পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (প্রথম ভাগ).djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“ আমার আছে—কি লোভে २.8 করিবেন, তাহার ইচ্ছা হইয়াছে। কি হইলে আপনি এ রাজ্য র্তাহার হস্তে সমর্পণ করিবেন ?” পশুপতি কহিলেন, “আমি এ রাজ্য র্তাহার হস্তে সমর্পণ করিব কি না, তাহ অনিশ্চিত । স্বদেশবৈরতা মহাপাপ । আমি এ কৰ্ম্ম কেন করিব ?” ষ । উত্তম । আমি চলিলাম। কিন্তু আপনি তবে কেন খিলিজির নিকট দূত প্রেরণ করিয়াছিলেন ? প। তাহার যুদ্ধের সাধ কত দূর পর্য্যন্ত, তাহা জানিবার জন্ত । ষ । তাহা আমি আপনাকে জানাইয়া যাই । যুদ্ধেই তাহার আনন্দ । প। মনুষ্যযুদ্ধে পশুযুদ্ধে চ ? হস্তিযুদ্ধে কেমন আনন্দ ? মহম্মদ আলি সকোপে কহিলেন, "গৌড়ে যুদ্ধের অভিপ্রায়ে আসা পশুযুদ্ধেই আসা । বুঝিলাম, ব্যঙ্গ করিবার জন্যই আপনি সেনাপতিকে লোক পাঠাইতে বলিয়াছিলেন । আমরা যুদ্ধ জানি, ব্যঙ্গ জানি না । যাহা জানি, তাহা করিব।” এই বলিয়া মহম্মদ আলি গমনোদ্যোগী হইল । পশুপতি কহিলেন,— "ক্ষণেক অপেক্ষ করুন। আর কিছু শুনিয়া যান। আমি যনবহস্তে এ রাজ্য সমর্পণ করিতে অসম্মত নহি,-অক্ষমও নহি । আমিই গৌড়ের রাজা, সেনরাজা নামমাত্র । কিন্তু সমুচিত মূল্য না পাইলে আপন রাজ্য কেন আপনাদিগকে দিব ?” মহম্মদ আলি কছিলেন, “আপনি কি চাহেন ?” প। খিলিজি কি দিবেন ? ম। আপনার যাহা আছে, তাত সকলই থাকিবে—আপনার জীবন, ঐশ্বৰ্য্য, পদ সকলই থাকিবে । এইমাত্র । প। তবে অামি পাইলাম কি ? এ সকলই ত . আমি এ গুরুতর পাপানুষ্ঠান করিব ? , ম । আমাদের আমুকুল্য না করিলে কিছুই থাকিবে না ; যুদ্ধ করিলে, আপনার ঐশ্বৰ্য্য, পদ, জীবন পৰ্য্যন্ত অপহৃত হইবে । প। তাহা যুদ্ধ শেষ না হইলে বলা যায় না । আমরা যুদ্ধ করিতে একেবারে অনিচ্ছুক বিবেচনা করিবেন না, বিশেষ মগধে বিদ্রোহের উদ্যোগ হইতেছে, তাহাও অবগত আছি। তাহার নিবারণ জষ্ঠ এক্ষণে খিলিজি ব্যস্ত । গোঁড়জয়চেষ্টা আপাততঃ কিছু দিন তাহাকে ত্যাগ করিতে হইবে, তাহাও অবগত আছি। আমার গ্রার্ধিত পুরস্কার না দেন বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী 哆 না দিবেন, কিন্তু যুদ্ধ করাই যদি স্থির হয়, তবে আমাদিগের এই উত্তম সময় । যখন বিহারে বিদ্রোহী সেনা সজ্জিত হইবে, গৌড়েশ্বরের সেনাও সাজিবে । ম। ক্ষতি কি ? পি পড়ের কামড়ের উপর মশা কামড়াইলে হাতী মরে না । কিন্তু আপনার প্রাথিত পুরস্কার কি, তাহা শুনিয়া যাইতে বাসনা করি । প। শুনুন। আমিই এক্ষণে প্রকৃত গৌড়ের ঈশ্বর, কিন্তু লোকে আমাকে গৌড়েশ্বর বলে না । আমি স্বনামে রাজা হইতে বাসনা করি। সেনবংশ লোপ হইয়া পশুপতি গোঁড়াধিপতি হউক । ম। তাহাতে আমাদিগের কি উপকার করিলেন ? অামাদিগকে কি দিবেন ? প। রাজকর মাত্র। মুসলমানের অধীনে করপ্রদ মাত্র রাজা হইব । ম। ভাল ; আপনি যদি প্রকৃত গৌড়েশ্বর, রাজা যদি আপনার এরূপ করতলস্থ, তবে আমীদিগের সহিত আপনার কথাবার্তার অবিশু্যক কি ? আমাদিগের সাহায্যের প্রয়োজন কি ? আমাদিগকে কর দিবেন কেন ? প। তাহা স্পষ্ট করিয়া বলিব । ইহাতে কপটতা করিব না। প্রথমতঃ, সেনরাজ আমার প্রভু, বয়সে বৃদ্ধ, আমাকে স্নেহ করেন। স্ববলে যদি আমি তাহাকে রাজ্যচ্যুত করি—তবে অত্যন্ত লোক নিন্দ । আপনারী কিছুমাত্র যুদ্ধোদ্যম দেখাইয়া আমার আনুকূল্যে বিনা যুদ্ধে রাজধানী প্রবেশ পূৰ্ব্বক তাহাকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া আমাকে তদুপরি স্থাপিত করিলে, “সে নিন্দ হইবে না। দ্বিতীয়তঃ, রাজ্য অনধিকারার অধিকারগত হইলেই বিদ্রোহের সম্ভাবনা, আপনাদিগের সাহায্যে সে বিদ্রোহ সহজেই নিবারণ করিতে পারিব । তৃতীয়তঃ, আমি স্বয়ং রাজা হইলে এক্ষণে সেনরাজার সহিত আপনাদিগের যে সম্বন্ধ, অামার সঙ্গেও সেই সম্বন্ধ থাকিবে । আপনাদিগের সহিত যুদ্ধের সম্ভাবনা থাকিবে । যুদ্ধে আমি প্রস্তুত আছি—কিন্তু জয়পরাজয় উভয়েরই সম্ভাবনা ৷ জয় হইলে আমার নূতন কিছু লাভ হুইবে না । কিন্তু পরাজয়ে সৰ্ব্বস্বহানি । কিন্তু আপনাদিগের সহিত সন্ধি করিয়া রাজ্যগ্রহণ করিলে সে আশঙ্কা থাকিবে না । বিশেষতঃ সৰ্ব্বদা যুদ্ধোন্তত থাকিতে হইলে নুতন রাজ্য স্বশাসিত হয় না । ম। আপনি রাজনীতিজ্ঞের ন্যায় বিবেচনা করিয়াছেন। আপনার কথায় আমার সম্পূর্ণ প্রত্যয় জন্মিল। আমিও এইরূপ স্পষ্ট করিয়া খিলিজি । সাহেবের অভিপ্রায় ব্যক্ত করি । তিনি এক্ষণে