পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* হইলে স্বৰ্য্যমুখী এক স্থানে স্বহস্তে লিখিয়া রাখিয়া" ছিলেন—

  • ১৯১০ সম্ববৎসরে

ইষ্টদেবতা স্বামীর স্থাপন জন্য এই মন্দির র্তাহীর দাসী সূৰ্য্যমুখী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হইল।” নগেন্দ্র ইহা পড়িলেন । নগেন্দ্র কতবার পড়িলেন, —পড়িয়া আকাঙ্ক্ষা পূরে না-চক্ষের জলে দৃষ্টি পুনঃ পুনঃ লোপ পাইতে লাগিল-চক্ষু মুছিয়া মুছিয়া পড়িতে লাগিলেন। পড়িতে পড়িতে দেখিলেন, ক্রমে আলোক ক্ষীণ হুইয়া আসিতেছে । ফিরিয়া দেখিলেন, দীপ নিৰ্ব্বাণোন্মুখ । তখন নগেন্দ্র নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া, শয্যায় শয়ন করিতে গেলেন। শয্যায় উপ&রেশন করিবামাত্র অকস্মাৎ প্রবলবেগে বৰ্দ্ধিত হইয়৷ :ধটিকা ধাৰিত হইল ; চারিদিকে কবাটতাড়নের fশব হইতে লাগিল। সেই সময়ে, শূন্তভৈল দীপ প্রায় নিৰ্ব্বাণ হইল—অল্পমাত্র খদ্যোতের ন্যায় আলো বহিল। সেই অন্ধকারতুল্য আলোতে এক অদ্ভুত ব্যাপার তাহার দৃষ্টিপথে আসিল । ঝঞ্চাবাতের শব্দে চমকিত হইয়া, খাটের পাশে যে দ্বার মুক্ত ছিল, সেই দিকে তাহার দৃষ্টি পড়িল । সেই মুক্তদ্বারপথে, ক্ষীণালোকে, এক ছায়াতুল্য মূৰ্ত্তি দেখিলেন । ছায়া স্ত্রীরূপিণী, কিন্তু আরও যাহা দেখিলেন, তাহাতে নগেন্দ্রের শরীর কণ্টকিত এবং হস্তপদাদি কম্পিত হইল। স্ত্রীরূপিণী মূৰ্ত্তি স্থৰ্যমুখীর অবয়ববিশিষ্ট । নগেন্দ্র যেমন চিনিলেন যে, এ স্বৰ্য্যমুখীর ছায়া— অমনি পর্যাঙ্ক হইতে ভূতলে পড়িয়া ছায়াপ্রতি ধাবমান হইতে গেলেন। ছায় অদৃপ্ত হইল। সেই সময়ে আলো নিবিল। তখন নগেন্দ্র চীৎকার করিয়া ভূতলে পড়িয়া মুছিত হইলেন । বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী পঞ্চসত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ الجفنة ছায়া # * * যখন নগেন্দ্রের চৈতন্যপ্রাপ্তি হইল, তখনও শষ্য+ গৃহে নিবিড়ান্ধকার, ক্রমে ক্রমে র্তাহার সংজ্ঞা পুনঃ সঞ্চিত হইতে লাগিল। যখন মূৰ্ছার কথা সকল স্মরণ হইল, তখন বিস্ময়ের উপর আরও বিস্ময় জন্মিল। তিনি ভূতলে মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তবে তাহার শিরোদেশে উপাধান কোথা হইতে আসিল? আবার এক সন্দেহ—এ কি বালিস ? বালিস স্পর্শ করিয়া দেখিলেন—এ ত বালিস নহে । কোন মনুষ্যের উরুদেশ। কোমলতায় বোধ হইল, স্ত্রীলোকের উরুদেশ। কে আসিয়া মূচ্ছিত অবস্থায় তাহার মাথা তুলিয়। উরুতে রাখিয়াছে ? এ কি কুন্দনন্দিনী ? সন্দেহভঞ্জনার্থ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে তুমি ?” তখন শিরোরক্ষাকারিণী কোন উত্তর দিল না—কেবল দুই তিন বিন্দু উষ্ণ বারি নগেন্দ্রের কপোলদেশে পড়িল । নগেন্দ্ৰ বুঝিলেন, যেই হউক, সে র্কাদিতেছে। উত্তর না পাইয়া নগেন্দ্র তাহার অঙ্গস্পর্শ করিলেন। তখন অকস্মাৎ নগেন্দ্ৰ বুদ্ধিদ্রষ্ট হইলেন, তাহার শরীর রোমাঞ্চিত হইল। তিনি নিশ্চেষ্ট জড়ের মত ক্ষণকাল পড়িয়া রহিলেন। পরে ধীরে ধীরে রুদ্ধনিঃশ্বাসে রমণীর উরুদেশ হইতে মাথা তুলিয়া বসিলেন । এখন ঝড়বৃষ্টি থামিয়া গিয়াছিল । আকাশে আর মেঘ ছিল না-পুৰ্ব্বদিকে প্রভাতোদয় হইতেছিল। বাহিরে বিলক্ষণ আলোক প্রকাশ পাইয়াছিল–গৃহমধ্যেও আলোকরঞ্জ দিয়া অল্প অল্প আলোক আসিতেছিল। নগেন্দ্র উঠিয়া বসিয়া দেখিলেন যে, রমণী গাত্ৰোখান করিল-ধীরে ধীরে দ্বারোদেশে চলিল । নগেন্দ্র তখন অনুভব করিলেন, এ ত কুন্দনন্দিনী নহুে g তখন এমন আলো নাই যে, মানুষ চিনিতে পারা যায়। কিন্তু আকার ও ভঙ্গী কতক কতক উপলব্ধ হইল। আকার ও ভঙ্গী নগেন্দ্র মুহূৰ্ত্তকাল বিলক্ষণ করিয়া দেখিলেন । দেখিয়া, সেই দণ্ডায়মান স্ত্রীমূৰ্ত্তির পদতলে পতিত হইলেন । কাতরস্বরে অশ্রুপরিপূর্ণলোচনে বলিলেন, “দেবীই হও, আর মানুষীই হও, তোমার পায়ে পড়িতেছি, আমার সঙ্গে একবার কথা কও । নচেৎ আমি মরিব ।” রমণী কি বলিল, কপালদোষে নগেন্দ্র তাহা বুঝিতে পারিলেন না। কিন্তু কথার শব্দ যেন নগেন্দ্রের কর্ণে প্রবেশ করিল, অমনি তিনি তীৱৰৎ দাড়াইয়া উঠিলেন।