ।