পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X • দিবার সময় উহার কাণে কাণে কহিলেন, “আমার ধৈর্য্য হইতেছে না ; কালি পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা করিতে পাবিব না ; তুমি আজ রাত্রে প্রহরেকের সময় আসিয়া এই গৃহের উত্তরদিকে প্রাচীর মূলে অবস্থিতি করিও, তথায় আমার সাক্ষাৎ পাইবে । তোমার বণিক যদি আসেন, সঙ্গে আনিও।” গিরিজায়া কহিল, “বুঝিয়াছি, আমি নিশ্চিত আসিব ।” মৃণালিনী মণিমালিনীর নিকট প্রত্যাগতা হইলে মণিমালিনী কহিলেন, “সই, ভিখারিণীকে কাণে কাণে কি বলিতেছিলে ?” মৃণালিনী কহিলেন, “কি বলিব সই— সই মনের কথা সই, মনের কথা সই – কাণে কাণে কি কথাটি ব’লে দিলি ওই । সই ফিরে ক" না সই, সই ফিরে ক" না সই । সই কথা কোস কথা কব, নইলে কারো নই ৷” মণিমালিনী হাসিয়া কহিলেন, "হলি কি লো সই ?” মৃণালিনী কহিলেন, “তোমারই সই।” চতুর্থ পরিচ্ছেদ দূতী লক্ষ্মণাবতী নগরীর প্রদেশাস্তরে সৰ্ব্বধন বণিকের বাটীতে হেমচন্দ্র অবস্থিতি করিতেছিলেন । বণিকের গৃহদ্বারে এক অশোকবৃক্ষ বিরাজ করিতেছিল ; অপরাহ্লে তাহার তলে উপবেশন করিয়া, একটি কুসুমিত অশোকশাখা নিম্প্রয়োজনে হেমচন্দ্র ছুরিকা দ্বারা খণ্ড খণ্ড করিতেছিলেন, এবং মুহম্মুহু পথপ্রতি দৃষ্টি রাখিতেছিলেন, যেন কাহারও প্রতীক্ষা করিতেছেন । যাহার প্রতীক্ষা করিতেছিলেন, সে আসিল না। তৃত্য দিগ্বিজয় আসিল । হেমচন্দ্র দিগ্বিজয়কে কহিলেন,-“দিগ্বিজয়, ভিখারিণী আজি এখনও আসিল না । আমি বড় ব্যস্ত হইয়াছি । তুমি একবার তাহার সন্ধানে যাও ” “ষে আজ্ঞা” বলিয়া দিগ্বিজয় গিরিজায়ার সন্ধানে চলিল। নগরীর রাজপথে গিরিজায়ার সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল । গিরিজায়া বলিল, “কে ও, দিবিবজয় ?” দিগ্বিজয় রাগ করিয়া কহিল, আমার নাম দিগ্বিজয় ।” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী গি। ভাল, দিগ্বিজয়—আজি কোন দিক জয় করিতে চলিয়াছ ? দি । তোমার দিক্ । গি। আমি কি একটা দিক্‌ ? তোর দিগ্বিদিক্‌ জ্ঞান নাই । দি। কেমন করিয়া থাকিবে—তুমি যে অন্ধকার, এখন চল, প্ৰভু তোমাকে ডাকিয়াছেন । গি । কেন ? দি । তোমার সঙ্গে বুঝি আমার বিবাহ দিবেন। গি। কেন, তোমার কি মুখ অগ্নি করিবার আর লোক জুটিল না ? দি । না, সে কাজ তোমাকেই করিতে হুইবে । এখন চল । গি । পরের জন্যই মলেম, তবে চল । এই বলিয়া গিরিজায় দিগ্বিজয়ের সঙ্গে চলিল । দিগ্বিজয় অশোকতলস্থ হেমচন্দ্রকে দেখাইয়া দিয়া অন্তক্র গমন করিল। হেমচন্দ্র অন্যমনে মৃদু মৃদ্ধ গায়িতেছিলেন,— “বিকচ নলিনে, যমুনা-পুলিনে, বহুত পিয়াসা রে " গিরিজায়া পশ্চাৎ হইতে গায়িল,— “চন্দ্রমাশালিনী, যা মধু্যামিনী, না মিটিল আশ রে ।” গিরিজায়াকে দেখিয়া হেমচন্দ্রের মুখ প্রফুল্ল হইল । কহিলেন,—“কে, গিরিজায় ? অাশা কি মিটুল ?” গি । কার আশা ? আপনার না আমার ? হেম । আমার আশা । তাঁহা হুইলেই তোমার মিটিবে। গি । আপনার আশা কি প্রকারে মিটিবে ? লোকে বলে, রাজরাজড়ার আশা কিছুতেই মিটে না । হেম । আমার অতি সামান্ত আশ । গি। যদি কখনও মৃণালিনীর সাক্ষাৎ পাই, তবে এ কথা তাহার নিকট বলিব । হেমচন্দ্র বিষণ্ণ হইলেন । কহিলেন, “ভবে কি আজিও মৃণালিনীর সন্ধান পাও নাই ? আজি কোন পাড়ায় গীত গায়িতে গিয়াছিলে ?” গি । অনেক পাড়ায়—সে পরিচয় আপনার নিকট নিত্য নিত্য কি দিব ? অন্ত কথা বলুন । হেমচন্দ্র নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “বুঝিলাম, বিধাতা বিমুখ। ভাল, পুনৰ্ব্বার কালি সন্ধানে যাইবে ।”