পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧. পৌছিলাম, তখন এক প্রহর রাত্রি। দেখিলাম, তখনও খিড়কী-ফুয়ার খোলা । গৃহমধ্যে প্রবেশ করি & লাম—কেহ আমাকে দেখিল না। সিড়ির নীচে লুকাইয়া রছিলাম। পরে সকলে শুইলে, সিঁড়িতে * উঠিলাম ; মনে ভাবিলাম, তুমি অবগু এই ঘরে শয়ন করিয়া আছ। দেখিলাম, এই দুয়ার খোলা । দুষ্কারে উকি মারিয়া দেখিলাম—তুমি মাথায় হাত দিয়া বসিয়া আছ। বড় সাধ হইল, তোমার পায়ে লুটাইয়া পড়ি–কিন্তু আবার কত ভয় হইল—তোমার কাছে য়ে অপরাধ করিয়াছি—তুমি যদি ক্ষমা ন৷ কর ? আমি ত তোমাকে কেবল দেখিয়াই তৃপ্ত। কৰাটের আড়াল হইতে দেখিলাম ; ভাবিলাম, এই সময়ে দেখা দিই । দেখা দিবার জন্ত আসিতেছিলাম –কিন্তু দুয়ারে আমাকে দেখিয়াই তুমি অচেতন হইলে । সেই অবধি কোলে লইয়া বসিয়া আছি। এ সুখ ষে আমার কপালে হইবে, তাহা জানিতাম না। কিন্তু ছি ! তুমি আমায় ভালবাস না । তুমি আমার গায়ে হাত দিয়াও আমাকে চিনিতে পার নাই—আমি তোমার গায়ের বাতাস পাইলেই ,*蒙

  • চিনিতে পারি ”

প্রাণসংহারক কথোপকথন হুইতেছিল। সপ্তচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ সরল এবং সপী যখন শয়নাগারে, মুখসাগরে ভাসিতে ভাসিতে নগেন্দ্র ও স্বৰ্য্যমুখী এই প্রাণস্নিগ্ধকর কথোপকথন করিতেছিলেন, তখন সেই গৃহের অংশাস্তরে এক কিন্তু তৎপূৰ্ব্বে, পুর্বরাত্রের কথা বলা আবশুক । বাট আসিয়া নৃগেন্দ্র কুন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন না। কুনা আপন শয়নাগারে, উপাধানে মুখ ন্যস্ত করিয়া সমস্ত রাত্রি রোদন করিল । কেবল বালিকাস্থলভ রোদন নহে—মৰ্ম্মাস্তিক পীড়িত হুইয়া রোদন করিল। যদি কেহ কাহাকে বাল্যকালে অকপটে আত্মসমর্পণ করিয়া, যেখানে অমূল্য হৃদয় দিয়াছিল, সেখানে তাহার বিনিময়ে কেবল তাচ্ছল্য প্রাপ্ত হইতে থাকে, তবে সেই এই রোদনের মৰ্ম্মচ্ছেদকতা অনুভব করিৰে । তখন কুন্দ পরিতাপ করিতে লাগিল যে, কেন অামি স্বামিদর্শনলালসায় প্রাণ রাখিয়াছিলাম ?” আরও ভাবিল যে, “এখন আর কোনূ মুখের আশায় প্রাণ রাখি ?" সাক্ষাভের পর গোবিন্দপুরে আসিলাম। যখন এখানে সমস্ত রাত্রি জাগরণ এবং রোদনের পর প্রভাতকালে কুদের তন্ত্র আসিল । কুন্দ তন্ত্রাভিভূত হইয়া দ্বিতীয়বার লোমহর্ষণ স্বপ্ন দেখিল ** - g দেখিল, চারি বৎসর পূৰ্ব্বে পিতৃভবনে পিতার মৃত্যুশয্যাপার্শ্বে শয়নকালে যে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী মূৰ্ত্তি তাহার মাতার রূপ ধারণ করিয়া স্বপ্নাভিভূত হইয়াছিলেন, এক্ষণে সেই আলোকময়ী প্রশান্তমূৰ্ত্তি আবার কুনের মস্তকোপরি অবস্থান করিতেছেন । কিন্তু এবার তিনি বিশুদ্ধ শুভ্র চন্দ্রমণ্ডলমধ্যবৰ্ত্তিনী নহেন। এক অতি নিবিড় বর্ষণোন্মুখ নীল নীরদমধ্যে আরোহণ করিয়া অবতরণ করিতেছেন । র্তাহার চতুস্পার্থে অন্ধকারময় কৃষ্ণবাম্পের তরঙ্গ উৎক্ষিপ্ত হইতেছে, সেই অন্ধকারমধ্যে এক মনুষ্যমূৰ্ত্তি অল্প অল্প হাসিতেছে । তন্মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে সৌদামিনী প্রভাসিত হইতেছে । কুন্দ সভয়ে দেখিল যে, ঐ হাস্তনিরত বদনমণ্ডল হীরার মুখানুরূপ। আরও দেখিল, মাতার করুণাময়ী কাস্তি এক্ষণে গভীরভাবাপন্ন মাত কহিলেন, “কুন্দ । তখন আমার কথা শুনিলে না, আমার সঙ্গে আসিলে না—এখন দুঃখ দেখিলে ত?” কুন্দ রোদন করিল। তখন মাতা পুনরপি কহিলেন, “বলিয়ছিলাম, আর একবার আসিব ; তাই আবার আসিলাম । এখন যদি সংসারসুখে পরিতৃপ্তি জন্মিয় থাকে, তবে আমার সঙ্গে চল ।” তখন কুন্দ কাদিয় কহিল, “মা, তুমি আমাকে সঙ্গে লইয়া চল । আমি আর এখানে থাকিতে চাহি ন! ” ইহা শুনিয়া মাতা প্রসন্ন হইয়া বলিলেন, “তবে আইস ” এই বলিয়া তেজোময়ী অন্তৰ্হিতা হইলেন । নিদ্রাভঙ্গ হইলে, কুন্দ স্বপ্ন স্মরণ করিয়া দেবতার নিকট ভিক্ষা চাহিল যে, “এবার আমার স্বপ্ন সফল হউক ৷” প্রাতঃকালে হীর কুন্দের পরিচর্য্যার্থ সেই গৃহে প্রবেশ করিল। দেখিল, কুন্দ কাদিতেছে । , কমলমণির অসি অবধি হীরা কুনের নিকট বিনীতভাব ধারণ করিয়াছিল । নগেন্দ্র আসিতেছেন, এই সংৰাই ইহার কারণ। পূৰ্ব্বপরুষব্যবহারের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ বরং হীরা, পূৰ্ব্বাপেক্ষাও কুনের প্রিয়বাদিনী ও আজ্ঞাকারিণী হইয়াছিল । অন্য কেহ এই কাপট্য সহজেই বুঝিতে পারিত—কিন্তু কুনা অসামান্য সরল এবং আগুসন্তুষ্ট –মুতরাং হীরার এই নূতন প্রিয়কারিতায় প্রীতা ব্যতীত সন্দেহবিশিষ্ট হয় নাই । অতএব, এখন কুন্দ হীরাকে পূৰ্ব্বমত বিশ্বাসভাগিনী