পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবৃক্ষ অঙ্গুলির দ্বারা কর্ণবিলম্বী রত্নভূষা খুলিতেছেন, লজ্জায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘৰ্ম্ম হইতেছে, দুঃখে চক্ষে জল আসিতেছে । কোrধ নাসারন্ধ কিম্বলারিত ইতেছে, অধর দংশন করিতেছেন ; এই অবস্থায় চিত্রকর র্তাহীকে লিথিয়াছেন । পশ্চাতে দাড়াইয়া, স্বর্ণপ্রতিমারূপিণী রুক্মিণী দেখিতেছেন। র্তাহারও মুখ বিমর্ষ। তিনিও আপনার অঙ্গের অলঙ্কার খুলিয়া সত্যভামাকে দিতেছেন । কিন্তু তাহার চক্ষু শ্ৰীকৃষ্ণের প্রতি ; তিনি স্বামিপ্রতি অপাঙ্গে দৃষ্টিপাত করিয়া, ঈষন্মাত্র অধরপ্রাস্তে হাসি হাসিতেছেন, কিন্তু শ্ৰীকৃষ্ণ সেই হাসিতে সপত্নীর আনন্দ সম্পূর্ণ দেখিতে পাইতেছেন। শ্ৰীকৃষ্ণের মুখ গম্ভীর, স্থির, ষেন কিছুই জানেন না ; কিন্তু তিনি অপাঙ্গে রুক্মিণীর প্রতি দৃষ্টি করিতেছেন, সে কটাক্ষেও একটু হাসি আছে। মধ্যে শুভ্ৰবসন, শুভ্রকাস্তি দেবর্ষি নারদ ; তিনি বড় আনন্দিতের স্তায় সকল দেখিতেছেন, বাতাসে র্তাহার উত্তরীয় এবং শ্মশ্র উড়িতেছে । চারিদিকে বহুসংখ্যক পৌরবর্গ নানাপ্রকার বেশভূষা ধারণ করিয়া আলো করিয়া রহিয়াছে । বহুসংখ্যক ভিক্ষুক ব্রাহ্মণ আসিয়াছে। কত কত পুররক্ষিগণ গোল থামাইতেছে। এই চিত্রের নীচে স্বৰ্য্যমুখী স্বহস্তে লিখিয়া রাখিয়াছেন, “যেমন কৰ্ম্ম তেমনই ফল। স্বামীর সঙ্গে সোণারূপার তুলা ?” নগেন্দ্র যখন কক্ষমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন, তখন রাত্রি দ্বিপ্রহর অতীত হইয়াছিল । রাত্রি অতি ভয়ানক। সন্ধ্যার পর হইতে অল্প অল্প বৃষ্টি হইয়াছিল এবং বাতাস উঠিয়াছিল। এক্ষণে ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি হইতেছিল, বায়ু প্রচণ্ড বেগধারণ করিয়াছিল। গৃহের কবাট যেখানে যেখানে মুক্ত ছিল, সেইখানে সেইখানে বজ্ৰতুল্য শব্দে তাহার প্রতিঘাত হুইতেছিল । সার্সীসকল ঝন ঝন শব্বে শদিত হইতেছিল। নগেন্দ্র শষ্যাগৃহে প্রবেশ করিয়া দ্বার রুদ্ধ করিলেন । তখন বাত্যানিনাদ মন্দীভূত হইল। খাটের পাখে আর একটি দ্বার খোলা ছিল—সে দ্বার দিয়া বাতাস আসিতেছিল না, সে দ্বার মুক্ত রছিল । নগেন্দ্ৰ শয্যাগৃহে প্রবেশ করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া, একখানি সোফার উপর শয়ন করিলেন । নগেন্দ্র তাহাতে বসিয়া কত যে কাদিলেন, তাহা কেহ জানিল না। কতবার স্বৰ্য্যমুখীর সঙ্গে মুখামুখি করিয়া সেই সোফার উপর বলিয়া কত সুখের কথা } ২২ আজিও আবীরের চিহ্ন রহিয়াছে । ఆు নগেন্দ্র ভূয়োভূয়ঃ সেই অচেতন আসনকে চুনী লিঙ্গন করিলেন। আবার মুখ তুলিয়া স্বৰ্য্যমুখীর প্রিয় চিত্রগুলির প্রতি চাহিয়া দেখিলেন। গৃছে উজ্জল দীপ জলিতেছিল—তাহার চঞ্চলরশ্মিতে সেই সকল চিত্ৰপুত্তলি সজীব দেখাইতেছিল । প্রতিচিত্রে নগেন্দ্র স্বৰ্য্যমুখীকে দেখিতে লাগিলেন । তাহার মনে পড়িল যে, উমার কুসুমসজ্জা দেখিয়া স্বৰ্য্যমুখী এক দিন আপনি ফুল পরিতে সাধ করিয়াছিলেন। তাহাতে নগেন্দ্র আপনি উদ্যান হইতে পুষ্পচয়ন করিয়া আনিয়া স্বহস্তে স্বৰ্য্যমুখীকে কুসুমময়ী সাজাইয়াছিলেন, তাহাতে স্থৰ্য্যমুখী ষে কত মুখী হইয়াছিলেন—কোন রমণী রত্নময়ী সাজিয়া তত সুখী হয় ? অার এক দিন সুভদ্রার সারথ্য দেখিয়া স্বৰ্য্যমুখী নগেন্দ্রের গাড়ী হাকাইবার সাধ করিয়াছিলেন । পত্নীবৎসল নগেন্দ্র তখনই একখানি ক্ষুদ্র যানে দুইটি ছোট ছোট বৰ্ম্ম জুড়িয়া অন্তঃপুরের উদ্যানমধ্যে স্বৰ্য্যমুখীর সারথ্যজন্য আনিলেন । উভয়ে তাহাতে আরোহণ করিলেন । স্বৰ্য্যমুখী বল্প ধরিলেন । অশ্বের আপনি চলিল। দেখিয়া স্বৰ্য্যমুখী সুভদ্রার মত নগেন্দ্রের দিকে মুখ ফিরাইয়া দংশিতাধরে টিপি টিপি হাসিতে লাগিলেন । এই অবকাশে অশ্বের ফটক নিকটে দেখিয় একেবারে গাড়ী লইয়া বাহির হইয়া সদর রাস্তায় গেল । তখন স্বৰ্য্যমুখী লোকলজ্জায় ম্ৰিয়মাণা হইয়া ঘোমটা টানিতে লাগিলেন । র্তাহার দুর্দশা দেখিয়া নগেন্দ্র নিজহস্তে বল্লা ধারণ করিয়া গাড়ী অন্তঃপুরে ফিরাইয়া আনিলেন এবং উভয়ে অবতরণ করিয়া কত হাসি হাসিলেন । শষ্যাগৃহে আসিয়া স্বৰ্য্যমুখী সুভদ্রার চিত্রকে একটি কিল দেখাইয়া বলিলেন, “তুই সৰ্ব্বনাশীই ত যত আপদের গোড়া " নগেন্দ্র ইহা মনে করিয়া কত কাদিলেন । আর যন্ত্রণ সহ্য করিতে না পারিয়া গাত্ৰোখান করিয়া পদচারণ করিতে . লাগিলেন। কিন্তু যে দিকে চাহেন—সেই দিকেই স্বৰ্য্যমুখীর চিহ্ন। দেওয়ালে চিত্রকর ষে লতা লিখিয়াছিল—স্বৰ্য্যমুখী তাহার অনুকরণমানসে একটি লতা লিখিয়াছিলেন । তাহা তেমনি বিদ্যমান রহিয়াছে। এক দিন দোলে, স্বৰ্য্যমুখী : স্বামীকে কুকুম ফেলিয়া মারিয়াছিলেন–কুকুম নগেন্দ্রকে না লাগিয়া দেওয়ালে লাগিয়াছিল। গৃহ প্রভত