পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখের কাছে আনিয়া উভয়ে তাহাকে বিশেষ করিয়া দেখিলেন । দেখিলেন, স্ত্রীলোকটি প্রাচীন নহে । কিন্তু এখন তাহার শরীরের যেরূপ অবস্থা, তাহাতে তাহার বয়স অনুভব করা যায় না। তাহার শরীর অত্যন্ত শীর্ণ— সাংঘাতিক পীড়ার লক্ষণযুক্ত। সময়-বিশেষে তাহার সৌন্দর্য্য ছিল— এমন হইলেও হইতে পারে ; কিন্তু এখন সৌন্দর্য্য কিছুমাত্র নাই। আর্দ্রবস্ত্র অত্যন্ত মনি ;–এবং শত স্থানে ছিন্নবিচ্ছিন্ন । আলুলায়িত আৰ্দ্ৰ কেশ চিরব্রুক্ষ । চক্ষু কোটরপ্রবিষ্ট, এখন সে নিমীলিত। নিশ্বাস বহিতেছে; কিন্তু সংজ্ঞা নাই । বোধ হইল, যেন মৃত্যু নিকটে । হরমণি জিজ্ঞাসা করিল, পেলেন ?” ব্ৰহ্মচারী সবিশেষ পরিচয় দিয়া বলিলেন, “हैशद्र মৃত্যু নিকট দেখিতেছি । কিন্তু তাপ-সেক করিলে বাচিলেও বঁচিতে পারে । আমি যেমন বলি, তাই করিয়া দেখ " তখন হরমণি ব্রহ্মচারীর আদেশমত, তাহাকে আর্দ্র বস্ত্রের পরিবর্তে আপনার একখানি শুষ্ক বস্ত্র কৌশলে পরাইল । শুষ্ক বস্ত্রের দ্বারা তাহার অঙ্গের এবং কেশের জল মুছাইল । পরে অগ্নি প্রস্তুত করিয়া তাপ দিতে লাগিল। ব্ৰহ্মচারী বলিলেন, “বোধ হয়, অনেকক্ষণ অবধি অনাহারে অাছে। যদি ঘরে ফুধ থাকে, তবে একটু একটু ক’রে দুধ খাওয়াইবার চেষ্টা দেখ * হরমণির গোরু ছিল—ঘরে দুপও ছিল । দুধ তপ্ত করিয়া অল্প অল্প করিয়া স্ত্রীলোকটিকে পান করাইতে লাগিল । স্ত্রীলোক তাহ পান করিল। উদরে দুগ্ধ প্রবেশ করিলে, সে চক্ষু উল্মীলিত করিল। দেখিয়া হরমণি জিজ্ঞাসা করিল, “ম, তুমি কোথ। থেকে আসিতেছিলে গা ?” সংজ্ঞালব্ধ স্ত্রীলোক কহিল,—“আমি কোথা ?” ব্ৰহ্মচারী কহিলেন, “তোমাকে পথে অবস্থায় দেখিয়া এখানে আনিয়াছি ! তুমি কোথা যাইবে ?” স্ত্রীলোক বলিল, “অনেক দুর ” হরমণি । তোমার হাতে রুলি রয়েছে । তুমি কি সধবা ? পীড়িতা ক্রভঙ্গী করিল। “বাছা, তোমায় কি বলিয়া ডাকিব ? তোমার নাম কি ?” অনাথিনী কিঞ্চিৎ ইতস্ততঃ করিয়া কহিল, “আমার নাম স্বৰ্য্যমুখী |" “একে কোথায় বিষবৃক্ষ 丝枪 পঞ্চত্রিংশত্তম পরিচ্ছেদ অাশাপথে স্বৰ্য্যমুখীর বাচিবার আশা ছিল না। ব্রহ্মচারী - র্তাহার পীড়ার লক্ষণ বুঝিতে না পারিয়া পরদিন . প্রাতে গ্রামস্থ বৈদ্যকে ডাকাইলেন। . . রামকৃষ্ণ রায় বড় বিজ্ঞ । বৈদ্যশাস্ত্রে বড় পণ্ডিত : চিকিৎসাতে গ্রামে র্তাহার বিশেষ যশঃ ছিল । তিনি পীড়ার লক্ষণ দেখিয়া বলিলেন, “ইহার কাস রোগ । তাহার উপর জর হইতেছে। পীড়া সাজঘাতিক বটে । তবে বঁচিলেও বঁাচিতে পারেন ।” - এ সকল কথা স্থৰ্যমুখীর অসাক্ষাতে হুইল ,3 বৈদ্য ঔষধের ব্যবস্থা করিলেন—অনাথিনী দেখিয়া : পারিতোষিকের কথাটি রামকৃষ্ণ রায় উত্থাপন করি- , লেন না । রামকৃষ্ণ রায় অর্থাপশাচ ছিলেন না। বৈদ্য বিদায় হইলে, ব্রহ্মচারী হরমণিকে কাৰ্য্যাস্তরে প্রেরণ করিয়া, বিশেষ কথোপকথনের জন্য স্থৰ্যমুখীর নিকট বসিলেন । স্থৰ্য্যমুখী বলিলেন, “ঠাকুর । আপনি আমার জন্য এত ষত্ব করিতেছেন কেন ? আমার জন্য ক্লেশের প্রয়োজন নাই ।” ব্ৰহ্ম । আমার ক্লেশ কি ? এই আমার কার্য্য । আমার কেহ নাই । আমি ব্রহ্মচারী । পরোপকার আমার ধৰ্ম্ম । আজ যদি তোমার কাজে নিযুক্ত ন৷ থাকিতাম, তবে তোমার মত অন্ত কাহারও কাজে থাকিতাম । সূৰ্য্য। তবে, আমাকে রাখিয়া, আপনি অন্য কাহারও উপকারে নিযুক্ত হউন। আপনি অন্তের উপকার করিতে পারিবেন,—আমার আপনি উপকার করিতে পারিবেন না । . . ব্ৰহ্ম কেন ? স্বৰ্য্য । বাচিলে আমার উপকার নাই। মরাই আমার মঙ্গল । কা’ল রাত্রে যখন পথে পড়িয়া- . যুযুধু ছিলাম—তখন নিতান্ত আশা করিয়াছিলাম যে, মরিব । আপনি কেন আমাকে বাচাইলেন ? ব্ৰহ্ম । তোমার এত কি দুঃখ, তাহা আমি জানি । নী—কিন্তু দুঃখ যতই হোক না কেন, আত্মহত্য মন্থা- . পাপ । কদাচ আত্মহত্যা করিও না। আত্মহত্য পরন্থত্যাতুল্য পাপ । স্বৰ্য্য। আমি আত্মহত্যা করিবার চেষ্টা করি । নাই। আমার মৃত্যু আপনি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল—এই জন্য ভরসা করিতেছিলাম। কিন্তু, মরণেও আমার আনন্দ নাই । .*