পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুণালিনী হেম । তাঁহাকে বধ করিব । মনে । মানুষ মেরে কি হবে ? হেম । তুরক আমার পরম শক্ৰ । মনে । তবে একটি মারিয়া কি তৃপ্তিলাভ করিবে ? হেম। আমি যত তুরক দেখিতে পাইব, তত মারিব । মনে । পারিবে ? হেম । পারিব । মনোরম বলিল, “তবে সুবিধানে আমার সঙ্গে আইস ” হেমচন্দ্র ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন । এষ্ট বালিকা পথপ্রদর্শিনী ! মনোরম। র্তাহার মানসিক ভাব বুঝিলেন ; বলিলেন, “আমাকে বালিক ভাবিয়া অবিশ্বাস করিতেছ ?” হেমচন্দ্র মনোরম!র প্রতি চাহিয়৷ দেখিলেন । বিষ্ময়াপন্ন হইয়া ভাবিলেন—মনোরম কি মানুষী ! মৃবনযুদ্ধে ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ পশুপতি গৌড়দেশের ধৰ্ম্মাধিকার পশুপতি অসাধারণ ব্যক্তি ; তিনি দ্বিতীয় গৌড়েশ্বর । রাজ বৃদ্ধ, বাৰ্দ্ধক্যের ধৰ্ম্মানুসারে পরমতাবলম্বী এবং রাজকাৰ্য্যে অযত্নবান হইয়াছিলেন, সুতরাং প্রধানামাত ধৰ্ম্মাধিকারের হস্তেষ্ট গৌড়রাজ্যের প্রক্লভ ভার অর্পিত হইয়াছিল এবং সম্পদে অথবা ঐশ্বর্ষ্যে পশুপতি গৌড়েশ্বরের সমকক্ষ ব্যক্তি হইয়া উঠিয়াছিলেন । পশুপতির বয়ঃক্রম পঞ্চত্রিংশৎ বৎসর হইবে । তিনি দেখিতে অতি সুপুরুষ। তাহার শরীর দীর্ঘ, বক্ষঃ বিশাল, সৰ্ব্বাঙ্গ অস্থিমাংসের উপযুক্ত সংষোগে সুন্দর । র্তাহার বর্ণ তপ্তকাঞ্চনসন্নিভ ; ললাট অতি বিস্তুত, মানসিক শক্তির মন্দিরস্বরূপ । নাসিক দীর্ঘ এবং উন্নত, চক্ষু ক্ষুদ্র, কিন্তু অসাধারণ ঔজ্জ্বল্যসম্পন্ন। মুখকাস্তি জ্ঞানগাম্ভীৰ্য্যব্যঞ্জক এবং অনুদিন বিষয়ানুষ্ঠানজনিত চিন্তার গুণে কিছু পরুষভাবপ্রকাশক । তাহা হইলে কি হয়, রাজসভাতলে তাহার ন্যায় সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর পুরুষ আর কেহই ছিল না। লোকে বলিত, গৌড় দেশে তাদৃশ পণ্ডিত এবং বিচক্ষণ ব্যক্তিও কেহ ছিল না। RS) পশুপতি জাতিতে ব্রাহ্মণ, কিন্তু তাহার জন্মভূমি কোথা, তাহ কেহ বিশেষ জ্ঞাত ছিল না । কথিত ছিল যে, তাহার পিতা শাস্ত্রব্যবসায়ী দরিদ্র ব্রাহ্মণ ছিলেন । পশুপতি কেবল আপন বুদ্ধিবিদ্যার প্রভাবে গোঁড় রাজ্যের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত হইয়াছিলেন । পশুপতি যৌবনকালে কাশীধামে পিতার নিকট থাকিয়া শাস্ত্রাধ্যয়ন করিতেন। তথায় কেশব নামে এক বঙ্গীয় ব্রাহ্মণ বাস করিতেন । হৈমবতী নামে কেশবের এক অষ্টমবর্ষীয় কন্যা ছিল । তাহার সহিত পশুপতির পরিণয় হয়। কিন্তু অদৃষ্ট বশতঃ বিবাহের রাত্রেই কেশব সম্প্রদানের কন্যা লইয়া অদৃশ্ব হইল। আর তাহার কোন সন্ধান পাওয়া গেল না । সেই পৰ্য্যস্ত পশুপতি পত্নীসহবাসে বঞ্চিত ছিলেন । কারণবশতঃ এ কাল পর্য্যন্ত দ্বিতীয় দারপরিগ্রহ করেন নাই । তিনি এক্ষণে রাজ-প্রাসাদতুল্য উচ্চ অট্টালিকায় বাস করিতেন, কিন্তু বামী-নয়ন-নিঃস্থত জ্যোতির অভাবে সেই উচ্চ অট্টালিকা আজি অন্ধকারময় । আজি রাত্রে সেই উচ্চ অট্টালিকার এক নিভৃত কক্ষে পশুপতি একাকী দীপালোকে বসিয়া আছেন। এই কক্ষের পশ্চাতেই আম্রকানন । আম্রকাননে নিষ্ক্রান্ত হইবার জন্য একটি গুপ্তদ্বার আছে । সেই দ্বারে আসিয়৷ নিশীথকালে, মৃদু মৃদু কে আঘাত করিল। গৃহাভ্যস্তর হইতে পশুপতি দ্বার উদঘাটিত করিলেন । এক ব্যক্তি গৃহে প্রবেশ করিল। সে মুসলমান । হেমচন্দ্র তাহাকেই বাতায়নপথে দেখিয়াছিলেন । পশুপতি তখন তাহাকে পৃথগাসনে উপবেশন করিতে বলিয়া বিশ্বাসজনক অভিজ্ঞান দেখিতে চাহিলেন। মুসলমান অভিজ্ঞান দৃষ্ট করাইলেন । পশুপতি সংস্কৃতে কহিলেন, “বুঝিলাম, আপনি তুরক-সেনাপতির বিশ্বাসপাত্র । সুতরাং আমারও বিশ্বাসপাত্র । আপনারই নাম মহম্মদ আলি ? এক্ষণে সেনাপতির অভিপ্রায় প্রকাশ করুন।” যবন সংস্কৃতে উত্তর দিলেন, কিন্তু র্তাহার সংস্কৃতের তিন ভাগ ফারসী, আর অবশিষ্ট চতুর্থ ভাগ ষেরূপ সংস্কৃত, তাহ। ভারতবর্ষে কখনও ব্যবহৃত হয় নাই । তাহা মহম্মদ আলিরই স্বল্প সংস্কৃত । পশুপতি বহুকষ্টে তাহার অর্থবোধ করিলেন । পাঠকমহাশয়ের সে কষ্টভোগের প্রয়োজন নাই, আমরা তাহার স্থবোধার্থ সে নুতন সংস্কৃত অনুবাদ করিয়া দিতেছি । ষবন কহিল, “খিলিজি সাহেবের অভিপ্রায় আপনি অবগত আছেন । বিনা যুদ্ধে গৌড়বিজয়